
সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » বিডিআর সদস্যদের পদযাত্রা ছত্রভঙ্গ: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না রাজনৈতিক পুনর্বাসনের দাবি?
বিডিআর সদস্যদের পদযাত্রা ছত্রভঙ্গ: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না রাজনৈতিক পুনর্বাসনের দাবি?
ঢাকা, ৭ জুলাই ২০২৫ | প্রতিবেদক: নিজস্ব প্রতিনিধি
রাজধানীর কাকরাইলে আজ দুপুরে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের একটি পদযাত্রা পুলিশের লাঠিচার্জ ও জলকামানে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা দাবি করছিলেন-চাকরিতে পুনর্বহাল, বাহিনীর নাম পুনরায় বিডিআর করা, এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০০৯ সালের পিলখানা ট্র্যাজেডি ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার স্মৃতি আবারও সামনে চলে এসেছে।
ঘটনাস্থলে যা ঘটেছে
সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে শাহবাগ থেকে পদযাত্রা শুরু করে প্রাক্তন বিডিআর সদস্যরা। তাঁরা সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে কাকরাইল মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়। দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আহতদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে-মো. শামছুল হক (৫৫) ও মো. ইউনুছ আলী (৫৭)। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পেছনের ইতিহাস: পিলখানা বিদ্রোহ ও তার পরিণতি
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিদ্রোহ। এই ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা সহ ৭৪ জন নিহত হন। বিদ্রোহের পর বিডিআর-এর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়। হাজারের বেশি সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং শতাধিককে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
চাকরিচ্যুত সদস্যদের দাবি, তাঁদের অনেকেই বিদ্রোহে অংশ নেননি, তবুও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও পক্ষপাতমূলক বিচার তাঁদের জীবন ধ্বংস করেছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বর্তমান বাস্তবতা
২০২৪ সালে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস, একটি নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা মনে করছেন, এখন তাঁদের আবেদনের জন্য অনুকূল সময়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আন্দোলন শুধু চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘদিনের অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া। তবে সরকারপক্ষের মতে, এই আন্দোলনের পেছনে গোপন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে, যা নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
প্রশাসনের বক্তব্য
রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আতিকুল ইসলাম বলেন:
“সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় পদযাত্রা ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।”
বিশ্লেষণ: পুনর্বাসন না পুনরাবৃত্তি?
এই আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অস্পষ্ট ও বিতর্কিত অধ্যায়কে আবার সামনে এনেছে। প্রশ্ন উঠছে-এই সদস্যদের পুনর্বাসন কি ন্যায়বিচারের দাবি, নাকি এটি পুরনো ক্ষতকে নতুন করে উসকে দেওয়া?
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যদি এই দাবিগুলোকে সংবেদনশীলতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে বিবেচনা না করে, তবে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে