
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | অর্থনীতি | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ইউরোপে “নতুন ন্যুরেমবার্গ”: পুতিনকে যুদ্ধাপরাধে বিচারের প্রস্তুতি
ইউরোপে “নতুন ন্যুরেমবার্গ”: পুতিনকে যুদ্ধাপরাধে বিচারের প্রস্তুতি
ইউরোপে “নতুন ন্যুরেমবার্গ”: পুতিনকে যুদ্ধাপরাধে বিচারের প্রস্তুতি
ব্রাসেলস, ২৭ জুন ২০২৫: ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাসের অন্যতম কঠোর বিচার প্রক্রিয়ার অনুরূপ ব্যবস্থা নিচ্ছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে। ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে তাঁকে “আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী” হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করাতে নেমেছে ব্রাসেলস, যার ছায়া পড়ে ১৯৪৫-এর নাৎসি-বিচারের ওপর।
আইনি যুদ্ধ: ইউরোপীয় পার্লামেন্ট একটি বিশেষ “হাইব্রিড ট্রাইবুনাল” গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধ তদন্ত ও বিচার হবে। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
প্রচার নিয়ন্ত্রণ ও ‘ডি-পুতিনাইজেশন’: ইইউ নিষিদ্ধ করছে রুশ রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ও পুতিনপন্থী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম। নাৎসি জার্মানির “ডেনাজিফিকেশন”-এর ছায়া মেলে এই উদ্যোগে।
অর্থনৈতিক চাপ: রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক, অলিগার্চদের বিদেশি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে ইউক্রেন পুনর্গঠনে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিচ্ছে ইইউ। কয়েকটি
সদস্য রাষ্ট্র “রিপ্যারেশনস ট্রাস্ট ফান্ড” গঠনের উদ্যোগেও নেতৃত্ব দিচ্ছে।
নিরাপত্তা বন্ধন জোরদার: বাল্টিক, পোল্যান্ড, ও পূর্ব ইউরোপজুড়ে মোতায়েন হচ্ছে NATO বাহিনী-যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মান বিভাজনের মতো এক “আধুনিক প্রতিরক্ষা বেল্ট” গঠনের দিকে অগ্রসর।
বিশ্লেষণ: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপ কেবল পুতিনকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে না, বরং রাশিয়ার ভেতরের যুদ্ধ-সমর্থন কাঠামোকেও নষ্ট করতে চায়-যা নাৎসিদের পতনের সময়কার সামাজিক সংস্কারের সঙ্গেতুলনীয়।
ইউরোপ যখন “পুতিনকে” নৃরবার্গ পদ্ধতিতে মোকাবিলা করার কথা বলছে, দরজা খুলছে কয়েকটি প্রধান হাতিয়ার—যেমন সশস্ত্র বিজয় নয়, আইন-আদালত ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। নিচে ব্যাখ্যা দিলাম, কীভাবে তারা যুদ্ধাপরাধী নাৎসিদের বিরুদ্ধে WW2 পরবর্তী ব্যবস্থাকে মডেল হিসেবে নেবে:
- আন্তর্জাতিক বিচার–ভূমিকা (Nuremberg Trials ↔ ICC & Ukraine Tribunal)
- ১৯৪৫–৪৬ সালে নাৎসি নেতাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল নৃরবার্গ ট্রায়াল। এখনই আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত(ICC) পুতিন ও তাঁর শীর্ষসহকারী-সহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারচার্জ দিয়েছে।
- ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট ইতিমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য আলাদা “হাইব্রিড ট্রাইবুনাল” করার সুপারিশ করিয়েছে।
- রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাঙন (Denazification ↔ “De-Putinisation”)
- WW2 পরপর জার্মানির স্কুল, মিডিয়া, রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নাৎসি আইডিওলজি সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজ EU নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে সব রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম, প্রোপাগান্ডা সংগঠন ও পুতিন-সমর্থক NGOS।
- রাশিয়ায় গভীরভাবে পুঁতিয়ে দেওয়া জাতীয়তাবাদ ও যুদ্ধসমর্থনকে আলাদা আলাদা অপসারণের ফিল্টার বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
- অর্থনৈতিক জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ (Reparations ↔ Frozen Assets for Ukraine)
- WW2 শেষে জার্মানির সম্পত্তি দখল ও পুনর্গঠনের খরচ আদায় করা হয়েছিল। এখন ইউরোপীয় কমিশন সতর্ক করে রেখেছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অলিগার্চ আর পুতিনের ব্যক্তিগত বিদেশি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও শেষে জব্দ করে ইউক্রেনের পুনর্নির্মাণে ব্যয় করার পরিকল্পনা।
- ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা ও বিচারের ডাক (Sanctions ↔ Travel-Ban & Asset-Freeze)
- নাৎসি অফিসারদের নাগরিকত্ব প্রত্যাহার বা ভিসা বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেয়ার কথা ছিল—আজ EU ও G7 জারি করেছে পুতিন, ল্যাভরভ, ও তাদের পারিবারিক-অলিগার্চদের বিরুদ্ধে ভিসা বন্ধ, ব্যাংক লগ ইন-আউট, ব্যাংকে আর এক পয়সাও ঢুকতে দিচ্ছে না।
- ডেটা শেয়ার, বিচারের জন্য প্রমাণ সংগ্রহ, সাবসিডিয়ারিদেরও টার্গেট করছে।
- নিরাপত্তা ত্বরণ ও আর্টিকেল-৫ (Occupation & Guarantees ↔ NATO & EU Forces)
- WW2 পর দু’ভাগ জার্মানির মধ্যরেখা নিয়ন্ত্রণ করার মতোই, আজ বাল্টিক, পোল্যান্ড থেকে রুমানিয়ায় NATO ব্যাটালিয়ন মোতায়েন—যতক্ষণ না রাশিয়া আরেকদফা আক্রমণ সামলাতে পারে, ততক্ষণ ইউরোপীয় নিরাপত্তা ফ্রেমওয়ার্ক জোরদার।
সংক্ষেপে, পুতিনকে “ইউরোপীয় সংগ্রহশালা” থেকে একেবারে আলাদা করে দাঁড় করাতে চায় Brussels—যেমন নাৎসি নেতাদেরকে দাঁড় করানো হয়েছিল নৃরবার্গের বেঞ্চে। যদিও সামরিক পর্যায়ে আক্রমণ সম্ভব নয়, আইনগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সব দিকই একসঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে WWII পরবর্তী জার্মানির মতো করে “অপরাধীদের গৃহবন্দি ও বিচার” নিশ্চিত করার জন্য।
অতিরিক্ত তথ্য:
- EU–র বিশেষ “জুডিশিয়াল টাস্ক ফোর্স” ইতোমধ্যে প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করেছে।
- G7 সম্মেলনে আলোকপাত হয়েছে রুশ সম্পত্তি কনফিসকেশন ও “বিল্ডিং ব্যাক বেটার ইউক্রেন” তহবিল গঠনের ওপর।
- আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় চলছে “ডি-পুতিনাইজ ইউরোপ” প্রচারণা, জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে রুশ প্রোপাগান্ডা বন্ধের দাবি।