
শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | রাজনীতি » গাজার ত্রাণকেন্দ্রকে ‘নৃশংস মৃত্যুফাঁদ’ বলল জাতিসংঘ, মার্কিন সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
গাজার ত্রাণকেন্দ্রকে ‘নৃশংস মৃত্যুফাঁদ’ বলল জাতিসংঘ, মার্কিন সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সংস্থাটির হয়ে কাজ করা এক সাবেক মার্কিন সেনা ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল ১২-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছেন। তিনি সংস্থাটির কার্যক্রমকে ‘মেরামতের অযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে এটি ‘বন্ধ হওয়া প্রয়োজন’ বলে মন্তব্য করেন। খবর আরব নিউজের।
সাহায্যের জন্য আসা গাজার লোকজন
গত মে মাসে জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থার পরিবর্তে জিএইচএফ গাজায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সংস্থাটির চারটি বিতরণ কেন্দ্রে প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ এরই মধ্যে সতর্ক করে জানিয়েছে যে, গাজার লাখ লাখ ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। জিএইচএফের মাধ্যমে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা না পাওয়ারও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এই সেনা চ্যানেল ১২-কে দেওয়া ভিডিওবার্তায় জানান, ‘তিনি দেখেছেন কীভাবে নিরাপত্তাকর্মীরা বিতরণ কেন্দ্র থেকে মানুষ সরাতে তাদের দিকে গুলি ছুড়ছে’। তিনি বলেন, ‘তাদের দিকে গুলি করা হচ্ছিল, পায়ের দিকে গুলি করা হচ্ছিল, যাতে তারা সেখান থেকে সরে যায়’।
আরেকটি ঘটনায় তিনি একজন ঠিকাদারকে এক ব্যক্তির মুখে পেপার স্প্রের পুরো কৌটা খালি করতে দেখেছেন, যিনি হাঁটু গেড়ে মাটিতে পড়ে থাকা সুচ তুলছিলেন। এই ঘটনাকে তিনি ‘প্রাণঘাতী’ বলে উল্লেখ করেন।
এছাড়া, ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত এক নারীর দিকে আরেক ঠিকাদার একটি স্টান গ্রেনেড ছুড়ে মারেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেনেডটি তার গায়ে লাগতেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল সে মারা গেছে’।
এর আগে জিএইচএফের দুজন ঠিকাদার মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেছেন যে, ত্রাণকেন্দ্রে নিয়মিতই স্টান গ্রেনেড ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করা হয়। ঠিকাদারদের সরবরাহ করা ভিডিওচিত্রেও ত্রাণকেন্দ্রে গুলি ও স্টান গ্রেনেডের শব্দ শোনা যায়। তারা জানান, অনেক ঠিকাদার সশস্ত্র অবস্থায় দায়িত্ব পালন করলেও তাদের অধিকাংশেরই যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই।
পঁচিশ বছর মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করা সাবেক এই সেনাসদস্য আরও বলেন, ‘জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো এমন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পক্ষে পৌঁছানো বেশ কঠিন। তাদের অধিকাংশেরই পায়ে জুতা নেই, পানি নেই এবং তাদের সক্রিয় যুদ্ধাঞ্চল পেরিয়ে এই কেন্দ্রগুলোতে আসতে হয়’।
এদিকে, এসব অভিযোগের বিষয়ে স্কাই নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জিএইচএফ বলেছে, ‘এটি একজন অসন্তুষ্ট সাবেক ঠিকাদারের মন্তব্য, যাকে এক মাস আগে অসদাচরণের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল। এ অভিযোগ আমাদের নজরে আসার পর আমরা তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করি। ভিডিওচিত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এই দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রে কখনোই বেসামরিক নাগরিকদের দিকে গুলি চালানো হয়নি। ভিডিওতে শোনা গুলির শব্দ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে এসেছে, যা জিএইচএফ কেন্দ্রের বাইরে থেকে করা হয়েছে। এই গুলি কোনো ব্যক্তিকে নিশানা করে করা হয়নি এবং এতে কেউ হতাহতও হননি’।
জিএইচএফ আরও দাবি করেছে, ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত তারা গাজার বাসিন্দাদের কাছে সাড়ে আট কোটি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে এবং ‘নিরাপদ, সরাসরি ও নিরবচ্ছিন্নভাবে খাদ্য সরবরাহে’ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জাতিসংঘের গাজা বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জিএইচএফের এই পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করেছে। সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘জিএইচএফের তথাকথিত এই বিতরণ পদ্ধতি আসলে একটি নৃশংস মৃত্যুফাঁদ। এখানে স্নাইপাররা যেন হত্যার অনুমতিপত্র পেয়েছে এমনভাবে জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়’।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত জিএইচএফ জাতিসংঘের কর্মীদের পরিবর্তে বেসরকারি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করায়। জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্রগুলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় অবস্থিত, যেখানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশাধিকার সীমিত।