বেকারত্ব বাড়াচ্ছে চুরি-ছিনতাই
রাজধানী উত্তরার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত এলাকা এখন ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য। প্রকাশ্য ঘটছে চুরি- ছিনতাইয়ের ঘটনা। ফলে পথচারী, স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে একধরনের আতঙ্ক। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরায় সংঘটিত অপরাধের বেশিরভাগ অপরাধী পার্শ্ববর্তী এলাকা গাজীপুর ও টঙ্গী এলাকার কর্মহীন শ্রমিক বলে জানা গেছে।
gnews দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কারণে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল, তা এখনো কাটিয়ে ওঠার সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক টানাপোড়েনের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে গাজীপুরের পোশাক শিল্পে। কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, গত এক বছরে গাজীপুরে বন্ধ হয়েছে ৭২টি পোশাক কারখানা, এর মধ্যে গত ছয় মাসেই বন্ধ হয়েছে ২৯টি কারখানা। এই বিপুল শ্রমিক একসঙ্গে চাকরি হারিয়ে পড়েছে চরম অনিশ্চয়তায়। কেউ কেউ অন্য পেশায় যুক্ত হলেও একটি বড় অংশ কোনো কাজ না পেয়ে হতাশা থেকে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। আর গাজীপুর উত্তরার কাছাকাছি এলাকায় হওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে উত্তরাতেই।
স্থানীয়রা বলছে, উত্তরায় সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। রাস্তায় গলিতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হচ্ছে। কাকে যে কোন মুহূর্তে আক্রমণ করবে, বোঝার উপায় নেই।
সরেজমিনে উত্তরার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সন্ধ্যার পর সক্রিয় থাকে ছিনতাইকারীরা। আবার সুযোগ পেলে দিন-দুপুরেই করছে এসব অপরাধ। এ ছাড়া হঠাৎ বেড়েছে অটোরিকশা চালকদের সংখ্যাও। স্থানীয়দের ধারণা, গাজীপুরে চাকরি হারানো অনেকেই জীবিকার উপায় হিসেবে রিকশা চালানো শুরু করেছে। তবে কেউ কেউ রিকশার আড়ালে ছিনতাই বা অপরাধ সংগঠিত করছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, গাজীপুরে যখন একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছিল, তখনই আমরা বুঝেছিলাম এর প্রভাব উত্তরায় পড়বে। এখন প্রতিদিন দোকান থেকে চুরি হচ্ছে, পথচারীরা ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। পুলিশ আছে, কিন্তু অপরাধীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে পারছে না।
আরেক বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, বেকারত্বের কারণে গাজীপুর থেকে রাজধানীতে অপরাধী প্রবাহ বেড়েছে। তারা উত্তরাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হচ্ছে কারণ এখানে প্রচুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং নগদ অর্থের লেনদেন হয়।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সমস্যা সাময়িক নয়। তাদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থানের সমাধান না হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর আবু তালহা বিন রেদওয়ান বলেন, দেশে যখন হঠাৎ করে বেকারের সংখ্যা বেড়ে যায়, তখন তা সমাজে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করে। উত্তরা এখন তার প্রকট উদাহরণ। সমাধান করতে হলে দ্রুত কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে।
উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম (অতিরিক্ত ডিআইজি) বলেছেন, রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশের বিশেষ টিম ও টহল দল নিয়মিত মাঠে কাজ করছে। তিনি জানান, বেকারত্ব ও মাদকাসক্তি-এই দুটি কারণে বেশিরভাগ যুবক ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই একাধিক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তাঁর ভাষ্যে, উত্তরায় ছিনতাই এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে এটি মোকাবিলায় পুলিশকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে।
ইত্তেফাক