
সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » ঢাবি শিক্ষার্থীদের ‘জাতিসংঘ বিরোধী’ আল্টিমেটাম-আদর্শিক প্রতিবাদ না কি রাজনৈতিক প্রক্সি?
ঢাবি শিক্ষার্থীদের ‘জাতিসংঘ বিরোধী’ আল্টিমেটাম-আদর্শিক প্রতিবাদ না কি রাজনৈতিক প্রক্সি?
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: অন্তর্বর্তী সরকার, মানবাধিকার, ও আন্তর্জাতিক চাপ
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সম্প্রতি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা, গুম-খুন, এবং নির্বাচনী অনিয়ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ঢাবি শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এমন প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে সরকারপন্থী শক্তির প্রতিক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
আন্দোলনের বক্তব্যে “গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা”, “জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি” ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বয়ানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।
বিশ্লেষণ: আদর্শিক উত্তেজনা না কি রাজনৈতিক প্রক্সি?
এই আন্দোলনকে তিনটি স্তরে বিশ্লেষণ করা যায়:
স্তর বৈশিষ্ট্য প্রভাব
ধর্মীয় আকিদা, ইমান, সমকামী ইমাম ইত্যাদি ধর্মীয় রক্ষণশীল ছাত্রদের সংহতি
জাতীয়তাবাদী বিদেশি হস্তক্ষেপ বিরোধিতা সরকারপন্থী বয়ানকে শক্তিশালী করা
রাজনৈতিক ছাত্র অধিকার পরিষদের সংশ্লিষ্টতা বিরোধী মত দমন ও আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা
ঢাবি শিক্ষার্থীদের ব্যানারে জাতিসংঘ কার্যালয় বাতিলের দাবিতে দেওয়া আল্টিমেটাম একটি বহুমাত্রিক রাজনৈতিক ও আদর্শিক ঘটনাপ্রবাহ। এটি শুধু ছাত্রদের ক্ষোভ নয়, বরং বৃহত্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিফলন। প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হবে এই আন্দোলনের প্রকৃত উৎস, উদ্দেশ্য ও প্রভাব নিরীক্ষা করে সুষ্ঠু সমাধান খোঁজা।
চাইলে আমি এই প্রতিবেদনটি ইংরেজিতে অনুবাদ, সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং বা সম্পাদকীয় আকারে রূপান্তর করে দিতে পারি।
সম্পাদকীয়: ঢাবি শিক্ষার্থীদের ‘জাতিসংঘ বিরোধী’ আল্টিমেটাম-আদর্শিক প্রতিবাদ না কি রাজনৈতিক প্রক্সি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বাতিলের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম এক নতুন রাজনৈতিক ও আদর্শিক উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। “বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীবৃন্দ” নামে পরিচিত এই প্ল্যাটফর্মের ভাষ্য, নেতৃত্ব এবং সময়চয়ন-সবকিছুই প্রশ্নের জন্ম দেয়: এটি কি সত্যিই শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, না কি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রক্সির অংশ?
প্রথমত, আন্দোলনের ভাষ্য ছিল স্পষ্টভাবে ধর্মীয় ও রক্ষণশীল। “ইমান হারিয়ে বেইমান করা”, “সমকামী ইমাম”, “পতিতাবৃত্তি বৈধতা”-এই শব্দবন্ধগুলো জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যক্রমকে ধর্মবিরোধী ও পশ্চিমা আগ্রাসনের প্রতীক হিসেবে চিত্রিত করে। এটি শুধু একটি প্রশাসনিক দাবি নয়, বরং একটি আদর্শিক অবস্থান, যা ধর্মীয় মূল্যবোধের নামে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
দ্বিতীয়ত, আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা-যেমন জিয়াউল হক ও ছাত্র অধিকার পরিষদের রাকিবুল ইসলাম-পূর্বে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। “বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীবৃন্দ” নামটি যতই নিরপেক্ষ মনে হোক, বাস্তবে এটি একটি সংগঠিত, আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ-বিসিএলের নেতাদের উপস্থিতি ইঙ্গিত করে যে মূলধারার ছাত্রসংগঠনও এই উত্তেজনাকে পর্যবেক্ষণ করছে, হয়তো নীরব সমর্থন বা কৌশলগত দূরত্ব বজায় রেখে।
তৃতীয়ত, আন্দোলনের সময়চয়ন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যখন জাতিসংঘ বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থা, গুম-খুন, এবং নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তখন ঢাবি শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এমন প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে সরকারপন্থী শক্তির প্রতিক্রিয়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে। “বিদেশি প্রভুদের পদানত”, “নতুন প্রজন্মের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি”-এই জাতীয়তাবাদী ভাষ্য রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বয়ানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন ওঠে: বিশ্ববিদ্যালয় কি আদর্শিক মতপ্রকাশের মুক্ত মঞ্চ, না কি রাজনৈতিক প্রক্সি যুদ্ধের ক্ষেত্রভূমি? শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ অবশ্যই গণতান্ত্রিক অধিকার, কিন্তু যখন সেই প্রতিবাদ ধর্মীয় উগ্রতা, বিদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দ্বারা চালিত হয়, তখন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে এই আন্দোলনের প্রকৃত উৎস, ভাষ্য ও উদ্দেশ্য নিরীক্ষা করে একটি স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া। জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ যদি সত্যিই স্বতঃস্ফূর্ত হয়, তবে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য। কিন্তু যদি এটি রাজনৈতিক প্রক্সি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য হুমকিস্বরূপ।