
মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঢাকার আকাশে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা: কেন্দ্রীয়করণ নিয়ে প্রশ্ন, তদন্ত ও বিচারের দাবি
ঢাকার আকাশে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা: কেন্দ্রীয়করণ নিয়ে প্রশ্ন, তদন্ত ও বিচারের দাবি
ঢাকা, ২১ জুলাই: রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা ফের উসকে দিয়েছে ঢাকাকেন্দ্রিক রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, প্রতিরক্ষা ও প্রশাসনিক কাঠামোর বৈষম্য নিয়ে বিতর্ক। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি তুলেছে নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন পর্যবেক্ষক মহল।
দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছিল— সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর সদর দপ্তর রাজধানী ঢাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং এ সময়ের মধ্যে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে প্রতিরক্ষা খাত ঘিরে। অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রশ্রয়ে বিমান ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দ ৪-৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে একজন সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান দেশত্যাগ করেছেন।
এছাড়াও, প্রশিক্ষণ বিমান কেনার নামে বিদেশি পুরনো ও পরিত্যক্ত বিমান আমদানি, কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বর্তমান বিমান দুর্ঘটনার অনুকূল পরিবেশ— যা কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ দেয় না সংশ্লিষ্টদের।
নাগরিক সমাজ প্রশ্ন তুলেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো কেন দূরবর্তী ও কম জনবহুল এলাকায় নয়? বঙ্গোপসাগরের ওপরে বিপুল আকাশসীমা থাকা সত্ত্বেও প্রশিক্ষণ বিমান ওড়ানোর জন্য ঢাকা শহর কেন বেছে নেওয়া হলো— এমন প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোচনায়।
তাদের মতে, সব কিছু ঢাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়াই দেশের অন্যতম বড় বৈষম্য। কেন নৌবাহিনীর সদর দপ্তর সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বা মংলায় না থেকে ঢাকায়? কেন বৃহত্তম শিল্প ও রপ্তানিমুখী অঞ্চল চট্টগ্রামকে এড়িয়ে সব কারখানা ঢাকায় স্থাপন করতে হবে? রাজধানীতে ক্যান্টনমেন্ট, গলফ কোর্স, সর্বোচ্চ বিনোদন সুবিধা ও প্রশাসনিক সুবিধা কেন্দ্রীভূত থাকা অন্য সব অঞ্চলের মানুষের প্রতি বড় অবিচার বলেই মনে করছেন তারা।
ঘটনার পর দুর্ঘটনার কারণ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ ও দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে। তদন্তের ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব, স্বচ্ছতা ও বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ দুর্ঘটনা শুধু একটি বিমানের পতন নয়, বরং রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও কাঠামোগত বৈষম্যের প্রতীক। এখনই সময় ঢাকাকেন্দ্রিক এই একচেটিয়া আধিপত্য ভেঙে, দেশের সব অঞ্চলের জন্য সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।
হাসনাথ অরিয়ন খান লন্ডন থেকে