
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » » কৃষি মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে দপ্তরে অস্থিরতা
কৃষি মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে দপ্তরে অস্থিরতা
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দীর্ঘদিন পরও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর-অধিদপ্তরে রয়ে গেছে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাব। এ অবস্থায় কৃষিবিষয়ক কর্মকা-ে দপ্তরগুলোতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে কর্মকর্তারা জানান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখনও আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ফলে সব জায়গায় এখনও তাদের প্রভাব রয়ে গেছে। সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে সরকার তৎকালীন সচিব ওয়াহিদা আক্তারকে সরিয়ে মধ্য আগস্টে সচিব নিয়োগ দেয় ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানকে। কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি সচিব হওয়ার পর থেকে দপ্তরগুলোয় অচলাবস্থা আরও বেড়েছে। তবে সচিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। যোগ্য লোকদের যোগ্য জায়গায় নিয়োগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বড় সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। কৃষি মন্ত্রণালয়ে সচিব মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান যোগদানের প্রায় আট মাস পার হতে চললেও এখনও পর্যন্ত একজন ‘মহাপরিচালক’ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের পরিচালক মো. ছাইফুল আলমকে মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত রাখা
হয়েছে। এ কর্মকর্তা তার উইংয়ের কাজের পাশাপাশি মহাপরিচালকের বাড়তি দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
ডিএইর কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে, তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিচালনার জন্য একজন মহাপরিচালক না থাকাটা একটা বড় সংকট। যে কারণে সংস্থাটির পরিচালিত ৩১টি প্রকল্পের মধ্যে আট মাসে মাত্র ১০ জন্য ‘প্রকল্প পরিচালক’ পরিবর্তন করা হয়েছে; বাকিগুলোয় এখনও আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগীরাই রয়েছেন। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিচালিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বড় প্রকল্প পার্টনারের গড় বাস্তবায়ন অগ্রগতি মন্ত্রণালয়ের গড় অগ্রগতির চেয়ে অনেক কম। কারণ প্রকল্পটির সাবেক পরিচালক মিজানুর রহমান প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিকভাবে করতে না পারলেও তাকে প্রকল্প পরিচালক পদে বহাল রেখেছিলেন সাবেক সচিব। পরে নানা অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
একই অবস্থা দেশের সবচেয়ে বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি)। যেখানে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানকে মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; সেটিও ‘রুটিন দায়িত্ব’। প্রতিষ্ঠানটির বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প পরিচালক যারা আছেন, তাদের সবাই আওয়ামী সময়ের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত।
আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত ড. মো. আবুল কালাম আজাদকে।
এ ছাড়া পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে রুটিন দায়িত্বে মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. নার্গীস আক্তারকে। এ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার আগে মহাপরিচালক পদে যাওয়ার যোগ্য চার কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে। যে কারণে এখানেও অস্থিরতা রয়েছে।
পদায়ন নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সাবেক কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সময়ের ব্যাপক সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত ড. সালাহউদ্দিন আহমেদকে রুটিন দায়িত্বেই মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কর্মকর্তা আবার প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের পরিচালক হিসেবে রুটিন দায়িত্বে এনেছেন ড. মো আবদুল হাকিমকে। এ পদের জন্য যোগ্য তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটিতে থাকলেও চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা আবদুল হাকিমকে প্রশাসন উইংয়ের পরিচালক পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই রকম অবস্থা কৃষির ১৪টি সংস্থার বেশিরভাগেই। যে কারণে বিভিন্ন বিভাগের কাজেও কর্মকর্তাদের মনোযোগ কম। যার প্রভাব সার্বিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সমস্যা দূর করতে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, বরং কোনো কোনো সংস্থায় আওয়ামীপন্থিদের পদায়ন করে আরও জটিলতা বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। অথচ এসব জটিলতা নিরসনেই কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব গত আগস্টের মাঝামাঝিতে নিয়োগের পর থেকে টানা শতাধিক মিটিং করেছেন। কিন্তু তার দৃশ্যমান কোনো ফল নেই। জানা গেছে, কৃষি সচিব বেশিরভাগ প্রকল্পে আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগীদের ওপর এখনও ভরসা করছেন।
সম্প্রতি বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদকে ডিএইর প্রশাসন উইং থেকে মেহেরপুরে বদলি করে দেওয়া হয়। সেখানে অবশ্য বিএনপিপন্থি আরেক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়ে সেটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও ডিএইতে দুই দিনব্যাপী মানববন্ধনসহ ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পরে অবশ্য মাহবুব রশীদ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এবং কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে এর প্রতিকার চেয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান ছিলেন ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী’ উদযাপন অনুষ্ঠান সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের একটি বিশেষ কমিটির সদস্য। তখন থেকেই এ আমলার ব্যাপক আওয়ামী-ঘনিষ্ঠতা সবার সামনে আসে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
এসব বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দপ্তরগুলোতে পূর্ণাঙ্গ মহাপরিচালক নিয়োগ করার মতো যোগ্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। একটা নির্দিষ্ট মেয়াদে প