
বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | রাজনীতি » বিক্রির জন্য বাংলাদেশ: কীভাবে ইউনুসের ছায়া সরকার জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিল
বিক্রির জন্য বাংলাদেশ: কীভাবে ইউনুসের ছায়া সরকার জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিল
আমিনুল হক | ৭ আগস্ট ২০২৫ সুত্র নর্থ ইষ্ট নিউজ
৩১ জুলাই, হোয়াইট হাউস আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উপর পারস্পরিক শুল্ক ২০% নির্ধারণ করে।
এই শুল্ক প্রথমে এপ্রিল মাসে ৩৭% হারে আরোপ করা হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতির আওতায়-যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে এমন দেশগুলোকে লক্ষ্য করে তৈরি।
বাংলাদেশের এই শুল্ক হ্রাস এসেছে কয়েক মাসের গোপন লবিং ও দরকষাকষির পর, যা পরিচালনা করেছে দেশের অবৈধ, অসাংবিধানিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী থেকে রাজনৈতিক সুবিধাবাদীতে পরিণত হওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
কূটনৈতিক সাফল্যের মুখোশে আত্মসমর্পণ
এই তথাকথিত শুল্ক হ্রাসকে ইউনুস-নেতৃত্বাধীন সরকার কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে প্রচার করছে, কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশি ভয়াবহ।
এই ছাড়ের বিনিময়ে বাংলাদেশকে একটি গোপনীয়তা চুক্তি (NDA) স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে, যার আওতায়:
২৫টি বোয়িং বিমান কেনার প্রতিশ্রুতি,
দীর্ঘমেয়াদী আমেরিকান গম, তুলা ও জ্বালানী আমদানি,
এবং এসবের সবই জনগণের অজান্তে।
ফলাফল? বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য-তৈরি পোশাক-এর উপর কার্যকর শুল্ক ১৫% থেকে বেড়ে ৩৫% হয়েছে।
এটি কূটনীতি নয়-এটি দিবালোকে চাঁদাবাজি।
???? শুল্ক হ্রাসের প্রতারণা
সরকার দাবি করছে ১৫% শুল্ক হ্রাস হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশি পোশাকের উপর শুল্ক এখন ৩৬.৫%, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
এই ‘সাফল্য’ আসলে জনগণের বুদ্ধিমত্তার প্রতি অপমান।
তবে শুল্কই এই গল্পের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি নয়-আসল বিপদ NDA-এর গোপন শর্তাবলী।
NDA-এর বিষাক্ত শর্তাবলী
সামরিক আত্মসমর্পণ
চুক্তির সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হলো বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ক্রয়ে হস্তক্ষেপ।
চীন থেকে ক্রয় কমানোর কথা বলা হলেও, রাশিয়া ও ইরান থেকেও ক্রয় বন্ধের দাবি করা হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সেনা ও নৌবাহিনীর ৯০% এবং বিমান বাহিনীর ৮০% সরঞ্জাম চীন ও রাশিয়া সরবরাহ করে।
যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিকল্প সরবরাহ না করেই এই নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে-সংসদ বা জনগণের সম্মতি ছাড়াই।
ফার্মাসিউটিক্যাল দখলদারি
বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান ও রপ্তানিমুখী ওষুধ শিল্পকে লক্ষ্য করা হয়েছে।
NDA অনুযায়ী, FDA-এর অনুমোদন অন্ধভাবে গ্রহণ করতে হবে।
স্থানীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হবে, যা ভোক্তা ও ব্যবসার জন্য হুমকি।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাধা
বাংলাদেশের $১ বিলিয়ন মূল্যের উদীয়মান জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আমেরিকান মানদণ্ড চাপিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে।
চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান এই শিল্পে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়, কিন্তু NDA চীনা লজিস্টিক নিষিদ্ধ করেছে।
কৃষি খাতে হস্তক্ষেপ
NDA অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য অনুমোদন ছাড়াই গ্রহণ করতে হবে।
“হালাল” সার্টিফিকেশন এখন লাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হবে।
বাংলাদেশি কৃষকদের অস্পষ্ট আমেরিকান মানদণ্ড মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে।
শ্রম আইন: একটি বিপজ্জনক অস্ত্র
“শ্রম অধিকার” এর নামে:
মাত্র ২০% শ্রমিক সম্মত হলেই যেকোনো কারখানায় ইউনিয়ন গঠন সম্ভব।
EPZ-এও এই নিয়ম কার্যকর হবে।
মালিকদের উপর বিদেশি তদারকি, জরিমানা ও পরিদর্শন চাপিয়ে দেওয়া হবে।
NDA-এর আসল উদ্দেশ্য
সরকার অস্বীকার করলেও, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ২ জুলাইয়ের এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন যে বোয়িং কেনা যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য ছিল না।
আসল উদ্দেশ্য ছিল:
বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাববলয়ে আবদ্ধ করা,
নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি ধ্বংস করা।
এই চুক্তি বাজার উন্মুক্ত করে না-সার্বভৌমত্ব বন্ধ করে দেয়।
নীরবতার মূল্য
এই NDA-এর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হলো গোপনতা:
কোনো জনপরিষদে আলোচনা হয়নি,
সংসদে ভোট হয়নি,
গণমাধ্যমে কোনো বিশ্লেষণ নেই।
একটি অবৈধ গোষ্ঠী দেশের ভবিষ্যৎ গোপনে বন্ধক দিয়েছে।
এটি নব্য ঔপনিবেশিকতার পাঠ্যবইয়ের উদাহরণ-যেখানে আগ্রাসী শক্তি নয়, দেশীয় সহযোগীরা চুক্তি করে।
বিশ্বাসঘাতকতার চুক্তি
এই NDA একটি বিশ্বাসঘাতকতার চুক্তি। প্রতিটি ধারা আত্মসমর্পণের গন্ধে ভরা।
এবং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয়? জনগণকে কিছু জানানো হয়নি।
ড. ইউনুস ও তার অবৈধ সরকার যা করেছে, তা কোনো শত্রুও করতে পারেনি-কূটনীতির ছায়ায় সার্বভৌমত্ব নিলামে তুলে দিয়েছে।