
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » সেন্ট মার্টিন : পরিবেশ না মানুষ—কাকে বেছে নেবে রাষ্ট্র?
সেন্ট মার্টিন : পরিবেশ না মানুষ—কাকে বেছে নেবে রাষ্ট্র?
সম্পাদকীয়
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ প্রান্তের মণি স্টমার্টিন্স দ্বীপ। সাগরের বুক জুড়ে এই ছোট্ট ভূখণ্ড শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, দেশের সার্বভৌম মর্যাদা আর পরিবেশ রক্ষার সংগ্রামের প্রতীক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আজ দ্বীপটি এক ভয়াবহ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে—প্রকৃতি বাঁচানো নাকি মানুষের জীবিকা টিকিয়ে রাখা।
সরকার ঘোষণা দিয়েছে, দ্বীপে গড়ে ওঠা “অবৈধ” ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হবে। যুক্তি—পরিবেশ রক্ষা ও আইন মানা। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের অন্য পিঠে আছে মানুষের দুঃখ, অনিশ্চয়তা ও ক্ষুধার ভয়। বছরের পর বছর দ্বীপের বাসিন্দারা পর্যটননির্ভর ব্যবসার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন। হঠাৎ করে পর্যটন বন্ধ, আবার অবকাঠামো ভেঙে দেওয়ার হুমকি—এ যেন জীবিকাকে একেবারে জলাঞ্জলি দেওয়া।
এখানে প্রশ্ন উঠবেই:
রাষ্ট্র কি শুধুই আইন আর প্রশাসনের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকবে, নাকি মানুষের পাশে দাঁড়াবে? পরিবেশ রক্ষা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু পরিবেশের নামে মানুষকে ধ্বংস করা কোনো ন্যায় নয়। প্রকৃতি বাঁচবে যদি মানুষ বাঁচে।
স্টমার্টিন্স দ্বীপ ১৯৯৯ সালে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। অথচ সেই রাষ্ট্রই বছরের পর বছর দ্বীপে ব্যবসার অনুমতি দিয়েছে, লাইসেন্স দিয়েছে, পর্যটন প্রচার করেছে। আজ হঠাৎ করে সব “অবৈধ” বলে ঘোষণা দেওয়া শুধু দ্বন্দ্ব নয়, এটা দায়িত্ব এড়ানোর নামান্তর। দায় সরকারের, অথচ শাস্তি পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
রাষ্ট্রের উচিত:
১. দ্বীপবাসীর ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য সুস্পষ্ট সময়সীমা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ঘোষণা করা।
২. পরিবেশ সংরক্ষণের নামে দমননীতি না চালিয়ে স্থানীয় জনগণকে অংশীদার করা।
৩. পর্যটনকে টেকসই, সীমিত এবং পরিবেশবান্ধবভাবে পুনর্গঠনের রূপরেখা দেওয়া।
স্টমার্টিন্স কেবল ভ্রমণপিপাসুদের আনন্দের জায়গা নয়, এটি বাংলাদেশের গর্ব এবং মানুষের বেঁচে থাকার জায়গা। তাই রাষ্ট্রের কোনো সিদ্ধান্তই যেন একপেশে না হয়। কেবল আইন দেখিয়ে দ্বীপের মানুষকে বঞ্চিত করলে, সেটা অন্যায়ই নয়, অমানবিকও বটে।
দেশের পক্ষে কথা বলতে হলে, দেশের মানুষের পক্ষেই দাঁড়াতে হবে। পরিবেশ রক্ষা ও মানুষের জীবিকা—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
শফিকুল ইসলাম কাজল