শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

Daily Pokkhokal
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » গণতন্ত্রের মুখে তালা দেওয়ার অপচেষ্টা এন সি পি বা জোনাকি পুকার দলের হম্বিতম্বি
প্রথম পাতা » রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » গণতন্ত্রের মুখে তালা দেওয়ার অপচেষ্টা এন সি পি বা জোনাকি পুকার দলের হম্বিতম্বি
৮৩ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গণতন্ত্রের মুখে তালা দেওয়ার অপচেষ্টা এন সি পি বা জোনাকি পুকার দলের হম্বিতম্বি

“বিচার--- ও সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়”—বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় এক বিপজ্জনক ছেদ

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচার ও সংস্কারের দাবি স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয়। কিন্তু যখন এই দাবিকে ব্যবহার করা হয় নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত কিংবা অবরুদ্ধ করার অস্ত্র হিসেবে, তখন তা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিকেই চ্যালেঞ্জ করে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কর্তৃক উচ্চারিত “বিচার ও সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন নয়” শ্লোগানটি বাংলাদেশে একগঠনতান্ত্রিক নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা রাজনৈতিক বহুমত ও প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করে।

 নির্বাচনের মাধ্যমে সংস্কার, না নির্বাচনের আগে সংস্কার?

---

নির্বাচন গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি। জনগণের মতপ্রকাশের এ মাধ্যমের মাধ্যমে গঠিত হয় ভবিষ্যতের রাষ্ট্রদর্শন। সংস্কার যদি হয় একপক্ষীয়—যা নির্বাচনকে ঠেকিয়ে রাখে—তবে সেটি আর সংস্কার থাকে না, তা হয়ে ওঠে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হাতিয়ার। জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনো সংস্কারই সংবিধানসম্মত ও টেকসই হতে পারে না।

 বিচার: মঞ্চের স্লোগান নয়, আদালতের প্রক্রিয়া

বিচার মানে যুক্তি, প্রমাণ, এবং নিরপেক্ষ আইনানুগ প্রক্রিয়া। যখন রাজনৈতিক নেতারা সমাবেশে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফাঁসির দাবি তোলেন কিংবা দল নিষিদ্ধ করার হুমকি দেন, তখন বিচারব্যবস্থা আর স্বাধীন থাকে না। এ ধরণের বক্তব্য বিচারকে রূপান্তর করে প্রতিশোধে, এবং রাষ্ট্রের আইনত কাঠামোর প্রতি জনআস্থাকে দুর্বল করে দেয়।

একতরফা সংস্কার: অন্তর্ভুক্তির বদলে বর্জন

সংস্কারের প্রকৃত অর্থ হলো বহুপক্ষীয় সংলাপের মাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তন। “সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়” — এই শ্লোগানের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমঝোতার সুযোগ নষ্ট হচ্ছে। একপক্ষের সংস্কারের সংজ্ঞা চাপিয়ে দিলে সেই সংস্কার আর গণতান্ত্রিক থাকে না, তা হয়ে ওঠে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ।

 বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক উত্তেজনা নয়, বরং কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে আঘাত হানতে পারে। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক বচনই পারে বাংলাদেশকে একটি বিশ্ব-সহযোগী শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে।

এক মাত্র  গনভোট অথবা নির্বাচনের পথেই সংস্কার

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নির্ভর করে নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারের আন্তঃসম্পর্কে। এগুলিকে প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুললে স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়। বরং, ন্যায়বিচার, অর্থবহ সংস্কার এবং স্বাধীন নির্বাচন এই তিনটি স্তম্ভই একে অপরের পরিপূরক। এনসিপির “নির্বাচন স্থগিত” বক্তব্য একটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক পরিপক্বতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রায় বাঁধা সৃষ্টি করে।

 “বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়”—গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় এক বিপজ্জনক ছেদ

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথচলা আজ এক নতুন সংকটে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সম্প্রতি যে ঘোষণা দিয়েছে—“বিচার ও সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন নয়”—তা শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত। এই অবস্থান ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

নির্বাচন কোনো বিলাসিতা নয়, এটি নাগরিকের অধিকার। সংস্কার ও বিচারব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তা কখনোই নির্বাচনের বিকল্প হতে পারে না। বরং নির্বাচনই সেই মাধ্যম, যার মাধ্যমে জনগণ সংস্কারের পথ নির্ধারণ করে। “সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়”—এই দাবির আড়ালে যে একতরফা ক্ষমতা দখলের প্রবণতা লুকিয়ে আছে, তা গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনার পরিপন্থী।

এনসিপি নেতাদের বক্তব্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিষিদ্ধ করার দাবি এবং ফাঁসির মতো উগ্র আহ্বান বিচার নয়, প্রতিশোধের রাজনীতিকে উসকে দেয়। বিচার একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, যা আদালতে প্রমাণ ও যুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়—রাজনৈতিক মঞ্চে নয়।

এছাড়া, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে এবং বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানকে দুর্বল করে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে, এমন বক্তব্য দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জন্য হুমকিস্বরূপ।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এই তিনটি স্তম্ভকে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। নির্বাচন স্থগিত করার অজুহাত নয়, বরং সংলাপ ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করতে হবে।

লেখক পরিচিতি: শফিকুল ইসলাম কাজল একজন সাংবাদিক, যিনি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বিচার, গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার নিয়ে লেখালেখি করেন। তিনি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সমাজ-সচেতন সাংবাদিকতা চর্চা করেন।



এ পাতার আরও খবর

বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিতঅতীতের গৌরব, বর্তমানের সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের অঙ্গীকার বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিতঅতীতের গৌরব, বর্তমানের সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের অঙ্গীকার
নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিমকোর্টের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের4 নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিমকোর্টের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের4
ডাকসুর নারী প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি, অভিযুক্ত শিবির নেতা আলী হোসেন ডাকসুর নারী প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি, অভিযুক্ত শিবির নেতা আলী হোসেন
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের প্রথম দল দেশে ফিরছে আজ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের প্রথম দল দেশে ফিরছে আজ
কুড়িগ্রামের সাংবাদিক রিগানকে নির্যাতন: সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনকে জেল হাজতে প্রেরণ কুড়িগ্রামের সাংবাদিক রিগানকে নির্যাতন: সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনকে জেল হাজতে প্রেরণ
বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতিবাজ পরিচালক শাজাহান কি আইনের ঊর্ধ্বে? বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতিবাজ পরিচালক শাজাহান কি আইনের ঊর্ধ্বে?
মালয়েশিয়ায় অর্থপাচারের মাস্টার মাইন্ড কুখ্যাত নূর আলী মালয়েশিয়ায় অর্থপাচারের মাস্টার মাইন্ড কুখ্যাত নূর আলী
যুদ্ধবিমান নয়, জনগণের ভাত কাপড় বাসস্থান চাই–মোশরেফা মিশু : যুদ্ধবিমান নয়, জনগণের ভাত কাপড় বাসস্থান চাই–মোশরেফা মিশু :
গুরুতর আহত নুর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর আহত নুর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি
গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ: চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও মব সংস্কৃতির পুনরুত্থান-ড. কামাল হোসেন গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ: চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও মব সংস্কৃতির পুনরুত্থান-ড. কামাল হোসেন

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)