
মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » » আর কত প্রাণ গেলে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ সুরক্ষার আইন হবে
আর কত প্রাণ গেলে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ সুরক্ষার আইন হবে
“”কলমের কালি শুকাচ্ছে রক্তে-আর কত প্রাণ গেলে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ ও সুরক্ষার আইন হবে”"
পক্ষকাল ডেক্সঃ
দেশে চরম ভাবে সাংবাদিক নির্যাতন বেড়েছে। মব তৈরী করে সাংবাদিকদের হয়রানী করা হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,ব্যবসায়ী,প্রশাসনের কিছু দুষ্কৃতিকারীরা, অহেতুক ভাবে সাংবাদিকদের হয়রানি করছে ভূক্তভোগী সাংবাদিকদের দাবী। প্রতিদিন মামলা, হামলাসহ খুনের শিকার হতে হচ্ছে নির্ভীক সাংবাদিকদের। অথচ কোন বিচার হচ্ছে না বা সাংবাদিকদের সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা করছে না করকার। গত
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে যদিও স্বাধীন সাংবাদিকতার হার কেয়ক গুন বেড়েছে। কিন্ত মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানী ও গ্রেফতার কমেনি। অনেকে বলছে এগুলো বিগত সরকারের ফটোকপি । বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, যার মধ্যে শারীরিক হামলা, মামলা, হুমকি, হয়রানি এবং হত্যার মতো ঘটনাও রয়েছে। বিশেষ করে, বিগত সরকারের সময়ে নেতা কর্মীদের সাথের ছবি দিয়ে মব তৈরী করে হয়রানী ও নানাবিধ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এবং প্রতিদিন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে সাংবাদিকরা বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছেন। প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরণের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে, সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ২৭৪টি হামলার ঘটনায় ১২৬ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এছাড়া,গত এক বছরে দেশে ৪৯৬ সাংবাদিক হয়রানির শিকার এমন তথ্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির। তারা বলছে ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে গত জুলাইয়ের মধ্যে দেশে ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সাত মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বাধা ও হামলায় আহত হয়েছেন ২৭৪ জন সাংবাদিক। ১৬৫টি ঘটনায় ৯৫ জন সাংবাদিক আহত হয়েছিলেন। এবং খুন হয়েছে প্রায় ৯ জন। সাংবাদিক নির্যাতনের এই ক্রমবর্ধমান চিত্র নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এর ফলে, সাংবাদিকদের কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং সত্য প্রকাশের পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে, যা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনুসন্ধানে জানাযায়,সত্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে পদে পদে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে সাংবাদিকদের। কথায় কথায় সন্ত্রাসীরা তাঁদের দিচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। এমনকি পুলিশ সদস্য বা অন্য সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা বাড়ছে , কোন কোন ক্ষেত্রে সাংবাদিক কে তলবও করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের কথা না মানলে অনেক ক্ষেত্রে নৃশংসভাবে হত্যাও করা হচ্ছে সাংবাদিকদের।
পুলিশ ও স্বজনদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১০ অক্টোবর দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান তামিমকে বাসায় ঢুকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১২ অক্টোবর ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় বাড়ির সামনে তারাকান্দা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি স্বপন কুমার ভদ্রকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ২৭ আগস্ট রাতে হাতিরঝিল থেকে পুলিশ ও স্থানীয়রা উদ্ধার করে সাংবাদিক রাহনুমা সারাহর লাশ। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পৌর মেয়র, ইটভাটার মালিক, অজ্ঞাত মোবাইল থেকে ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের। এ ছাড়া ইউপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থী এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছ থেকে সাংবাদিকরা হুমকি পাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসীদের নির্যাতন, অপহরণ ও বোমা হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কিছু সদস্যের মাধ্যমেও নির্যাতন ও হুমকির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। আমি মনে করি,ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি আজ সাংবাদিকতা বা গোটা মিডিয়া জগত। এই পেশায় যুক্ত মানুষদের কাজ সত্য প্রকাশ, জনস্বার্থে তথ্য তুলে ধরা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা। কিন্তু সেই সত্য বক্তাদের কণ্ঠ যখন রক্তে রঞ্জিত হয়, তখন গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার নৈতিক