
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » বাংলাদেশের মানবাধিকার সংকট: নীরব লজ্জা থেকে গর্জন তোলার এখনই সময়
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংকট: নীরব লজ্জা থেকে গর্জন তোলার এখনই সময়
লন্ডন থেকে ১০ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশে এক বছরে যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার কথা। মব বিচার, বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, বল্পুর্বক, যৌন সহিংসতা এবং সাংবাদিকদের ওপর সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রচণ্ড দমন-এসবই নির্দেশ করে যে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা আজ ভেঙে ফুটো হয়ে গিয়েছে ।
বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক মানবাধিকার ধার্য করা হয়েছে ৪ নভেম্বর ১৯৭২ তারিখে, যেখানে Part III (Articles 26-47)-এ বিচারযোগ্য মৌলিক অধিকারের বিধান রাখা হয়েছে। এর আগে ২৬ মার্চ ১৯৭১ এর স্বাধীনতার ঘোষণা বাক্যাংশে “সমাজ যা হবে সেখানকার মানুষের মর্যাদা, স্বাভিমান ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা হবে”-এর প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা পরবর্তীতে সংবিধানের প্রস্তাবনায় উঠে এসেছে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী দোসরদের বিচার শুরু হলেও ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের পর সব ট্রাইব্যুনাল ভেঙে যায় এবং ক্ষমতায় আসে নতুন সরকারের ইন্দুমুখী নীতিমালা।
২০০৯-২০২৩ সালের শাসনামলে অন্তত ২,৬৯৯ জন ঊর্ধ্বে অযাচিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, ৬৭৭ জন গুম হয়েছে এবং ১,০৪৮ জন কারাগারে মারা গেছে বলে অভিযোগ করেছে স্বাধীন মনিটরিং সংস্থা ওডিকর। ২০২৪-এ যে গণবিক্ষোভে অন্তত ৮৭৫ জন নিহত হয়েছে, তা যদি যুক্ত করা হয়, তবে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছাপিয়ে যাবে ৩,০০০-এর মাইলফলক1।
্ফ্রিডম হাউস ২০২৪-এর প্রতিবেদনবাংলাদেশকে ৪০/১০০ পয়েন্ট (partly free) রেট করেছে; এর আগে কোনো সময়ে এতটা নিচু অঙ্ক ছিলোনা।
সাম্প্রতিক সঙ্কট
গত আগস্ট ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত অন্তত ১১৪টি মব বিচারের ঘটনায় ১১৯ জন প্রাণ হারিয়েছে, ৭৪ জন আহত হয়েছে। ২০২৪ সালের মোট ১২৮-১৭৩টি ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে গণতন্ত্রের অবনতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তে উঠে এসেছে ১ জুলাই-১৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর্যায়ে ১,৪০০ বিক্ষোভকারী ও পথচারীর বিচারবহির্ভুত হত্যার প্রমাণ; শটগানের বুলেট ও সরাসরি গুলিতে আহত হয়েছে আরও হাজারেরও বেশি মানুষ।
২০০৯ সাল থেকে গুমের শিকার ৭০০ জনের তথ্য রয়েছে, শুধু ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই নতুন ১০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। গুম-নির্যাতন আজও অপ্রতিহত, যে কোনো আটকেই চালানো হয় নির্যাতন, তথ্য নথিভুক্তি ব্যাহত।
এই বছরের প্রথমার্ধে ১,০৪২ জন নারী ও মেয়ে যৌন সহিংসতার শিকার; ৪৭৬টি গণধর্ষণ ও ২৯২টি শিশু-সমন্বিত মামলার সংখ্যা উদ্বেগজনক।
সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে ১২৯ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, প্রায় ২০০টি প্রেস আইডি বাতিল, ৭৪টি শারীরিক হামলা, ৩৫৪টি হয়রানি ও ১১৩টি অপরাধমূলক অভিযোগের রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ ও বিচার দাবি
বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের রক্ষাকারী সংস্থা, জাতিসংঘ এবং গণতন্ত্রপ্রিয় রাষ্ট্রগুলোকে:
দ্রুত ও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের সুযোগ দিতে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহার করে বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে
গুম, বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ও জোরপুর্বক গুম-এর দায়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিচারপতি দৃষ্টিতে আনতে
সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক নেতৃত্বের নিঃশর্ত মুক্তি নিশ্চিত করতে
যেকোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দ্বিসামরিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা স্থগিত রাখতে আহ্বান জানাচ্ছি।
যদি নীরবতা আমাদের পরাজয় হয়ে দাঁড়ায়, ইতিহাসের যে স্বপ্নগুলো আলোড়িত হয়েছে, সেগুলো বিকৃত হয়ে যাবে। তাই আজই জাগ্রত হওয়া সময়-বাংলাদেশের জনগণ যেন আবারো নিজের অধিকার দাবি করতে পারে, গণতন্ত্র ফিরে পায় প্রাণ।