
রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | রাজনীতি | স্বাস্থ্য ও আইন » হাসপাতালের নথিতে ‘স্বামী’ হিসেবে নাম বসানো: নীলা ইস্রাফিলের অভিযোগে তুষারের বিরুদ্ধে আইনি প্রশ্ন
হাসপাতালের নথিতে ‘স্বামী’ হিসেবে নাম বসানো: নীলা ইস্রাফিলের অভিযোগে তুষারের বিরুদ্ধে আইনি প্রশ্ন
পক্ষকাল প্রতিবেদক | ৯ আগস্ট ২০২৫
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাবেক নেত্রী নীলা ইস্রাফিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিস্ফোরক অভিযোগ এনে দাবি করেছেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়াই এনসিপি নেতা সারোয়ার তুষার নিজের নাম “স্বামীর” ঘরে বসিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক ও আইনি বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
শনিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক পোস্টে হাসপাতালের ভর্তি ফরমের একটি ছবি যুক্ত করে নীলা লেখেন, “আমি তখন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম। আমার নাম, পরিচয়, জীবনের সিদ্ধান্ত-সবকিছুর ওপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এই সুযোগে তুষার আমার স্বামীর নামের জায়গায় নিজের নাম বসিয়ে দিয়েছেন। এটা কোনো ভুল নয়, এটা সরাসরি জালিয়াতি।”
আইনি দৃষ্টিকোণ: জালিয়াতি ও তথ্য বিকৃতির অভিযোগ
নীলা তার পোস্টে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারার উল্লেখ করে বলেন, “প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নথিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তৈরি করা এবং তা ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।” তিনি আরও দাবি করেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনেও এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
তিনি বলেন, “আমার অনুমতি ছাড়া আমার পারিবারিক পরিচয় বিকৃত করা মানে শুধু সামাজিক সম্মানহানিই নয়, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। ইউডিএইচআর-এর ধারা ৩, ৫, ১২ ও ২২ অনুযায়ী আমার মর্যাদা, গোপনীয়তা এবং আইনি নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।”
তুষারের পাল্টা প্রতিক্রিয়া: ‘বাটপারি’র অভিযোগ ও ব্যাখ্যা
নীলার অভিযোগের পরপরই এনসিপি নেতা সারোয়ার তুষার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দিয়ে কড়া জবাব দেন। তিনি দাবি করেন, “নীলা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আমাদের অফিসে এসেছিলেন। পুলিশ ও মানবাধিকার কর্মী লেনিন ভাইয়ের উপস্থিতিতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
তুষার বলেন, “হাসপাতালের ভর্তি ফরমে C/O অর্থাৎ ‘care of’ লেখা হয়েছিল, যা লাল দাগ দিয়ে ঢেকে প্রচার করা হয়েছে। আমি কি পাগল? বাটপারির একটা সীমা থাকা দরকার!”
তিনি আরও বলেন, “হাসপাতালে অচেনা রোগী ভর্তি করার সময় যিনি নিয়ে যান, তার নাম C/O হিসেবে লেখা হয়। এটা একটি সাধারণ রীতি। এসব অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।”
বিতর্কের পটভূমি: ভাইরাল ফোনকল ও দলীয় পদ স্থগিত
এর আগে সারোয়ার তুষারের সঙ্গে নীলার একটি ফোনকল রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা এনসিপির অভ্যন্তরীণ সংকটকে আরও ঘনীভূত করে। দলটি পরে তুষারের পদ স্থগিত করে। এই ঘটনার পর হাসপাতালের নথি নিয়ে বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
মানবাধিকার ও আইনি পদক্ষেপের দাবি
নীলা ইস্রাফিল তার পোস্টে তুষারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের তথ্য বিকৃতি ভবিষ্যতে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে। এটি আমার সামাজিক ও আইনগত নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে। আইনজীবীরা বলছেন, যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে এটি তথ্য জালিয়াতি ও পরিচয় বিকৃতির গুরুতর উদাহরণ, যা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
পক্ষকাল বিশ্লেষণ
এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত বিরোধ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তথ্য ব্যবস্থাপনা, নারীর সম্মান ও মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। হাসপাতালের নথিতে ভুল বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য সংযোজন ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা ও সামাজিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো-এই অভিযোগের ভিত্তিতে কি যথাযথ তদন্ত ও বিচার হবে? নাকি এটি সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের মধ্যেই চাপা পড়ে যাবে?