
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » নতুন বাংলাদেশের প্রতিটি রাষ্ট্র ও দলীয় যন্ত্রপাতি সংখ্যালঘু নিপীড়নে জড়িত চন্দন নন্দী
নতুন বাংলাদেশের প্রতিটি রাষ্ট্র ও দলীয় যন্ত্রপাতি সংখ্যালঘু নিপীড়নে জড়িত চন্দন নন্দী
২৭ জুন ২০২৫
ঢাকার খিলক্ষেতে ২৬ জুন সকালে একটি অস্থায়ী হিন্দু মন্দির ভাঙতে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি আর্থ মুভার ব্যবহার করা হয়। এই ঘটনায় রাষ্ট্র নিজেই এক ইচ্ছাকৃত সহিংসতার অংশীদার হয়ে ওঠে। ভারতের উত্তর প্রদেশে যেমন বুলডোজার সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বাংলাদেশেও একই কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের আগস্টে মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই হিন্দু ও বৌদ্ধ সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক হামলা শুরু হয়। সেনাবাহিনী, যার হাতে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তারা কার্যত নিষ্ক্রিয়। এমনকি তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়ি ধ্বংসের সময়ও হস্তক্ষেপ করেনি। সংখ্যালঘুদের বাড়ি, মন্দিরে হামলা, হত্যা, ধর্ষণ-সবই ঘটেছে সেনাবাহিনীর নীরবতার ছায়ায়।
পুলিশ বাহিনীও সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা এই বাহিনী কেবল দর্শকের ভূমিকায়।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু তারা দলীয় কর্মীদের লুটপাট ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিএনপির কিছু হিন্দু নেতার সঙ্গে ফোনালাপে দেখা গেছে, তারা কেবল অতীতের আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বর্তমান সহিংসতাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক নিবন্ধন পুনরুদ্ধার এবং এবি পার্টির মতো প্রকাশ্য সাম্প্রদায়িক দলগুলোর উত্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইউনুসের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টিও এই ইস্যুতে নীরব থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবীণরা জানিয়েছেন, তারা মোহাম্মদ ইউনুস ও তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অধীনে থাকা স্বরাষ্ট্র সচিব একসময় হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক মুসলিম ব্যক্তি এক বৃদ্ধ হিন্দুকে মারধরের জন্য প্রস্তুত। অভিযোগ ছিল ধর্ম অবমাননার, কিন্তু তদন্তে জানা যায়, এটি ছিল পারিশ্রমিক চাওয়ার জেরে সংঘটিত সহিংসতা। অভিযুক্ত ব্যক্তি এখনও মুক্ত।
ইউনুসের প্রেস সচিব এই সহিংসতাকে “চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কাজ” বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই সহিংসতা এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত নিপীড়নের অংশ।
‘নতুন’ বাংলাদেশের এই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দেশের জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। ইউনুসের কাজ হলো বিদেশি নির্দেশনা অনুসরণ করে যতটা সম্ভব নির্বাচন বিলম্বিত করা। কিন্তু এই prolonged anti-Hindu অবস্থান একসময় দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে-এখন না হলেও, ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবেই।