
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার | স্বাস্থ্য ও আইন » জুলাই সনদের মুখোশ: ৭১-এর পরাজিত শক্তির পুনর্জাগরণ
জুলাই সনদের মুখোশ: ৭১-এর পরাজিত শক্তির পুনর্জাগরণ
——————————————-
ইতিহাসের ছদ্মবেশে নতুন ষড়যন্ত্র
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে “জুলাই সনদ” আজ এক বিভ্রান্তিকর প্রতীক। যারা এই সনদের নামে চিৎকার করছে, তারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারী হিসেবে তুলে ধরলেও, বাস্তবে তারা ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তির উত্তরসূরি। এই গোষ্ঠী স্বাধীনতা, সংবিধান, এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছুড়ে ফেলে দিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক প্রকল্পে ব্রতী হয়েছে-যার উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করে ক্ষমতার পুনর্গঠন।
জুলাই সনদ: আদর্শ না কৌশল?
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনভিত্তিক, গণতান্ত্রিক, এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক সংগ্রাম। কিন্তু২৪এর জুলাই সনদ, আজকের সময়ে রাজনৈতিক রূপরেখা হিসেবে উপস্থাপিত করার অপচেষ্টা , তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ভিন্ন।
জুলাই সনদ মুলত ৭১ এর পরাজিত পক্ষের প্রকল্প রাজনৈতিক পুনর্বাসনের হাতিয়ার, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত নেতৃত্বকে ছায়ায় রেখে নতুন ক্ষমতাকেন্দ্র তৈরি করার চেষ্টা যা এক সময় অবশ্যি আস্থা কুড়ে নিক্ষেপিত হবে ।।
সনদের মাধ্যমে আদর্শ নয়, বরং ক্ষমতার ভারসাম্য পুনর্গঠনের এক ধরনের ভন্ডামি , যা পরবর্তীতে একদলীয় শাসন, বিচারহীনতা, এবং প্রশাসনিক দমননীতির ভিত্তি তৈরি করার চেষ্টা মাত্র ।
৭১-এর পরাজিত শক্তির পুনরুত্থান
আজ যারা “জুলাই সনদ”কে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছে, তারা মূলত সেই গোষ্ঠী যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের পক্ষে ছিল।
রাজাকার, আলবদর, এবং পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক শক্তি-যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তাদের উত্তরসূরিরাই আজ নতুন ছদ্মবেশে “গণতন্ত্র” ও “নাগরিক সমাজ” এর নামে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে।
তারা আন্তর্জাতিক লবিং, মিডিয়া প্রভাব, এবং বিচার ব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার করে একটি ছদ্ম-গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার পথে এগোচ্ছে।
ইউনুস গং ও নমরুদি কৌশল
মুহাম্মদ ইউনুস ও তার সমর্থক গোষ্ঠী নিজেদের “নিরপেক্ষ শক্তি” হিসেবে তুলে ধরলেও, তাদের কার্যকলাপ স্পষ্টভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল করার কৌশল।
তারা আন্তর্জাতিক পুরস্কার, মিডিয়া, এবং এনজিও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে চায়।
এই গোষ্ঠী আদালত, নির্বাচন কমিশন, এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে প্রভাব বিস্তার করে একটি নতুন নমরুদি শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে-যেখানে জনগণের ক্ষমতা নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্বার্থ ও অভিজাত শ্রেণির আধিপত্য থাকবে।
প্রতিরোধের পথ: ইতিহাসের পুনরুদ্ধার
এই পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও আদর্শ পুনরুদ্ধার করা জরুরি।
তথ্যভিত্তিক সাংবাদিকতা, গবেষণা, এবং জনসচেতনতা-এই তিনটি স্তম্ভের মাধ্যমে ৭১-এর পরাজিত শক্তির মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
জুলাই সনদের নামে ইতিহাস বিকৃতি রুখতে প্রক্রিয়াগত ন্যায়বিচার, সাংবিধানিক স্বচ্ছতা, এবং গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে, যাতে তারা ছদ্ম-আদর্শের ফাঁদে পা না দেয়।
পরিশেষে চেতনার পুনরুদ্ধারই প্রতিরোধের মূল
জুলাই সনদ আজ একটি রাজনৈতিক মুখোশ, যার আড়ালে ৭১-এর পরাজিত শক্তি নতুন রূপে ফিরে এসেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংবিধান, এবং স্বাধীনতার আদর্শকে ধ্বংস করে একটি নতুন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়-যা গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রহীনতা, এবং ইতিহাসের নামে ইতিহাস বিকৃতি। এই মুখোশ উন্মোচন করতে হলে আমাদের দরকার সাহস, তথ্য, এবং আদর্শের প্রতি অটল নিষ্ঠা।
কাজল ১৮/৭/২৫