ভিত্তিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ মানুষও এখন নিরাপদ নন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে খুন, চাঁদা না দিলে গুম, অনলাইনে মতামত দিলে মামলা,বিগত সরকারের নেতৃবৃন্দের সাথে ছবি দিয়ে হয়রানী-এসব যেন নতুন স্বাভাবিকতা। একজন সাংবাদিক সকল দলের সভা সমবেশে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে অনেক নেতা কর্মীর সাথে ছবি থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্ত অনেক রাজনৈতিক নেতা,কর্মী ও কিছু স্বার্থান্বেষী সাংবাদিক নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অপর সাংবাদিককে রাতারাতি রাজনৈতিক দলের নেতা বানিয়ে মব সৃৃষ্টি করে হয়রানী করছে। এক্ষেত্রে প্রশাসন ও যাচাই বাছায় না করে আইনী পদক্ষেপ নিয়ে গ্রেফতার করতে দ্বিধাবোধ করছে না। যে কারনে দেশের আইনি কাঠামো, প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া এবং সামাজিক ভূমিকা-সবই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার প্রশ্ন সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দায়-দায়ীত্ব কার? অবশ্যই সরকারের,তাহলে কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এ সরকার তো সকলের মতামতের ভিত্তিতে তৈরী হয়েছে। তাহলে সরকারের ভয় কোথায়? বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাষ্ট্রের দায়িত্ব অবহেলা করা নয়। প্রশ্ন শুধু একটি-এই দেশে সত্য বলা কি পাপ? আর কত রক্ত ঝরলে আমরা নিরাপত্তার আশ্বাস পাবো? এ কথাগুলি শুধু আমার নয় সর্বসাধারনের। হয়তো এই প্রতিবেদন লেখায় কারো আতে ঘা লেগে যাওয়ায় আমাকেও এই পরিস্থিতির স্বীকার হতে পারে। তবুও দেশের প্রয়োজনে সাংবাদিকতার প্রয়োজনে অতিবাস্তব কথা গুলি লিখতে হচ্ছে। সম্পতি গাজীপুরের সাংবাদিক হত্যাকান্ডটি যেন এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই নির্যাতনের ইতিহাসে। বিকেলে লাইভে এসে চাঁদাবাজদের নাম প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এ সংবাদ পত্রিকায় ছাপার আগে রাতেই তাঁকে প্রকাশ্রে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একটি বার্তা-সাংবাদিকরা যেন আর সাহস না দেখায়। এমন কৌশলে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, যেন সবাই ভয় পায়। এই ঘটনাটি স্পষ্ট করে দেয়, অপরাধীরা কতোটা সংগঠিত এবং আত্মবিশ্বাসী যে তারা প্রকাশ্য প্রতিবাদের জবাবে সরাসরি হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে। এমটি ঘটছে সারাদেশে কিন্ত ভয়ে কেহ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এটি আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা। যদিও সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় কিছু অপরাধীদের আটক করলেও সংঘবদ্ধ চক্রের অধিকাংশরাই রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে । আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, অনেক ক্ষেত্রে এমন হত্যাকান্ড ঘটার পরও অপরাধীরা ধরা পড়ে না, বা ধরা পড়লেও মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে, যেমন সাগর রুনির হত্যার ঘটনা তো সকলেই জানেন। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে -অপরাধীর বিরুদ্ধে মুখ খুললে হয়রানী বা প্রাণটাও চলে যেতে পারে। এমন সব ঘটনায় শুধু সাংবাদিকরাই নয়, পুরো সমাজ আতঙ্কিত। এই ধরণের ঘটনায় কেবল একজন ব্যক্তি নিহত হন না, বরং সমাজের প্রতিবাদী কণ্ঠগুলো স্তব্ধ হয়ে যায়। শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ মানুষও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এমন অভিযোগ কমনয়। চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ী খুন, রাজনৈতিক বিরোধে গৃহবধূ খুন, ছিনতাইয়ে পথচারী নিহত-এসব খবর এখন প্রতিদিনকার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে মানুষ ভয় পায় পুলিশে যেতে, মামলা করতে বা প্রতিবাদ জানাতে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সাধারণ নাগরিক হত্যার সংখ্যা প্রায় ২৭০০ ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যা শুধু পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি নামের পেছনে আছে একটি পরিবার, একটি জীবনের স্বপ্নভঙ্গ। এর পেছনে মূলত কাজ করছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সন্ত্রাস, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং বিচারহীনতা। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ নিরুপায়। তারা নিজের নিরাপত্তার জন্য নিজেই সচেষ্ট হতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে সমাজে আস্থা ও মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের যে ভরসা থাকা উচিত, তা দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। আর যখন নাগরিক ভরসা হারায়, তখন রাষ্ট্র হয়ে পড়ে নৈতিক দেউলিয়া।