
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | রাজনীতি » লেবার সরকারের প্রস্তাবিত ওয়েলফেয়ার বিল নিয়ে যুক্তরাজ্যে এখন তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা
লেবার সরকারের প্রস্তাবিত ওয়েলফেয়ার বিল নিয়ে যুক্তরাজ্যে এখন তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা
সুত্র গার্ডিয়ানঃ লেবার সরকারের প্রস্তাবিত ওয়েলফেয়ার বিল নিয়ে যুক্তরাজ্যে এখন তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছে। এই বিলের মাধ্যমে Personal Independence Payment (PIP) এবং Universal Credit-এর কিছু উপাদানে কড়াকড়ি আরোপ করে ২০৩০ সালের মধ্যে £৫ বিলিয়ন সাশ্রয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে লেবার পার্টিরই ১০০-র বেশি এমপি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন।
সরকার কিছু ছাড় দিয়েছে-যেমন, বর্তমান PIP প্রাপকদের জন্য নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হবে না, বরং ২০২৬ সালের নভেম্বর থেকে কেবল নতুন আবেদনকারীদের জন্য কার্যকর হবে। তবুও, অনেক এমপি মনে করছেন এই পরিবর্তনগুলো যথেষ্ট নয় এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে3।
একজন বিদ্রোহী এমপি বলেছেন, “আমরা এমন একটি বিলের পক্ষে ভোট দিতে পারি না যা দরিদ্র ও প্রতিবন্ধীদের আরও দুর্বল করে তোলে।” এমনকি একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রায় ৫০ জন এমপি ইতিমধ্যে তাদের বিরোধিতার কথা জানিয়েছেন।
লেবার সরকারের প্রস্তাবিত ওয়েলফেয়ার বিলের রাজনৈতিক কৌশল, অর্থনৈতিক প্রভাব এবং মানবিক দিকগুলো একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি।
রাজনৈতিক কৌশল
লেবার সরকারের এই বিল মূলত একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা। একদিকে তারা চায় বাজেট ঘাটতি কমাতে, অন্যদিকে তাদের ভোটারদের-বিশেষ করে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী-খুশি রাখতে। কিন্তু এই বিলের মাধ্যমে তারা এমন একটি অবস্থানে চলে গেছে যেখানে নিজ দলের ১২৭ জন এমপি পর্যন্ত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন।
কৌশলগত ভুল: বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই আনা হয়েছে, যা অনেকের কাছে অগণতান্ত্রিক মনে হয়েছে।
দলীয় বিভাজন: বিদ্রোহী এমপিরা বলছেন, এটি লেবার পার্টির আদর্শের পরিপন্থী-যেখানে সমাজকল্যাণকে কেন্দ্রীয় নীতি হিসেবে দেখা হয়।
নেতৃত্বের সংকট: কেয়ার স্টারমার ইতিমধ্যে তিনটি বড় নীতিতে ইউ-টার্ন করেছেন (উইন্টার ফুয়েল, গ্রুমিং গ্যাংস, এবং এখন ওয়েলফেয়ার), যা তার নেতৃত্বের দৃঢ়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে £৫ বিলিয়ন সাশ্রয় করা। কিন্তু এই সাশ্রয়ের পেছনে যে মানবিক মূল্য রয়েছে, তা অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
OBR-এর হিসাব অনুযায়ী, প্রস্তাবিত পরিবর্তনের ফলে ৮ লাখ মানুষ PIP-এর যোগ্যতা হারাবে এবং ২.৫ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে, যার মধ্যে ৫০ হাজার শিশু রয়েছে।
চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস এই বিলের মাধ্যমে বাজেটের ঘাটতি পূরণ করতে চেয়েছেন, কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন এটি একটি “cut first, reform later” পন্থা, যা দীর্ঘমেয়াদে আরও ব্যয়বহুল হতে পারে।
মানবিক দিক
এই বিলের সবচেয়ে গভীর প্রভাব পড়বে প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ ব্যক্তিদের ওপর, যারা প্রতিদিনের মৌলিক কাজ-যেমন গোসল, খাওয়া, চলাফেরা-করতেও সহায়তা পান।
PIP-এর যোগ্যতা কঠোর করা মানে অনেকেই আর সহায়তা পাবেন না, যদিও তাদের প্রয়োজন আগের মতোই রয়ে গেছে।
Universal Credit-এর স্বাস্থ্য উপাদান নতুন আবেদনকারীদের জন্য কমিয়ে আনা হবে, যা মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য আর্থিক সংকট তৈরি করবে।
“Back-to-work” স্কিম চালু করা হলেও, এটি মাত্র ৭০,০০০ জনকে সহায়তা করবে, যেখানে প্রভাবিত মানুষের সংখ্যা লাখের উপরে।
এই বিলকে অনেকেই বলছেন লেবার সরকারের “poll tax moment”, অর্থাৎ এমন একটি সিদ্ধান্ত যা জনরোষের মুখে সরকারকে বড় রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে