
শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » » সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে! বৈষম্যের ভয় বেসরকারি খাতে
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে! বৈষম্যের ভয় বেসরকারি খাতে
পক্ষকাল ডেস্ক
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে যখন দেশের সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক তখনই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পর্যালোচনার জন্য একটি নতুন বেতন কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রায় এক দশক পর গঠিত এই কমিশন সরকারি চাকুরেদের জন্য স্বস্তির বার্তা আনলেও, দেশের বেসরকারি ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত কোটি কোটি মানুষের জন্য এটি নতুন করে বৈষম্য ও মূল্যস্ফীতির আতঙ্ক তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সরকারের লোগো
বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক অর্থসচিব ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান। কমিশনকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতনের সমন্বয় না হওয়ায় একটি নতুন বেতন কাঠামো এখন সময়ের দাবি।
সরকারের এই উদ্যোগের পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, ২০১৫ সালের পর গত প্রায় ১০ বছরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন কোনো বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়নি। এই সময়ে মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে গত বছর যা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন সমন্বয় করা প্রয়োজন। বর্তমানে প্রায় ২২ লাখ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক এই বেতন কাঠামোর আওতায় রয়েছেন।
তবে সরকারের এই পদক্ষেপ সামাজিক বৈষম্যকে আরও উসকে দেবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ সরকারি ও বেসরকারি সবার ওপরে আছে। সরকারি পর্যায়ে বেতন বাড়লে বাজারে তার প্রভাব পড়বে এবং মূল্যস্ফীতির এই বাড়তি চাপের শিকার হবেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘সরকারের হাতে টাকা নেই। মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টার সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে বৈষম্য বাড়বে।’
বাস্তবতা হলো, দেশের কর্মসংস্থানের সিংহভাগই বেসরকারি ও অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর নির্ভরশীল। শ্রম জরিপ অনুযায়ী, দেশের প্রায় ছয় কোটি কর্মজীবীর মধ্যে সাড়ে পাঁচ কোটিই এই দুই খাতে কর্মরত। করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই এই বিশাল জনগোষ্ঠীর বেতন বাড়েনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দাম, বাড়িভাড়া এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনেকেই এখন সঞ্চয় ভেঙে চলতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যও এই সংকটের গভীরতাকে স্পষ্ট করে। গত বছরের জুলাই মাসে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১.৬৬ শতাংশ, তা অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপে সম্প্রতি ৮.৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু চালসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী। এমন পরিস্থিতিতে শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করা হলে তা বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে দিয়ে মূল্যস্ফীতিকে নতুন করে উসকে দেবে, যার সরাসরি ভুক্তভোগী হবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী।