
রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » পদোন্নতির রমরমা বাণিজ্য: সচিবের চেয়ার পেতে শত কোটি টাকার চুক্তি
পদোন্নতির রমরমা বাণিজ্য: সচিবের চেয়ার পেতে শত কোটি টাকার চুক্তি
বাণিজ্য সচিব থেকে এনবিআর চেয়ারম্যান হতে ৩৯৫ কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলো ক্রমেই পরিণত হচ্ছে লাভজনক বাণিজ্যের পণ্যে। মেধা বা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, বরং বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ চাঞ্চল্যকর অভিযোগটি উঠেছে বর্তমান বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানকে ঘিরে।
অভিযোগ রয়েছে, অতিরিক্ত সচিব থেকে বাণিজ্য সচিব হতে তিনি ৩৫ কোটি টাকা, এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব হতে ৬০ কোটি টাকা এবং সবশেষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান হতে ৩০০ কোটি টাকার চুক্তি করেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকার লেনদেনের মাধ্যমে পদোন্নতির পথ সুগম করেছেন তিনি।
সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় লেনদেন
এই চুক্তিগুলোর নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে জানা গেছে, “মেসার্স আর্মি বিডি কনসালটেন্সি” নামের একটি রহস্যময় প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে অর্থ লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন সাইফুল ইসলাম নামের প্রভাবশালী এক ব্যক্তি, যাকে প্রায়ই বাণিজ্য সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষে বিভিন্ন বৈঠক করতে দেখা যায়। অভিযোগ আছে, এসব চুক্তির গ্যারান্টি হিসেবে যে ব্যাংক চেক দেওয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগেই স্বাক্ষর করেছেন এই সাইফুল ইসলাম।
‘তিন পান্ডব’ নামে পরিচিত চক্র
সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগ ও পদোন্নতির এই সিন্ডিকেটকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিন প্রভাবশালী ব্যক্তি। প্রশাসনে তারা পরিচিত ‘তিন পান্ডব’ নামে। তারা হলেন—প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রকল্প কমিশনের নামে হাজার কোটি টাকা এই চক্রের পকেটে যাচ্ছে।
বিতর্কিত অতীত
মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। পূর্ববর্তী সরকারের আমল থেকেই তাকে “লীগের দোসর আমলা” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এমনকি দেশে ইন্টারনেট শাটডাউনের মতো বিতর্কিত ঘটনায় তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে এটি রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। অর্থের বিনিময়ে শীর্ষ পদে নিয়োগ হলে প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়বে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
জনমতের দাবি
জনগণ ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে— এ ধরনের দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ ছাড়া প্রশাসনকে দুর্নীতি ও দোসর আমলাদের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না