শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

Daily Pokkhokal
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ব্রেকিং নিউজ | সম্পাদক বলছি » বাংলাদেশের পানির নিচে লুকিয়ে থাকা সম্পদ - ভবিষ্যতের সম্ভাবনা না কি নতুন উপনিবেশের ফাঁদ
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ব্রেকিং নিউজ | সম্পাদক বলছি » বাংলাদেশের পানির নিচে লুকিয়ে থাকা সম্পদ - ভবিষ্যতের সম্ভাবনা না কি নতুন উপনিবেশের ফাঁদ
৬৭ বার পঠিত
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বাংলাদেশের পানির নিচে লুকিয়ে থাকা সম্পদ - ভবিষ্যতের সম্ভাবনা না কি নতুন উপনিবেশের ফাঁদ

---
শফিকুল ইসলাম কাজল

২৭ এপ্রিল ২০২৫ :বাংলাদেশের উপকূলীয় জলসীমায় সম্ভাব্য রেয়ার আর্থ মিনারেলস এবং উচ্চমূল্যের খনিজ পদার্থের সন্ধান বিশ্বের রাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান ও স্যাটেলাইট বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে উঠে আসছে, বঙ্গোপসাগরের গভীরে মজুত আছে লিথিয়াম, কোল্টান, রেয়ার আর্থ উপাদান - যা আগামী শতাব্দীর শিল্প-বিপ্লবের জ্বালানি।

এ আবিষ্কার বাংলাদেশের জন্য একদিকে অভাবনীয় সম্ভাবনার দ্বার খুললেও, অন্যদিকে ডেকে আনতে পারে অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ ও নতুন ধরনের ঔপনিবেশিক চাপ।
কেন এই আবিষ্কার এত গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্ববাজারে এখন লিথিয়াম ও রেয়ার আর্থ মিনারেলসের চাহিদা আকাশচুম্বী।
ইলেকট্রিক গাড়ি, ব্যাটারি, সৌরবিদ্যুৎ, চিপ নির্মাণ - সবখানেই এই খনিজের ভূমিকা অপরিসীম। ফলে যেসব দেশে এই সম্পদ মজুত আছে, সেখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপও অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে এখন এক নতুন ‘রিসোর্স রেস’ শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের পরবর্তী কেন্দ্র হতে যাচ্ছে এসব দুর্লভ খনিজ। বাংলাদেশের ভূমিকা সেখানে কী হবে, এখন সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশের সামনে কি সুযোগ?
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি:
এই সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি কয়েক গুণ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দরজা খুলবে।
কৌশলগত গুরুত্ব:
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিশ্বশক্তিগুলোর সাথে আলোচনায় বাংলাদেশের দরকষাকষির শক্তি বাড়বে।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ: বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির মধ্যেও সুযোগ দেখবে। এতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের গতি আসতে পারে।
কিন্তু ঝুঁকি কোথায়?
নতুন ধরনের ঔপনিবেশিক চক্রান্ত*:
বিশ্ব ইতিহাস বলে, প্রাকৃতিক সম্পদ আবিষ্কারের সাথে সাথে পরাশক্তির হস্তক্ষেপ বেড়ে যায়। যদি বাংলাদেশ সচেতন না থাকে, তাহলে এই সম্পদ হতে পারে ভবিষ্যতের অভিশাপও।
রাজনৈতিক অস্থিরতা:
আন্তর্জাতিক চাপ, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও দলাদলি যদি বাড়ে, তাহলে সম্পদ রক্ষার বদলে তা ভাগাভাগির রাজনীতিতে শেষ হয়ে যেতে পারে।
পরিবেশগত বিপর্যয়*:
সমুদ্রের নিচের খনিজ আহরণ পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। সমুদ্রের বাস্তুসংস্থান ধ্বংস হলে দীর্ঘমেয়াদে তা দেশের জন্যই বিপদ হবে।
পরাশক্তির ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন* - সবাই এখন বাংলাদেশের দিকে নজর রাখছে।
চীন এরই মধ্যে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের মাধ্যমে এশিয়ার সমুদ্রপথে প্রভাব বিস্তার করেছে। ভারতও গভীর সমুদ্র সম্পদে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচিত হবে একটি নিরপেক্ষ এবং সুপরিকল্পিত কৌশল গ্রহণ করা - যাতে দেশীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখা যায়।

বাংলাদেশ আজ এক ঐতিহাসিক মোড়ে দাঁড়িয়ে।
এই সম্পদ যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে দেশের ভবিষ্যৎ বদলে যেতে পারে। আর যদি দুর্নীতি, বৈদেশিক চক্রান্ত ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফাঁদে পড়ে, তবে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
সময় এখন বাংলাদেশের। নিজের সম্পদ রক্ষা করে, নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতে গড়ার।
ভুল সিদ্ধান্ত আর সুযোগ হাতছাড়া - এ দুটোর কোনোটারই আর জায়গা নেই।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)