
বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » মতামত: এনসিপির নেতৃবৃন্দের কক্সবাজার ভ্রমণ ও অন্তরালে গোপন রাজনৈতিক সমীকরণ
মতামত: এনসিপির নেতৃবৃন্দের কক্সবাজার ভ্রমণ ও অন্তরালে গোপন রাজনৈতিক সমীকরণ
আহমেদ শাকিল ঢাকা, ৬ আগস্ট, ২০২৫
গতকাল ৫ আগস্ট ছিল এক ঐতিহাসিক দিন—২০২৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মোড় নেয়। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মুখে পড়ে এবং অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৫ হাজার ছাত্র ও জনসাধারণের রক্তের বিনিময়ে দেশত্যাগ করেন এবং প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় দেশজুড়ে শোক, ক্ষোভ এবং প্রত্যাশার এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
২০২৫ সালের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটিতে, সেই ঐতিহাসিক আন্দোলনের বর্ষপূর্তি উদযাপন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস। কিন্তু এই অনুষ্ঠান বয়কট করে এনসিপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কক্সবাজারে বিলাসবহুল সমুদ্রভ্রমণে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সমালোচকদের মতে, যারা একসময় গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পতাকা তুলে ধরেছিলেন, আজ তারা কি সেই আদর্শ ভুলে আরাম-আয়েশে ডুবে যাচ্ছেন? হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ কি শুধুই একটি অতীত স্মৃতি হয়ে থাকবে? এ ধরনের প্রশ্ন এখন সাধারণ জনতার মুখে মুখে।
তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ঘটনার পেছনে ভিন্ন একটি চিত্রও আঁকছেন। অনেকে মনে করছেন, এই বিলাসভ্রমণের আড়ালে থাকতে পারে এক গভীর কৌশল—একটি গোপন রাজনৈতিক সমঝোতা বা সমন্বয়ের প্রচেষ্টা। বিশেষ করে যখন শোনা যাচ্ছে, এনসিপির নির্দিষ্ট নেতাদের সঙ্গে ড. হাস (হাসিনা?) এর ভার্চুয়াল বৈঠক হতে পারে, তখন বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এই আলোচনা আরও তীব্র হয় যখন নির্বাচনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকার নাম উঠে আসে এবং ধারণা করা হয় যে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর—বিশেষত মোসাদ ও সিআইএ’র—বাংলাদেশে সক্রিয় এজেন্টরা রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করছে।
এক নির্ভরযোগ্য কমিউনিটির অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউনুস সরকারের পতনের লক্ষ্যে এনসিপির এক প্রভাবশালী নেতা সারজিসকে ব্যবহার করা হতে পারে। তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীর এক উপপ্রধানের সঙ্গে। একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন তাসনীম জারা, যিনি বৈশ্বিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাকেও এই পরিকল্পনায় প্রভাবক হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দেশের ভেতর ও বাইরে থাকা রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বন্ধুত্বের রেখা এখন অনেকটাই অস্পষ্ট। তাই এই বিলাসভ্রমণ ও ভার্চুয়াল বৈঠকের সম্ভাবনা নিছক কাকতালীয় নাকি পরিকল্পিত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক।
শেষ কথা, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন বহুমাত্রিক চাপ ও কৌশলের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। জনগণ আশা করে, যারা একদিন শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা যেন সেই আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন এবং জাতির স্বার্থে কোনও আপসের রাজনীতি না করেন।