ইউ এস হোয়াটসঅ্যাপে শাসন: ঢাকায় মার্কিন কূটনীতিকদের ছায়া-নিয়ন্ত্রণে ইউনুস প্রশাসন
চন্দন নন্দী | ৭ আগস্ট ২০২৫ | নর্থইস্ট নিউজ
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিকরা নিয়মিতভাবে মোহাম্মদ ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে সরাসরি নির্দেশনা ও পরামর্শ পাঠাচ্ছেন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে-এমনই বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে নর্থইস্ট নিউজের অনুসন্ধানে।
এই বার্তাগুলো শুধু নীতিগত দিকনির্দেশনা নয়, বরং সরকার পরিচালনা ও নীতিনির্ধারণে সক্রিয় হস্তক্ষেপের প্রমাণ বহন করে।
কূটনৈতিক বার্তা: নীতির চেয়ে নির্দেশ বেশি
নর্থইস্ট নিউজ অন্তত পাঁচজন উপদেষ্টার কাছে পাঠানো বার্তা সংগ্রহ করেছে, যাদের দায়িত্বে রয়েছে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।
একটি ২৯৮ শব্দের দীর্ঘ বার্তায় একজন মার্কিন কূটনীতিক লিখেছেন:
“Reciprocal Tariff Framework Agreement নিয়ে হোয়াইট হাউস কোনো আলোচনায় যেতে চায় না। এটি একটি প্রস্তাব-গ্রহণ করলে শুল্ক কমবে, না করলে ৩৭% শুল্ক বহাল থাকবে। সময় কম, ঝুঁকি বড়। এখনই আপনার সেরা লোকদের নিয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করুন।”
এই বার্তাটি একজন নারী উপদেষ্টাকে পাঠানো হয়, যিনি ইউনুস প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ বৃত্তে রয়েছেন এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ঘনিষ্ঠ। উল্লেখযোগ্যভাবে, আসিফ নজরুলের স্ত্রী শীলা আহমেদ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ: ছায়া-সমন্বয় কেন্দ্র
২০২৪ সালের ৮ আগস্টের পরপরই একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়, যেখানে অধিকাংশ উপদেষ্টা যুক্ত।
মার্কিন কূটনীতিকরা এই গ্রুপে প্রশ্নের জবাবে নির্দেশনা দেন, যা প্রায়শই এক-একজন উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি বার্তা বিনিময়ের মাধ্যমে ঘটে।
একজন উপদেষ্টা, যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জামায়াত সমর্থকদের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ নথিভুক্ত করেছিলেন, এখন একটি নিয়ন্ত্রক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এবং তিনিও নিয়মিতভাবে মার্কিন দূতাবাস থেকে বার্তা পাচ্ছেন।
আরেকজন উপদেষ্টা, চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া একজন নারী, যিনি একজন কবি ও হিজবুত তাহরীর মতাদর্শীর সঙ্গে বিবাহিত, তিনিও ইউনুস সরকার গঠনের পর থেকেই নির্দেশনা পাচ্ছেন।
বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ: নীরব বিপ্লব?
২০২৫ সালের মে মাসে ঢাকায় একজন সিনিয়র মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশের একজন শীর্ষ বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এর কয়েকদিন পর, ২৮ মে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেয়, যিনি ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন।
তিন দিন পর, একই আপিল বিভাগ জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের হাইকোর্টের আদেশও বাতিল করে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এই মুক্তিকে স্বাগত জানান, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
দূতাবাসে নেতৃত্বের শূন্যতা ও ছায়া-প্রভাব
ঢাকায় গত এক বছর ধরে কোনো মার্কিন রাষ্ট্রদূত নেই।
পিটার ডি হাস ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই ঢাকা ছেড়েছেন, কিন্তু এখন তিনি Excelerate Energy-এর কৌশলগত উপদেষ্টা হিসেবে নিয়মিত বাংলাদেশ সফর করছেন।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন (তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কসোভোর সাবেক রাষ্ট্রদূত) চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব নেন-যেহেতু এই পদে সিনেট অনুমোদন প্রয়োজন হয় না।
এই পদক্ষেপ মার্কিন প্রশাসনের দ্রুত ও সরাসরি প্রভাব বিস্তারের কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষণ: কূটনীতি না ছায়া-শাসন?
এই তথ্যগুলো শুধু একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, বরং একটি ছায়া-শাসন কাঠামোর ইঙ্গিত দেয়, যেখানে:
অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশি নির্দেশনায় চলছে,
নীতিনির্ধারণ, বিচার বিভাগ, ও প্রশাসন সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে,
এবং জনগণের অজান্তে জাতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।