
সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | রাজনীতি » দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এত নির্দোষ ও নিষ্পাপ ফেররেশ্তাদের সরকার আমি জীবনে দেখিনি
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এত নির্দোষ ও নিষ্পাপ ফেররেশ্তাদের সরকার আমি জীবনে দেখিনি
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ
বাংলাদেশ সরকারের শুল্কনীতি ও আন্তর্জাতিক দর-কষাকষিতে ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে আমরা এমন একটা অত্যন্ত নিরপরাধ, নির্দোষ ও নিষ্পাপ সরকারকে সঙ্গে নিয়ে সামনে আগানোর চেষ্টা করছি। এত নির্দোষ সরকার আমি জীবনে দেখিনি।
রবিবার (২০ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। এই আলোচনার আয়োজন করে দৈনিক প্রথম আলো। এতে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা অংশগ্রহণ করেন।
সরকারকে ‘নির্দোষ’ বলার ব্যাখ্যায় দেবপ্রিয় বলেন, আমরা এখানে বসে এত কিছু বুঝি, আর ওনারা বোঝেন না-এটা আশ্চর্যের বিষয়। আমরা একটা কর্দমাক্ত পরিস্থিতিতে রয়েছি, কিন্তু সবাই মিলে এই ঘাটতি পূরণ করতে পারব, এই ভরসা রাখছি।
তিনি আরও বলেন, আমি একাধিক সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। আগের সরকারগুলো যদি কোনো বিষয় না জানত, তারা শুনত এবং পরামর্শ চাইত। এখনকার সরকার সব কিছু জানে বলে মনে করে, ফলে কোনো আলোচনা বা পরামর্শ গ্রহণের জায়গা রাখে না।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, একটি দুর্বল সরকার সাধারণত সফল দর-কষাকষি করতে পারে না। এটি ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত। তদুপরি, এই সরকারটি সমন্বয়হীন, যার কোন নীতিতে কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেটাই বোঝা যায় না।
তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক বৈধতার অভাব সরকারকে আরও দুর্বল করে তুলেছে, ফলে শুল্ক আলোচনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনাকে অনেকে শুধুই অর্থনৈতিক বলে ভাবলেও দেবপ্রিয় তা মানতে নারাজ। তার মতে, শুধু অর্থনীতি নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক অর্থনীতি, ভূরাজনীতি-সবই জড়িত। যারা এটাকে শুধু শুল্ক সমস্যা হিসেবে দেখছেন, তাঁরা বড় ভুল করছেন।
বিশেষ করে সেবা খাতের আলোচনা একেবারেই উপেক্ষিত হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সেবা খাতের সঙ্গে তৈরি পোশাক, ওষুধসহ রপ্তানি খাত জড়িত। অথচ উপদেষ্টাসহ কেউই এই বিষয়ে মুখ খুলছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া গোপনীয়তা (নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট- এনডিএ) চুক্তির সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, এই গোপনীয়তা নয়, বরং একটি নন-পেপার ইস্যু করাই উচিত ছিল-যার মাধ্যমে আমাদের নীতিগত অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরা যেত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত পাল্টা শুল্ক নীতিকে ‘অবৈজ্ঞানিক’ উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভবিষ্যদ্বাণী করেন, আজ হোক বা কাল, যুক্তরাষ্ট্রকে এখান থেকে ফিরে আসতেই হবে।
তিনি বলেন, যদি মূল্যস্ফীতি বাড়ে, প্রবৃদ্ধি কমে, কর্মসংস্থান হ্রাস পায়-তবে মার্কিন অর্থনীতির ওপর শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে। আগামী ছয় মাসে এসব উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে।
তার মতে, আমাদের উচিত হবে এই অন্তর্বর্তী সময়টিকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও কাঠামোগত সংস্কারে জোর দেওয়া।
দেবপ্রিয় বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এককভাবে দর-কষাকষি নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ আগামী দিনে কোথায় অবস্থান করবে-তা নিয়ে সুস্পষ্ট ও বিস্তৃত চিন্তা জরুরি।