
সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » “সামাজিক ব্যবসা” “এনজিও সাম্রাজ্যবাদের” নতুন সাম্রাজ্যবাদের ফাঁদ -সাংবাদিক কাজল
“সামাজিক ব্যবসা” “এনজিও সাম্রাজ্যবাদের” নতুন সাম্রাজ্যবাদের ফাঁদ -সাংবাদিক কাজল
লন্ডন ৭ জুলাই ২০২৫ - “সামাজিক ব্যবসা আর এনজিও শাসন এখন কৃষক-শ্রমিক-দারিদ্র মানুষের মুক্তির পথ নয়, বরং নতুন সাম্রাজ্যবাদের ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে,” মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর সম্পাদকীয় নিবন্ধে তিনি প্রমাণ-উপাত্তের আলোকে তুলে ধরেছেন কীভাবে বিদেশি তহবিল ও বেসরকারি সংস্থার প্রবল প্রভাব রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারণে ছাপ ফেলছে।
জীবনজীবিকার নিরাপত্তা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো মৌলিক সেবায় জনগণ সরাসরি এনজিওর ওপর নির্ভর হচ্ছে-এমনই চিত্র তুলে ধরেছেন কাজল। “গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ, বিদেশি কোষাগার থেকে সাড়া দেওয়া অনুদান, বিশেষ কর ছাড়-সব মিলিয়ে কেমন যেন একটা অদৃশ্য ‘এনজিও সরকার’ চলে আসছে। এতে সার্বভৌম রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণের বলবৎ ক্ষমতা ধসছে,” বলেন তিনি।
কাজলের মতে, “বেসরকারি তহবিলের ভিত্তিতে চলমান সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া কোনো গণতান্ত্রিক যাচাই-বাছাই ছাড়াই নির্ধারণ করা হচ্ছে। দরিদ্ররা আজ রাষ্ট্রের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে, এই নতুন কাঠগড়ায় আবদ্ধ।” তিনি সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত দেখিয়ে যুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নানাভাবে নীতিনির্ধারণে এনজিওর অগোছালো হস্তক্ষেপ গণতন্ত্রের মূলসূত্রের সঙ্গে সাংঘাত ঘটাচ্ছে।
সরকারি দপ্তরগুলো এ নিয়ে ইতোমধ্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। পরিকল্পনা কমিশনের এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নিয়ন্ত্রক ফ্রেমওয়ার্ক আবার দেখা হচ্ছে-নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, বার্ষিক অডিট রিপোর্ট públicas করা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারে সরকার।”
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে অবস্থা স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের বিশ্বাস, “সামাজিক ব্যবসাকে সম্পূরক হিসেবে গ্রহণ করা যায়, তবে সরকারি নীতি-রূপায়নে গণমুখী অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বজায় রাখা আবশ্যক।”
একই সময় সড়ক-মহাসড়ক মাঠে প্রস্তুত নেতারা সরকারি নীতি পরিবর্তনের দাবি তুলছেন। সামাজিক ব্যবসার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ও বিদেশি তহবিল ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা এড়িয়ে সরাসরি নির্বাচিত সরকারের অধীনেই জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার দাবি জানাচ্ছেন তারা।
পলিসি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “এনজিও শাসন”-এর নামে যে বিতর্ক চলছে, তা আসলে সার্বভৌমতা ও গণতন্ত্রের মৌলিক প্রশ্নকে নতুনভাবে সামনে এনেছে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে-সামাজিক ব্যবসাকে কতটা স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত রাখবেন, আর কতটা রেখে দেবেন নির্বাচিত সরকারের হাতে।
শুনতে হবে সাধারণ মানুষের ভেতরের শঙ্কা ও চাহিদা। কারণ, সক্রিয় অংশগ্রহণ, জবাবদিহিতা ও সংবিধান সম্মত প্রচলিত শাসনব্যবস্থাই শেষ পর্যন্ত এ জাতির উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।