
শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ » সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী: আইন কী বলে ও শর্ত কী
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী: আইন কী বলে ও শর্ত কী
পক্ষকাল সংবাদঃ
অপরাধের নির্মম জালে নিজকেও ফাঁস করে দিলো যখন কেউ-তখনই তিনি ‘রাজসাক্ষী’ বা state witness-এর মর্যাদা পেয়ে থাকেন। রাজসাক্ষীর পথ একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে ব্যর্থ হলে শাস্তির তলোয়ার সাজিয়ে রাখা হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রথম বাংলাদেশি রাজসাক্ষী হওয়ায় এ আলোচনা আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
১. রাজসাক্ষী কারা এবং কীভাবে হন?
সরলভাবে বলতে গেলে, রাজসাক্ষী হলেন সেই আসামি-
যে নিজে দায় স্বীকার করে অন্য সহযোগী অপরাধীদের নাম, কার্যকলাপ ও ঘটনার বিবরণ আদালতে সততার সঙ্গে প্রকাশের অঙ্গীকার করে
ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC)-এর ৩৩৭ ধারা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারক যেকোনো মুহূর্তে এমন প্রস্তাব দিতে পারেন। একই বিধান আছে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ১৫ ধারায়।
২. রাজসাক্ষীর শর্তসমূহ
রাজসাক্ষী হতে চাইলে আরেকটি শর্ত মেনে চলতে হয়-
সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা: অপরাধ সম্পর্কে যা কিছু জানা আছে, সব তথ্য আদালতে জানতে হবে
নিরাপত্তা বন্দোবস্ত: বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত গোপন কারাগারে রাখা হয়, যাতে প্রভাবিত হওয়া বা হুমকি দেওয়া না যায়
৩. শর্ত ভাঙলে কী ঘটে?
রাজসাক্ষীর দায়িত্ব পালন না করলে বিপদ গাফসর-আদালত প্রাথমিক ক্ষমার অঙ্গীকার বাতিল করেরাজসাক্ষীর মর্যাদা হারিয়ে পুনরায় আসামি হন
মিথ্যা সাক্ষ্য ও মূল অপরাধে দুইটি আলাদা মামলা হয় হাতে থাকে আরও কঠোর শাস্তি-মূল অপরাধের দণ্ডের সঙ্গে মিথ্যা সাক্ষ্যে অতিরিক্ত সাজা
সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারায় এ ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে: রাজসাক্ষীর বয়ানে অন্য আসামিদেরও দণ্ডিত করা যায়, প্রমাণ থাক বা না থাক।
৪. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন: প্রথম রাজসাক্ষীর ভবিষ্যৎ
২০২৫ সালের জুলাই: গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আল-মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে স্বীকৃত
তিনি আদালতে নিজের পক্ষ থেকে বিস্তারিত সাক্ষ্য দেবেন
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানাচ্ছেন-যদি আল-মামুনের বক্তব্যে সত্য ও পূর্ণাঙ্গ পরিস্থিতি উঠে আসে, ট্রাইব্যুনাল ক্ষমা বা হালকা দণ্ড প্রসারিত করতে পারে। অন্যথায়, মূল ও অতিরিক্ত অভিযোগে সাজা হবে অপরিহার্য
৫. বাংলাদেশে অতীত নজির
বাংলাদেশে রাজসাক্ষী হওয়ার ঘটনা ব্যতিক্রম হলেও একেবারেই নতুন নয়:
২০০৪: সন্ত্রাসী এরশাদ সিকদারের দেহরক্ষী নূরে আলম আদালতে সব অভিযোগ স্বীকার করে
ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ হত্যা মামলায় তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিকদারের বিরুদ্ধে সাজা হয় না; পরিবর্তে নিজেই খালাস পান
এই দুই ঘটনাই দেখিয়েছে-রাজসাক্ষী হওয়া মানে লাভের সুযোগ এবং বিপজ্জনক বাধা, উভয়ই।
রাজসাক্ষী হয়ে ওঠা এক অদ্ভুত মোড়-যেখানে অপরাধ স্বীকারের বিনিময়ে অনেক সময় মুক্তির ভরসা থাকে, আবার শর্ত ভাঙলে অতিরিক্ত শাস্তির আশঙ্কা আরও তীব্র হয়। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের এই পদক্ষেপের আলোকে আমরা দেখতে পাবো, আইনের শরণাপন্ন হয়ে সত্যনের প্রয়াস কতটা সার্থক বা ঝুঁকিপূর্ণ-এটাই হবে পরবর্তী কালের সবচেয়ে আলোচিত বিধান পর্যালোচনা।