
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » » বিশ্লেষণধর্মী মতামত দুদককে চিঠি: তদন্ত থামাতে নয়, বরং স্বচ্ছতা রক্ষার প্রয়াস?
বিশ্লেষণধর্মী মতামত দুদককে চিঠি: তদন্ত থামাতে নয়, বরং স্বচ্ছতা রক্ষার প্রয়াস?
মতামত বিভাগ ৭ জুলাই ২০২৫
বিতর্কের কেন্দ্রে একটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দিয়েছেন। গণমাধ্যমে এই চিঠিকে “তদন্ত থামাতে চাপ প্রয়োগ” হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও, তৈয়্যবের ভাষ্য ভিন্ন: চিঠির উদ্দেশ্য ছিল সহযোগিতা চাওয়া, তদন্ত বন্ধ করা নয়।
বিতর্কিত প্রকল্পটি বিটিসিএলের ‘অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’-যা ২০২২ সালে, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পে প্রয়োজনের চেয়ে ৫ গুণ বেশি যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে, যার ব্যয় ৩২৬ কোটি টাকা। দুদক ইতিমধ্যে প্রকল্পে পিপিএ ও পিপিআর লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে এবং অর্থছাড় বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
তৈয়্যবের ব্যাখ্যা: “আমরা তদন্ত থামাতে বলিনি”
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সংবাদ সম্মেলনে বলেন:
“আমরা কেবল দুদকের আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছি। কারণ, প্রকল্পটি বন্ধ হলে ৬০০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে এবং বিটিসিএল প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে পড়বে।”
তিনি আরও দাবি করেন প্রকল্পের দরপত্র ও এলসি আগের সরকারের আমলে সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমান দপ্তর কেবল বাস্তবতা তুলে ধরে মতামত দিয়েছে।
কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি, বরং একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্নগুলো থেকেই যায়
তবে এখানেই শেষ নয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে:
চিঠির ভাষা কি প্রকৃতপক্ষে নিরপেক্ষ ছিল, নাকি প্রভাব বিস্তারের ইঙ্গিত ছিল?
যদি প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ থাকে, তবে তা বন্ধ না করে চালু রাখার যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য?
যন্ত্রপাতি কেনার যৌক্তিকতা ও বাজার দর যাচাই কি যথাযথভাবে হয়েছে?
এখানে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা জরুরি। একদিকে, প্রকল্প বন্ধ হলে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হতে পারে। অন্যদিকে, যদি প্রকল্পটি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, তবে তা চালু রাখাও জনগণের স্বার্থবিরোধী।
তৈয়্যবের যুক্তি-”যেহেতু টাকা চলে গেছে, কাজটা শেষ করতে দেওয়া হোক”-এই অবস্থান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় যৌক্তিক মনে হলেও, এটি দুর্নীতির দায় এড়ানোর পথ হয়ে উঠতে পারে।
স্বচ্ছতা ছাড়া উন্নয়ন নয় এই বিতর্ক আমাদের মনে করিয়ে দেয়, উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অপরিহার্য। দুদকের কাজ তদন্ত করা, আর সরকারের কাজ সেই তদন্তে সহযোগিতা করা-তবে তা যেন কখনোই প্রভাব বিস্তারের রূপ না নেয়।
চিঠি যদি সত্যিই সহযোগিতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়ে থাকে, তবে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু যদি তা তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়, তবে তা গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য হুমকি।