
বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » জাতীয় শোক দিবসে শোকের বদলে হাসি: নেতৃত্বের মানবিকতা কোথায়?
জাতীয় শোক দিবসে শোকের বদলে হাসি: নেতৃত্বের মানবিকতা কোথায়?
ঢাকা, ২২ জুলাই:
জাতীয় শোক দিবস — একটি জাতির শোক প্রকাশের দিন, একসঙ্গে কাঁদার দিন, নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা জানানোর দিন। কিন্তু গতকাল রাতে মাইলস্টোন স্কুলে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনার রক্তাক্ত স্মৃতি যখন গোটা জাতিকে শোকাহত করে তোলে, তখন দেশের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ যেন এক ভিন্ন আবহে ছিলেন।
মাইলস্টোন স্কুলে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু নিহত ও আহতদের পরিবার নয়, গোটা জাতিকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে। শিশুদের মৃত্যু, আগুনে দগ্ধ প্রাণ, পরিবারে শোকের মাতম—এসব দৃশ্য হৃদয় ছিঁড়ে দেয়। আগুনে পুড়ে যাওয়া একজন রোগীকে নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান আজও নিশ্চিত কিছু বলতে পারে না। তারা হয়তো ভালো হচ্ছে, তারপরও হুট করেই থেমে যেতে পারে জীবনের স্পন্দন।
এমন একটি দিনে—জাতীয় শোক দিবস ও জাতীয় ট্র্যাজেডির মুহূর্তে—যখন একটি রাষ্ট্র দায়িত্ববান আচরণ করবে বলে আমরা আশা করি, তখনই দেখা গেলো দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান নেতাদের সভায় হাসি, ছবি তোলা ও প্রাণবন্ত মুখাবয়ব। সেখানে ছিল না কোনো শোক প্রস্তাব, ছিল না রুহের মাগফেরাতের জন্য এক মিনিটের নীরবতা, এমনকি ঘটনার সামান্য আলোচনাও।
ধর্ম কী বলে এমন সময় সম্পর্কে?
ইসলামসহ প্রতিটি ধর্মই শোক ও সমব্যথী হওয়ার শিক্ষা দেয়।
কোরআনে বলা হয়েছে:
“وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ”
(মায়িদা ৫:২)
অর্থ: “তোমরা একে অপরকে সৎকাজ ও তাকওয়ার কাজে সাহায্য করো।”
নবী করিম (স.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি মুসলমানদের দুঃখে দুঃখিত হয় না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
(তিরমিজি শরীফ)
সেই আলোকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্ব ছিলো এই শোককে সম্মানের সাথে পালন করা, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো, সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
একজন মূর্খ ফটোসাংবাদিকের আক্ষেপ
একজন সাধারণ ফটোসাংবাদিক তার আবেগ লুকিয়ে দিনের পর দিন দুর্ঘটনার ছবি তুলেছেন, বারবার চোখের পানি মুছেছেন। অথচ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আসনে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে দেখা গেলো এর বিপরীত।
একটি শিশু মারা গেলে কেবল একটি পরিবার নয়, গোটা জাতি কাঁদে। কিন্তু যখন শোককে অবহেলা করে রাজনৈতিক সৌজন্যের আড়ালে হাসি চলে আসে, তখন জাতি কাঁদে দ্বিগুণ।
এই রাজনীতি কার জন্য?
একটি সভা না করে এই শোককে গুরুত্ব দিয়েই বরং সংশ্লিষ্ট সকল উপদেষ্টাদের নিয়ে জরুরী পর্যালোচনা সভা করলেও রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন হতো।
একটু সহানুভূতি, একটু নীরবতা, একটু দুঃখ প্রকাশ — রাজনীতির চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান হয়ে উঠতে পারতো এই সময়।
শেষ কথা
মানবিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ যেন রাজনীতির নিচে চাপা না পড়ে। একজন ব্যক্তি দল-মত নির্বিশেষে যদি সত্য ও সহানুভূতির কথা বলেন, তাকে যেন “দালাল”, “ফ্যাসিবাদের দোসর” ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে থামিয়ে না দেওয়া হয়।
একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক কখনোই মানুষের মৃত্যুতে হাসে না। বরং সবার আগে সে-ই কাঁদে।