
মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | রাজনীতি | স্বাস্থ্য ও আইন » জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার: ন্যায়বিচার না কি মব বিচারের পথে?
জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার: ন্যায়বিচার না কি মব বিচারের পথে?
ঢাকা, ১৪ জুলাই ২০২৫ - আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন যে বর্তমান সরকারের আমলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে, এবং ৫ আগস্টের আগেই মামলার চার্জশিট জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর এ মন্তব্য ঘিরে কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন উঠেছে, যা বিচারিক স্বচ্ছতা ও আইনি কাঠামোর উপর নতুন করে আলো ফেলছে।
একজন উপদেষ্টার এখতিয়ার কতদূর?
আইন উপদেষ্টা সরকারের নীতিগত ও আইনি পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেন না, রায় দেওয়ারও এখতিয়ার নেই। ড. নজরুলের মন্তব্য তাই সরকারপক্ষীয় রাজনৈতিক অবস্থান হিসেবে গ্রহণযোগ্য হলেও, এটি বিচারিক নিশ্চয়তা প্রদান করে না।
একজন উপদেষ্টার এই ধরনের ঘোষণা প্রকৃত বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, যদি তা বিচার বিভাগীয় স্বচ্ছতা ছাড়িয়ে রাজনৈতিক পক্ষপাতের ইঙ্গিত বহন করে।
বিচার প্রক্রিয়া না হয়ে যদি মব বিচার হয়, সেটা কিসের সংকেত?
যদি জনচাপ বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দ্রুত বিচার করা হয়, এবং স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করা হয়, তাহলে তা মব বিচার - যা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে।
বিচার ব্যবস্থার যথার্থতা নির্ভর করে সাক্ষ্যপ্রমাণ, নিরপেক্ষতা ও আইনি পদ্ধতির উপর। রাষ্ট্র যদি বিচারকে জনগণের প্রতিক্রিয়া বা রাজনৈতিক প্রভাবের ভিত্তিতে চালায়, তা ন্যায়বিচারকে অবমূল্যায়ন করে।
“বর্তমান সরকারের আমলেই বিচার হবে”-এই বক্তব্যের তাৎপর্য কী?
এ ধরনের ঘোষণায় সরকার জনগণকে আশ্বস্ত করতে চায় যে তারা দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আগ্রহী। তবে বিচার বিভাগ স্বাধীন না হলে এ ধরনের কথা বিচারিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিতও দিতে পারে।
সরকার যদি বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক অর্জনের হাতিয়ার বানায়, তাহলে এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। ন্যায়বিচার কখনোই সময়সীমা বা রাজনৈতিক ক্যালেন্ডারের ভিতরে সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয়।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুধু একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়-এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, সরকারের নৈতিক অবস্থান, এবং জনআস্থার পরীক্ষাস্বরূপ। একজন উপদেষ্টার বক্তব্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলেও, বিচারিক স্বচ্ছতা ও প্রতিষ্ঠানগত স্বাধীনতার প্রশ্নে জনগণের সচেতনতা আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি।