শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

Daily Pokkhokal
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » নয়া বন্দোবস্ত একটি চিত্তাকর্ষক শব্দই শুধুমাত্র
প্রথম পাতা » রাজনীতি » নয়া বন্দোবস্ত একটি চিত্তাকর্ষক শব্দই শুধুমাত্র
১৬ বার পঠিত
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নয়া বন্দোবস্ত একটি চিত্তাকর্ষক শব্দই শুধুমাত্র

আবু নাসের অনিক:---

জুলাই গণঅভ্যূত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘নতুন বন্দোবস্ত’ এই শব্দ দুইটিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে।


এই শব্দটি যারা সবচেয়ে বেশি উচ্চারণ করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে তাদের এই নয়া বন্দোবস্ত নিয়েই দুই চারটি কথা বলতে চাই।


সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জাতীর সামনে একজন মহানায়ক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। হেতু হচ্ছে তিনি তার বাবার ভুলের জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।


সেই ভুলটা কী? ওনার বাবা কুমিল্লা এলজিইডি’র অফিস থেকে ঠিকাদারির লাইসেন্স গ্রহণ করেছিলেন। এবিষয়ে প্রথমেই যে প্রশ্নটা করতে চাই, এটা কি আসলেই সাদামাটা একটি ভুল? ঘটনা পরম্পরা বিবেচনা করলে বলা যাবে এটা কোনভাবেই ভুলের কোন বিষয় না।


উপদেষ্টা বলেন,‘বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেননি, সেজন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’


ওনার বাবা একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বোঝেন না!! এর চাইতে হাস্যকর কিছু আছে?


তার চাইতেও হাস্যকর বিষয় হচ্ছে উপদেষ্টা জানতেনই না যে তার বাবার নামে এলজিইডি থেকে ঠিকাদারির লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে! কি অদ্ভুত ব্যাপার।


ছেলে বাবার অন্যসকল বিষয় সম্পর্কেই জানেন; শুধুমাত্র এই বিষয়টা জানতেন না। যেটা জানা সবচাইতে স্বাভাবিক ঘটনা ছিলো!


অথচ স্থানীয় এলজিইডি অফিসের অধিকাংশ কর্মকর্তাই তার নিজস্ব আস্থাভাজন মানুষ। ধরে নিলাম ওনার বাবা ওনাকে জানান নাই; অথচ একজন কর্মকর্তাও জানালেন না ওনাকে তার বাবা লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেছেন।


ভাবুন, এই বিষয়টি যদি জানাজানি না হতো তাহলে কি হতো? ক্ষমা চাওয়ার কোন বিষয়ই থাকতো না! দিব্যি এই লাইসেন্স ব্যবহার করে করে-কর্মে খাইতো!


উপদেষ্টার বাবার লাইসেন্সে ঠিকাদারি কাজ পাওয়াটাও নিশ্চিত থাকতো! একইসাথে ঠিকাদারির কাজটা ঠিকমতো না করেও বিল-ভাউচারের টাকা-পয়সা তুলে নেওয়াও কোন ঘটনা ছিলো না! কোটি কোটি টাকা লোপাট হতে পারতো!


যারা বলছেন, এমন ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে ইতিপূর্বে আর ঘটে নাই; তাদেরকে বলি, এমন পরিস্থিতিতে পড়ে ক্ষমা তো সাধারণ বিষয় মন্ত্রীত্ব থেকেও সরে যেতে বাধ্য হওয়ার অনেক উদাহরণ আছে বাংলাদেশে।


খুব বেশি দিন আগের বিষয় না ২০২১ সালে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদ জাতীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।


আর একটু পেছনে আসেন, ২০০৫ সালে বিএনপি’র জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী জনাব একেএম মোশাররফ হোসেন নাইকোর ঘুষ কেলেঙ্কারী মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।


অথচ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সেই মামলার রায়ে খালেদা জিয়াসহ সকল আসামী খালাস পেয়েছেন।


উপদেষ্টার বাবার লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে নভেম্বর ২০২৪। আর এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এপ্রিল ২০২৫।


পাঁচ মাস আগেই এটা নিয়ে কোন হৈচৈ হওয়ার পূর্বেই যদি তিনি নিজে এটা প্রকাশ্যে এনে ক্ষমা চাইতেন তাহলেই সেটাকে গ্লোরিফাই করা যেতো! নতুন বন্দোবস্ত হিসাবেও দেখানো যেতো!

অন্যদিকে আমাদের এই উপদেষ্টার এপিএস মো: মোয়াজ্জেম হোসেন এবং উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) র বিরুদ্ধে কয়েক শো কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন হয়েছে।

এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ২২ এপ্রিল। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পিও ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।


একজন মন্ত্রী বা উপদেষ্টা তাকেই এপিএস বা পিও হিসাবে নির্বাচিত করেন যিনি তার সবচাইতে বিশ্বস্ত থাকেন। এবং তার নাড়ি-নক্ষত্রের সমস্ত বিষয় সম্পর্কে জানেন।


দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তাদের সমস্ত কার্যক্রমের বিষয়ে তারা জ্ঞাত হয়ে থাকেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট এর ভিত্তিতে।


যাদের নামে শত কোটি টাকার উপরে দুর্নীতির অভিযোগ তাদের উপদেষ্টারা বলছেন সেই দূর্নীতির বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা।


এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন,‘যেহেতু এখন তিনি (মোয়াজ্জেম) মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নন, সুতরাং মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এটা তদন্ত করার সুযোগ নেই।


তিনি একজন স্বাধীন ব্যক্তিসত্তা। সেই জায়গা থেকে আমরা দুদককে অনুরোধ করেছি যে আপনারা এটা তদন্ত করুন।’


একটু স্মরণ করুন সাবেক আইজিপি বেনজির এবং সেনাপ্রধান সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের কি বলেছিলেন।


“আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি, বেনজীর আমাদের দলের লোক নয়। সিনিয়রিটি মেধা নিয়ে সে আইজিপি হয়েছে।


আজিজও আমাদের দলের লোক নয়। সেনা প্রধান হয়েছে তার যোগ্যতায়, তার সিনিয়রিটি নিয়ে। আমরা তাদের বানাইনি।”


‘এখন ভেতরে তারা যদি কোনো অপকর্ম করে, এটা যখন সরকারের কাছে বিষয়টি আসে, তখন এদের বিচার করার সৎ সাহস শেখ হাসিনা সরকারের আছে,’। সেম ল্যাঙ্গুয়েজ! এখনকার উপদেষ্টার ল্যাঙ্গুয়েজের সাথে কোন পার্থক্য আছে কি? নাই।


যে উপদেষ্টারা তার এপিএস এর দুর্নীতি বিষয়ে জ্ঞাত থাকেন না, দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন; তারা নৈতিকভাবেই আর উপদেষ্টা হিসাবে থাকতে পারেন না। তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে।


তারা ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করেছিলেন গুম করার জন্য! স্বাভাবিক মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছিলেন! মনে আছে কি সেই কক্সবাজারের কমিশনার একরামুল হত্যাকান্ডের কথা!


এনসিপির নেতা তানভীরের বিষয়ে, গত সেপ্টেম্বর মাসে অভিযোগ উত্থাপন হয়। তখন তিনি বলেন,‘বিগত আন্দোলনে আমাদের ভূমিকা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।


প্রশাসনের কোথায় কাকে নিয়োগ দেওয়া হয়,তা দেখার কিংবা জানার অধিকার আমাদের আছে। এ কারণেই এখানে আসতে হয়।’(১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪- সমকাল)।


তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এনসিপি’র সাত মাস সময় লেগেছে। কিন্তু কেন? কারণ তাঁরা সকলেই গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছে।


কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট কাহাকে বলে ও কত প্রকার সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে দেখলেই বোঝা যাবে! উনি ইতিমধ্যেই সেটা বুঝিয়ে ছেড়েছেন।


পিএসপি লাইসেন্স পেয়েছে গ্রামীণ টেলিকম। রবি, বাংলালিংকের মতো একাধিক প্রতিষ্ঠানের পিএসপি লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন দীর্ঘদিন ফাইলবন্দি হয়ে আছে। (২৯ এপ্রিল ২০২৫-ডেইলি স্টার)।


গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস নামে জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স নিয়েছে। অন্তবর্তী সরকারের সময়ে দেওয়া একমাত্র লাইসেন্স। (২০ মার্চ ২০২৫-কালবেলা)।


গ্রামীণ ইউনিভার্সিটির অনুমোদন লাভ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর সদস্য হিসেবে আছেন প্রধান উপদেষ্টার ছোটো ভাই মুহাম্মদ ইব্রাহিম এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ। (২৯ এপ্রিল ২০২৫-কালেরকন্ঠ)।


সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা করা হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক নূরজাহান বেগমকে।


ইউনুস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক  লামিয়া মোর্শেদকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।


নিজের ভাইয়ের ছেলে অপূর্ব জাহাঙ্গীরকে গত বছরের ১৩ আগস্ট উপপ্রেস সচিব পদে নিয়োগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। যিনি আবার গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতাহীন।


গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা ২৫% থেকে কমিয়ে ১০% আনা হয়েছে। গ্রামীণ কল্যাণের ৬৬৬ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছে।


শেখ হাসিনার বন্দোবস্ত আর এখনকার বন্দোবস্তের পার্থক্যটা কেউ যদি আমাকে বুঝিয়ে দেন তাহলে বাধিত থাকবো।


তাহলে নতুন বন্দোবস্ত কী? “আপনাদের নারী বিষয়ক কমিশনের উত্থাপিত প্রস্তাবে বাংলাদেশের আলেম সমাজ স্তম্ভিত।


ফ্যাসিবাদের আমলে চরম বিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারও কোনো দিন এত ভয়ংকর প্রস্তাবনা জাতির সামনে উপস্থান করার দুঃসাহস দেখায়নি।”

“এই সংবিধান সংস্কারের নামে মসুলমানদের একত্ববাদী বাংলাদেশে সংবিধানে বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার পাঁয়তারা করছেন। এ দেশের মানুষ বহুত্ববাদ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নয়।! দেশে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ফিরতে দেওয়া হবে না”-মামুনুল হক ( ২৭ এপ্রিল ২০২৫-কালবেলা)! এটাই তাদের নয়া বন্দোবস্ত!


আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কী ছিলো ? ধর্মনিরেপেক্ষতা! সেসবই তারা আজকে অস্বীকার করছে ৫৪ বছর পর! এটাই নয়া বন্দোবস্ত !

এই নয়া বন্দোবস্তকে আমরা অস্বীকার করি!শুনেন, বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষের মুক্তি ব্যতীত মুক্তি অর্জন সম্ভব না! এই ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিতভাবেই করবো!



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)