“নিরপেক্ষতার মুখোশে চীনের ভূরাজনীতি?”
শফিকুল ইসলাম কাজল
রুহানি সংবাদাতাঃ
ইউক্রেন যুদ্ধ এখন আর শুধু রাশিয়া ও ইউক্রেনের সীমাবদ্ধ সংঘাত নয়-এটি হয়ে উঠেছে একটি বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে বলেছেন, “চীন গোপনে রাশিয়াকে অস্ত্র দিচ্ছে।” জেলেনস্কির এই মন্তব্যে কূটনৈতিক অঙ্গন তোলপাড় হলেও, চীন দৃঢ়ভাবে তা অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, “চীন কোনো পক্ষ নেয় না, আমরা শান্তির পক্ষে।”
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়-চীন কি সত্যিই নিরপেক্ষ?
‘নিরপেক্ষতা’র নেপথ্যে শক্তির খেলা
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, চীন সরাসরি অস্ত্র না দিলেও প্রযুক্তি, দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য উপকরণ এবং সেনাবাহিনী ব্যবহারের উপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে রাশিয়ার যুদ্ধ সক্ষমতাকে এগিয়ে নিচ্ছে। যেমন ড্রোন প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক উপাদান, ও সামরিক নজরদারির সফটওয়্যার।
চীন বরাবরই নিজের অবস্থানকে “শান্তির পক্ষের মধ্যপন্থা” হিসেবে উপস্থাপন করে। কিন্তু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের স্বার্থ রাশিয়ার বিজয়ের সঙ্গে যুক্ত। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা চীনের জন্য নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে
বিশ্বরাজনীতির নতুন মেরুকরণ
এই মুহূর্তে চীন, রাশিয়া, ইরান-এদের মাঝে এক ধরনের অঘোষিত অক্ষ গড়ে উঠছে। এই অক্ষ পশ্চিমা বলয়ের বিপরীতে নিজেদের শক্তি ও প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধ হয়ে উঠছে নতুন শীতল যুদ্ধের সূচক।
বাংলাদেশের মতো দেশের করণীয় কী?
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বৈশ্বিক মেরুকরণে ‘চাপ’ সামলে নিজেদের স্বার্থ ঠিক রাখা। এখন সময়-দেশি পররাষ্ট্রনীতিকে নীতিনির্ধারক নয়, বাস্তববাদী করার।
শেষ কথা:
চীন যদি সত্যিই শান্তির পক্ষ নেয়, তবে তাকে শুধু বিবৃতি নয়, কাজের মাধ্যমেও সেটা প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় ‘নিরপেক্ষতার মুখোশ’ খুলে যাবে, আর ইতিহাস তাদেরকে স্মরণ রাখবে এক ভিন্ন পরিচয়ে।
চীন–রাশিয়া সম্পর্ক, জেলেনস্কির অভিযোগ, এবং এর পেছনের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা ঘিরে একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা