শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

Daily Pokkhokal
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » “বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্কার: অর্থনৈতিক ভিত্তি বদল না করলে গুণগত পরিবর্তন অসম্ভব
প্রথম পাতা » রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » “বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্কার: অর্থনৈতিক ভিত্তি বদল না করলে গুণগত পরিবর্তন অসম্ভব
১০৭ বার পঠিত
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

“বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্কার: অর্থনৈতিক ভিত্তি বদল না করলে গুণগত পরিবর্তন অসম্ভব

শফিকুল ইসলাম কাজল রুহানি সাংবাদিকঃ

---

এই প্রশ্নটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতার সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্র, অর্থাৎ একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রযন্ত্র যা মূলত জনগণের অধিকারের পরিবর্তে শাসকদের ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য কাজ করে, তার সংস্কার প্রক্রিয়া আসলে একটি চ্যালেঞ্জিং এবং বিরোধপূর্ণ প্রক্রিয়া।
বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের সংকট
বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্র সাধারণত প্রতিষ্ঠিত হয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভিত্তিতে এবং তার মূল লক্ষ্য হলো পুঁজির মুনাফা বৃদ্ধি এবং শাসক শ্রেণীর ক্ষমতা বজায় রাখা। এই রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, কৃষক-মালিক সম্পর্ক, এবং জনগণের অধিকার রক্ষা করার কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয় না। বরং শোষণমূলক ব্যবস্থা আরও দৃঢ় হয়, যেখানে শ্রমিক, কৃষক, সাধারণ মানুষ এবং যুবকরা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য এবং শোষণের শিকার হয়।
বিশ্বব্যাপী এই বাস্তবতার উদাহরণ:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, ভারত, বাংলাদেশের মতো দেশে বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের পতন, দুর্বলতা, কিংবা সংকটের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে, রাজনৈতিক শোষণ দৃঢ় হচ্ছে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার যথাযথভাবে রক্ষা করা হচ্ছে না।
অর্থনীতির ভিত্তি
যতই রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারের চেষ্টা করা হোক না কেন, যদি অর্থনৈতিক ভিত্তি অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে গুণগত পরিবর্তন সম্ভব নয়। অর্থনীতি হচ্ছে সমাজের ভিত্তি, সমাজের প্রতিটি স্তরের মধ্যে এই অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রভাব ফেলছে।
কীভাবে?

1. শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক:
বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এই শোষণের ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রযন্ত্র শুধুমাত্র সংস্কারের মাধ্যমে মালিকদের নিয়ন্ত্রণ না করে, তাহলে শ্রমিকদের মজুরি এবং কর্মঘণ্টা নিয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
2. কৃষক-মালিক সম্পর্ক:
বাংলাদেশের কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিতে কৃষকরা সবসময়ই ন্যায্য দাম পায় না। ফসলের উৎপাদন বাড়ালেও, কৃষকরা তার মূল্য পায় না, কারণ মধ্যস্থতাকারীরা একে শোষণ করে নেয়। রাষ্ট্র যদি শুধু সংস্কার করে তবে কৃষকদের সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়।
3. সামাজিক সমস্যা:
আজকাল, সমাজের প্রতিটি স্তরে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। সীমিত আয়ের মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। তবে এই পরিস্থিতি যদি শুধুমাত্র সংস্কারের মাধ্যমে সমাধান করা হয়, তবে উপরের শ্রেণির পুঁজি একেবারে হাতছাড়া হওয়ার কথা নয়।
4. যুবকদের হতাশা:
দেশে চাকরির অভাব এবং কর্মসংস্থানের সংকট যুবকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। কিন্তু বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্র যদি এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন না করে, তবে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তন ছাড়া সংস্কার কেন অপার্যাপ্ত?
1. বুর্জোয়া রাজনীতির লক্ষ্য
বুর্জোয়া রাজনীতি মূলত শাসক শ্রেণীর সুবিধা বজায় রাখার দিকে মনোযোগী। তাদের সংস্কারের উদ্দেশ্য সাধারণ জনগণের সমস্যা সমাধান করা নয়, বরং নিজেদের ক্ষমতা ও স্বার্থ রক্ষা করা। এমনকি সংস্কারগুলো অনেক সময় এমনভাবে করা হয়, যা সাধারণ মানুষের জন্য কার্যকরী না হয়ে বরং পুঁজিপতি বা রাজনৈতিক দলের সুবিধার্থে কাজ করে।
2. কোনো অর্থনৈতিক শ্রেণির পরিবর্তন না ঘটলে সামাজিক পরিবর্তন অসম্ভব:
রাজনৈতিক পরিবর্তন বা সাংবিধানিক সংস্কার যদি এককভাবে জনগণের বাস্তব সমস্যার সমাধান করতে চায়, তা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন না হলে, সংস্কারের ফলে যে শ্রেণি শোষিত হচ্ছে তাদের জন্য তেমন কোনো কার্যকরী সুফল আসবে না। এজন্য পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরি।
3. পুঁজিবাদী সংস্কারের প্রভাব:
যখন রাষ্ট্র একদিকে বুর্জোয়া সংস্কারের চেষ্টা করছে, তখন সে উক্ত সমাজের অর্থনৈতিক সত্ত্বাকে অবিকৃত রেখে শাসক শ্রেণীকে আরো শক্তিশালী করে তুলে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার হলেও, যদি সেগুলো পুরনো রাজনৈতিক ধারা অনুসরণ করে থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন
তবে, একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের সাথে রাজনীতির পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের জন্য কিছু মূল পদ্ধতির প্রয়োজন হবে:
1. নতুন অর্থনৈতিক নীতি:

“বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্কার: অর্থনৈতিক ভিত্তি বদল না করলে গুণগত পরিবর্তন অসম্ভব”
পুঁজিবাদী অর্থনীতির বাইরে গিয়ে এমন একটি সমানুভূতির ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে যেখানে কৃষক, শ্রমিক, যুবক, এবং সাধারণ জনগণ উন্নতি পাবে।
2. শ্রমিক ও কৃষকের অধিকার:
শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হলে মালিকদের শোষণ প্রথা কেবলমাত্র রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে নয়, বরং গভীর অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে শেষ করতে হবে।
3. সামাজিক ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা:
সামাজিক বৈষম্য কমানোর জন্য রাষ্ট্রকে নতুন ধরনের ন্যায়বিচার এবং সমতার পথে চলতে হবে। এর মাধ্যমে নতুন এক সামাজিক শৃঙ্খলা তৈরি করা সম্ভব।
যতই বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারের চেষ্টা করা হোক না কেন, যদি এর অর্থনৈতিক ভিত্তি অপরিবর্তিত থাকে, তাতে সমাজের শোষণ কমানোর পরিবর্তে শুধু রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে। আসলেই কার্যকরী পরিবর্তন আনতে হলে, রাষ্ট্রযন্ত্রের মেরামত করা নয়, অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং সামাজিক সম্পর্কের গুণগত পরিবর্তন প্রয়োজন



এ পাতার আরও খবর

সংস্কারের নামে প্রতারণা: অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে জনতার প্রত্যাশা ভঙ্গ সংস্কারের নামে প্রতারণা: অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে জনতার প্রত্যাশা ভঙ্গ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় সাংবিধানিক সুরক্ষা, পরিবর্তনে আবশ্যক গণভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় সাংবিধানিক সুরক্ষা, পরিবর্তনে আবশ্যক গণভোট।
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই: কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের দিনভর তাণ্ডব ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই: কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের দিনভর তাণ্ডব
১৬ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ১৬ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
জামাত রাজনীতির বিষফোড়া জামাত রাজনীতির বিষফোড়া
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ব্যর্থতা ও অরাজকতার ছায়া জনবিচ্ছিন্নতার বিপদে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ব্যর্থতা ও অরাজকতার ছায়া জনবিচ্ছিন্নতার বিপদে বাংলাদেশ
দেশে কি গৃহযুদ্ধ ধেয়ে আসছে? দেশে কি গৃহযুদ্ধ ধেয়ে আসছে?
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে বিতর্ক: রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা আন্তর্জাতিক মহলে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে বিতর্ক: রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা আন্তর্জাতিক মহলে
জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার: ন্যায়বিচার না কি মব বিচারের পথে? জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার: ন্যায়বিচার না কি মব বিচারের পথে?
“দিনে ১১ খুন - রাষ্ট্র কী এখন খুনিদের হাতে জিম্মি?” “দিনে ১১ খুন - রাষ্ট্র কী এখন খুনিদের হাতে জিম্মি?”

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)