
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | বিশ্ব সংবাদ » যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি: চার্চ অব ইংল্যান্ডের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ও নৈতিক অবস্থান
যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি: চার্চ অব ইংল্যান্ডের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ও নৈতিক অবস্থান
যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি: চার্চ অব ইংল্যান্ডের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ও নৈতিক অবস্থান ২৭ জুন ২০২৫
বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ইউরোপে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কার প্রেক্ষিতে, চার্চ অব ইংল্যান্ড ঘোষণা করেছে যে তারা যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রস্তুতি শুধু মানবিক সহায়তা নয়, বরং আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে।
যুদ্ধ-প্রস্তুতির কারণ
চার্চের ‘বিষপ টু দ্য আর্মড ফোর্সেস’ হ্যু নেলসন জানান, গত দুই বছর ধরে সামরিক মহলে “যুগান্তকারী সংকট”ের আশঙ্কা নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, “আমরা শান্তির জন্য প্রার্থনা করি, কিন্তু মহামারীর মতো অপ্রস্তুত অবস্থায় আর পড়তে চাই না।” সরকারের সর্বশেষ জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, “দশকের পর প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ ভূখণ্ডে যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিতে হবে।”
জেনারেল সিনোডে সামরিক উপস্থাপনা
চার্চ অব ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ আইনসভা জেনারেল সিনোডে প্রথমবারের মতো একজন সক্রিয় সেনা কর্মকর্তা, ব্রিগেডিয়ার জায়েশ মাহন, অংশ নিচ্ছেন। তিনি কোসোভো, সিয়েরা লিওন, ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং এবার যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য সামরিক ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে সিনোডে উপস্থাপনা দেবেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নেতৃত্ব থেকে অনুপ্রেরণা
চার্চের শীর্ষ নেতৃত্ব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার আর্চবিশপ উইলিয়াম টেম্পল ও অন্যান্য বিশপদের ভূমিকা অধ্যয়ন করছে।
জাতীয় প্রার্থনার দিনগুলোতে লাখো মানুষ চার্চে জড়ো হতেন।
BBC-তে প্রচারিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও প্রার্থনা যুদ্ধকালীন মনোবল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।আর্চবিশপ আদাম স্যাপিংটন অনাথ ও শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতির বার্তা দিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন।
এই ঐতিহাসিক উদাহরণগুলো বর্তমান প্রস্তুতির ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ন্যাটো ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামো
সম্প্রতি ন্যাটো সামিটে যুক্তরাজ্য ঘোষণা করেছে, তারা আগামী বছর থেকে প্রতিরক্ষা ব্যয় GDP-এর ৩.৫ শতাংশে উন্নীত করবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, “সাইবার হামলা, ড্রোন আক্রমণ ও এনার্জি যুদ্ধের মতো হাইব্রিড হুমকি মোকাবিলায় শুধু সামরিক প্রস্তুতি নয়, সামাজিক ঐক্য ও স্থানীয় প্রতিরোধ কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।” চার্চ এই প্রেক্ষাপটে “সম্পূর্ণ সমাজভিত্তিক প্রতিরোধ” গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে।
যুদ্ধের নৈতিক ও ধর্মতাত্ত্বিক প্রশ্ন
চার্চ অব ইংল্যান্ড নতুন প্রযুক্তি—যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স ও ড্রোন যুদ্ধ—নিয়ে নৈতিক ও ধর্মতাত্ত্বিক গবেষণা শুরু করেছে। বিষপ হ্যু নেলসন বলেন, “এই প্রযুক্তি শুধু যুদ্ধের ধরন নয়, আমাদের শান্তি ও ন্যায়বিচারের ধারণাকেও বদলে দিচ্ছে। চার্চকে এখনই এ বিষয়ে অবস্থান নিতে হবে।”
পরবর্তী ধাপ ও সুপারিশ
- জেনারেল সিনোডে একটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব আনা হচ্ছে, যাতে সেনা ক্যাপিল্যানরা আর্চবিশপের সরাসরি অনুমতিতে দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন।
- চার্চের প্রার্থনা, শিক্ষা ও কমিউনিটি কার্যক্রমে “শান্তি ও সংঘাত” থিম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
- আসন্ন ৮০তম VE Day স্মরণ অনুষ্ঠানে “ঐক্য, কৃতজ্ঞতা ও শান্তি”র বার্তা প্রচার করা হবে।
চার্চ অব ইংল্যান্ডের এই প্রস্তুতি শুধু সামরিক বাহিনীর পাশে দাঁড়ানো নয়, বরং জাতীয় মনোবল, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক স্থিতিশীলতা রক্ষার এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের অংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা আবারও জাতিকে একত্রিত করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে—এইবার এক নতুন যুগের যুদ্ধ সম্ভাবনার মুখোমুখি হয়ে।