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, হুমকি ও অন্যায় আচরণের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, এটা ধরনের ঘটনা গোটা সরকারী বে সরকারী প্রতিষ্ঠানে ঘটছে। যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি বলেও সতর্ক মনে করি। বর্তমানে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর চাপ ও হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার, সংবাদপত্র বন্ধ, বিজ্ঞাপন বন্ধের হুমকি এবং সাইবার হয়রানির ঘটনা ঘটছে। এতে প্রমাণ হয়, সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে এখনো যথেষ্ট সংবেদনশীল নয় বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা। আমার অনুরোধ থাকবে সরকারের প্রতি , বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম বন্ধ, সংখ্যালঘু ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত,সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং প্রতিটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক সাংবাদিক বলেন, আমরা হয়রানির স্বীকার হচ্ছি প্রতিনিয়ত। সাংবাদিক হয়ে আমারা বিগত সরকারগুলির বা রাজনৈতিক অনেক প্রোগ্রামে গিয়েছি, হয়তো মনের অজান্তে অনেকের সাথে ছবি তুলেছি। কিন্ত এখন সেই সব ছবি, আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের কোন কমিটিতে আমাদের নাম নেই অথচ প্রায় হুমকী আসে যে কোন সময়, আপনি গ্রেফতার হতে পারেন। বর্তমানে রয়েছি চরম বিপাকে। আর এক সাংবাদিক বলেন,আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম তবুও আমরা হয়রানির স্বীকার হয়েছি নানা ভাবে ।এ পরিস্থিতিতে সরকারের দায়বদ্ধতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। প্রতিটি সাংবাদিক হত্যার পর সরকার শোকবার্তা দেয়, তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়। কিন্তু এগুলো যেন এক ধরনের ‘রুটিন প্রক্রিয়া’, যার ফলাফল প্রায় শূন্য। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দেয় না, দিলেও তা প্রকাশ পায় না। অপরাধী ধরা পড়লেও প্রভাবশালী হলে জামিন পেয়ে মুক্ত হয়ে যায়, আবার ক্ষমতার ছায়ায় ফিরে আসে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই এখানে মূল সমস্যা। শাসক দল মনে করে-প্রভাবশালী অপরাধীর বিচার করলে রাজনৈতিক সমীকরণ নষ্ট হতে পারে। ফলে তদন্ত শুরু হয় ঢাকঢোল পিটিয়ে, কিন্তু শেষ হয় নীরবে। এই চিত্র শুধু সাংবাদিকদের নয়, সাধারণ নাগরিকদের আস্থাকেও ভেঙে দিচ্ছে। মানুষ বুঝে যাচ্ছে-রাষ্ট্র তাদের রক্ষা করবে না, বরং হয়তো নীরবে অপরাধীদের পক্ষ নেবে। আজ চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করলেই হত্যা হতে পারে, কাল রাস্তার দুর্নীতি তুলে ধরলেই মৃত্যু আসতে পারে-এই ভয় সমাজে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে মানুষ ধীরে ধীরে নীরব হয়ে যাচ্ছে। এই নীরবতা একসময় স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হয়, যে টা বিগত সরকার হাঁড়ে হাঁড়ে টেরপাচ্ছেন।
যেখানে মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস হারিয়ে ফেলে। এটি একটি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ। কারণ ভয় ও নীরবতা মিলে সমাজে এক ধরনের অন্ধকারের সংস্কৃতি তৈরি করে, যেখানে অপরাধীই হয়ে ওঠে নিয়ম প্রণেতা। এই সংস্কৃতি যতদিন চলবে, ততদিন অত্যাচারীরা আরও শক্তিশালী হবে, আর সাধারণ মানুষ তাদের দাসে পরিণত হবে। দেশে বিভক্ত গণমাধ্যম ও দুর্বল প্রতিবাদ সাংবাদিক নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারন। বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন রাজনৈতিক বিভাজনে আক্রান্ত। কোনো সাংবাদিক নিহত হলে সব মাধ্যম একজোট হয়ে প্রতিবাদ করার বদলে কেউ কেউ দলীয় স্বার্থ দেখে নীরব থাকে। এতে সাংবাদিক সমাজের ঐক্য নষ্ট হয়, প্রতিবাদের শক্তি ক্ষয় হয়ে যায়। একটি স্বাধীন গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো ঐক্য। সত্য কথা বলতে বর্তমানে সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য নেই বললে চলে। এক সাংবাদিক অপর সাংবাদিকের শত্রু হিসাবে কাজ করে থাকে। এক মিডিয়া অপর মিডিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রুপ নিচ্ছে। ফলে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আমি মনে করি সাংবাদিকদের একটি নিদিষ্ট নিয়মে আনতে হবে। এ ছাড়া সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, যাতে সাংবাদিকের নিরাপত্তা, বেতন, ক্ষতিপূরণ, এবং হুমকির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বাধ্যতামূলক হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতনের মামলাগুলো দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় এনে ৬ মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা। তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। ডিএসএ বা অন্য কোনো আইনের অপব্যবহার রোধ করে সাংবাদিকদের মুক্তভাবে কাজের সুযোগ দেওয়া। রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন করতে হবে। ক্ষমতাসীন দলকে প্রমাণ করতে হবে-অপরাধী যেই হোক, বিচার হবে। প্রতিচি ঘটনায় সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তার জন্য একক মঞ্চ তৈরি করা এবং প্রতিটি ঘটনার শক্ত প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি ও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা, যাতে রাষ্ট্র বাধ্য হয় ব্যবস্থা নিতে।