
রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | অর্থনীতি | রাজনীতি » দুর্নীতির অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলার আগে সরকার কি সত্যিই তদন্ত করেছে?
দুর্নীতির অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলার আগে সরকার কি সত্যিই তদন্ত করেছে?
১০ আগস্ট ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সাবেক সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তারের দুর্নীতির অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কিন্তু এই বিবৃতির ভাষা, যুক্তি এবং সময়কাল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-এটি একটি প্রতিক্রিয়াশীল, দুর্বল এবং স্বচ্ছতা-বিমুখ অবস্থান, যা বরং সাত্তারের বক্তব্যকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
অভিযোগ অস্বীকার, কিন্তু তদন্ত কোথায়?
সরকার বলছে, “বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থাকলে তা তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিন।” কিন্তু প্রশ্ন হলো-সরকার নিজে কি এই অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে?
সাত্তার সরাসরি বলেছেন, “গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও তথ্য আছে।” তাহলে সরকার কি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে? নাকি শুধু বিবৃতি দিয়ে দায় সেরেছে?
নাম না বলার কৌশল: নিরাপত্তা না কি সতর্কতা?
সাত্তার কোনো নাম প্রকাশ করেননি, যা সরকার “দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলছে। কিন্তু একজন সাবেক সচিব, যিনি দীর্ঘদিন প্রশাসনে ছিলেন, তিনি জানেন-নাম প্রকাশ না করে অভিযোগ তোলা কখনো কখনো একটি কৌশল, যাতে তদন্তের সুযোগ থাকে এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় থাকে।
অতীতে বহু দুর্নীতির অভিযোগ প্রথমে নাম ছাড়া এসেছে, পরে তদন্তে নাম বেরিয়ে এসেছে। তাই নাম না বলার বিষয়টি অভিযোগের ভিত্তিহীনতা প্রমাণ করে না।
সরকার কি সত্যিই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ?
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রশাসন স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অভিযোগ উঠলেই তা অস্বীকার করা হয়, তদন্তের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না, বরং অভিযোগকারীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়।
যদি সরকার সত্যিই স্বচ্ছতা চায়, তাহলে সাত্তারের বক্তব্যকে “ভিত্তিহীন” বলার আগে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগ যাচাই করা উচিত ছিল।
জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কার কারণে?
সরকার বলছে, “ভিত্তিহীন অভিযোগ জনআস্থার জন্য ক্ষতিকর।” কিন্তু জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখনই, যখন অভিযোগ উঠলে সরকার তা অস্বীকার করে, তদন্ত এড়িয়ে চলে, এবং অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
সাত্তারের বক্তব্য জনআস্থার ক্ষতি নয়, বরং তা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে জবাবদিহির দাবি। ক্ষতি হচ্ছে সরকারের প্রতিক্রিয়ায়, যেখানে স্বচ্ছতা নেই, জবাবদিহি নেই, আছে শুধু অস্বীকার।
সরকারের বিবৃতি সাত্তারের বক্তব্যকে খণ্ডন করতে পারেনি; বরং তা আরও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলার আগে সরকার যদি সত্যিই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তাহলে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগ যাচাই করুক। অন্যথায়, জনমনে এই ধারণা আরও দৃঢ় হবে-সরকার দুর্নীতিকে আড়াল করছে, এবং সাত্তারের বক্তব্যই সত্যের কাছাকাছি।
কাজলের বিশ্লেষন