
মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » করিডোরের পর এবার বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সামরিক ঘাটি
করিডোরের পর এবার বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সামরিক ঘাটি
আহমেদুর রহমান মুরাদ ভাইয়ের ফেসবুকের পোস্ট থেকে
চট্টগ্রাম বন্দর দেয়া হচ্ছে মার্কিন নৌবাহিনীর অংশীদার ডিপি ওয়ার্ল্ডকে।
আরাকান আর্মিকে করিডোর দেয়ার ঘোষণার পর এবার দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী নতুন ঘোষণা দিল ইউনুস সরকার। ইসরাইল ঘনিষ্ঠ দুবাইভিত্তিক ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’ এর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর। গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সামিট চলাকালে ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম ও এপি মুলার-মায়ারস্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মায়ারস্ক উগলা প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তারা বঙ্গোপসাগরের উপকূলে নতুন বন্দর নির্মাণ এবং বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করার প্রস্তাব দেন।।এরপর গত ৯ এপ্রিল ডিপি ওয়ার্ল্ড এর চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
এরপর ৩০ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের জরুরী বৈঠক আহবান করেন ইউনূস। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে আগষ্টের মধ্যে কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দেন ইউনুস। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে বন্দর ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা জানান প্রেস সচিব সফিকুল।
করিডোর নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার মধ্যেই মার্কিন স্বার্থবাহী প্রতিষ্ঠানের হাতে দেশের লাভজনক একটি বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়া দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আরেকটি মারাত্মক আঘাত। বঙ্গোপসাগরে সামরিক ঘাটি করার মার্কিন আকাঙ্খা দীর্ঘদিনের। ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’ বঙ্গোপসাগরেই বন্দর পেয়ে যাওয়ায় এবার সেই মার্কিন আকাঙ্খা পূরণ হতে যাচ্ছে খুব সহজেই। ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’ বিশ্বব্যাপী মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় সেই কাজই করে থাকে।ডিপি ওয়ার্ল্ড দুবাইভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান হলেও তারা মার্কিন নৌবাহিনীর অংশীদার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের বন্দর রয়েছে। সারাবিশ্বে মার্কিন নৌবাহিনী অপারেশনে ডিপি ওয়ার্ল্ড এর বন্দরগুলো ব্যবহার করে।
মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ নোঙ্গর করার বার্থও রয়েছে ডিপি ওয়ার্ল্ড এর বন্দরগুলোতে। ডিপি ওয়ার্ল্ড পরিচালিত দুবাইয়ের একটি বন্দর হলো, ‘জেবেল আলী পোর্ট। সেখানে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ নোঙ্গর নিয়মিত নোঙ্গর করে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নৌঘাটির মতো ব্যবহৃত হয় এই বন্দর। লোহিত সাগরের জিবুতিতে রয়েছে ডিপি ওয়ার্ল্ডের আরেকটি বন্দর। সেই বন্দর মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের ফুয়েল সরবরাহ করে। ডিপি ওয়ার্ল্ড মার্কিন নৌবাহিনীর এতো বিশ্বস্ত অংশীদার যে, তারা মার্কিন ‘Customs-Trade Partnership Against Terrorism (C‑TPAT)’ কর্তৃক প্রত্যয়ন প্রাপ্ত।
শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয় ই”সরাইলের সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ডিপি ওয়ার্ল্ড এর। ফিলিস্থিনে ইসরাইলি গণহত্যা স্বত্ত্বেও ইসরাইলি বৃহত্তম কনটেইনার শিপিং ফার্ম ‘জিম ইন্টিগ্রেটেড শিপিং সার্ভিসেস’ সহ ই”সরাইলের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে ডিপি ওয়ার্ল্ড। ইসরাইলের নিরাপত্তায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বিষয়ে ইসরাইল কোম্পানী তাদের প্রত্যয়নও করেছে।
ইসরাইলের বৃহত্তম কনটেইনার শিপিং ফার্ম ‘জিম ইন্টিগ্রেটেড শিপিং সার্ভিসেস’ ডিপি ওয়ার্ল্ড কে প্রত্যয়ন করে বলেছে, “ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে আমাদের দীর্ঘ ব্যবসায়ের সময় আমরা ডিপি ওয়ার্ল্ড এর বন্দরগুলিতে কখনো নিরাপত্তা সমস্যা অনুভব করিনি। আমরা ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত হতে পেরে গর্বিত এবং ভবিষ্যতে তাদের সাথে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি।” অর্থাৎ ই”সরাইল আমেরিকার ঘনিষ্ঠ বন্দর হলো ডিপি ওয়ার্ল্ড।
সেই ডিপি ওয়ার্ল্ড এর হাতে বন্দর তুলে দিতে বলা হচ্ছে, বিদেশীদের হাতে দিলে চট্টগ্রাম বন্দর হবে আন্তর্জাতিক মানের, বঙ্গোপসাগরে বিনিয়োগ হাব হবে, ফ্রি ট্রেড জোন করা হবে, ইত্যাদি বিভিন্ন যুক্তি দেয়া হচ্ছে। অথচ বন্দরের প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে। বিদেশীদের হাতে দিতে যাওয়া নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে ক্রেন দরকার ১২টি। আছে ১৪টি। আবার জাহাজ থেকে নামানোর পর কনটেইনার স্থানান্তরের যত যন্ত্র দরকার, তারও সবই আছে টার্মিনালটিতে।
টার্মিনালটিতে জাহাজ থেকে বার্ষিক ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো-নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। দেশীয় অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ করেছে। বন্দরের ৪টি টার্মিনালের মধ্যে গত বছর মোট কনটেইনারের ৪৪ শতাংশ ওঠানো-নামানো হয়েছে এই টার্মিনালে।
টার্মিনালটির জেটি সম্পুর্ণ দেশের টাকায় নির্মিত। যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে দেশের টাকায়। বন্দর ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান মিলে টার্মিনালটি ভালোভাবে পরিচালনা করছে। বন্দরের সবচেয়ে বেশি আয় হচ্ছে এই টার্মিনাল থেকে। এভাবে টানা ১৭ বছর ধরে দেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে চলছে টার্মিনালটি। ১৭ বছর পর এই টার্মিনাল কেন এখন বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে হবে?
গত ৩০ এপ্রিলের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, বর্তমানে চালু থাকা চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বছরে ১.২৭ মিলিয়ন ইউনিট কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করতে সক্ষম। এই সক্ষমতা ১.৫ মিলিয়ন মিলিয়নে উন্নীত করা সম্ভব।
অর্থাৎ মাত্র ০.২৩ মিলিয়ন ইউনিট কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানে পরিচালনার নামে একটি স্বয়ং সম্পুর্ণ লাভজনক বন্দর বিদেশীদের হাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। যার গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আয় করেছে প্রায় এক হাজার ২১৬ কোটি টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রকৃত আয় ছিল ৫৭৪ কোটি টাকা।