
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » মুজিবের শাসনামলে জাসদের ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল’।।
মুজিবের শাসনামলে জাসদের ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল’।।
আহমেদ ফজলুর রহমান মুরাদ
সাবেক ছাত্র নেতা।।
“শেখ মুজিবুর রহমানের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে জাসদের প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখে পোস্ট করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান। শনিবার দিনগত রাত একটার দিকে তিনি এ স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে জাসদের মতো এতো ত্যাগ আর কোনো দলকে শিকার করতে হয়নি। কিন্তু কোথায় আজ জাসদ? কেবল ভুল রাজনীতির কারণে এক সময়ের বিরাট সম্ভাবনার দলটি ক্ষয় হতে হতে প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে।”
উপরোক্ত স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান। তিনি জাসদের নেতাকর্মীদের প্রতি মমত্ববোধ থেকেই পোস্টটি করে থাকতে পারেন। যদিও জাসদের নেতাকর্মীদের হত্যার সংখ্যাটি জাসদের পক্ষ থেকে কোন সঠিক তালিকা করা সম্ভব হয়নি। আর সংখ্যাটি শুধু জাসদ নয় তখনকার সময়ের সকল বামপন্থী রাজনৈতিক দলসমূহের কর্মীদেরকেই নির্মম গণহত্যা করা হয়েছে।।
তবে জনাব মারুফ কামাল যদি ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমলে ৭ই নভেম্বরের সিপাহি জনতার গনঅভ্যুত্থানে বীর বিপ্লবী কর্নেল তাহেরসহ জাসদ গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার কতো হাজার নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে সেটাও উল্লেখ করতেন তাহলে জাসদের নেতাকর্মীদের প্রতি তার মমত্ববোধ আরও বেশি প্রকাশিত হতো। যে কর্নেল তাহের জেনারেল জিয়াউর রহমানের জীবন বিপন্ন হতে রক্ষা করেছিলেন তাকেও কিভাবে প্রহসনের বিচারের আওতায় ফাঁসিতে প্রাণ দিতে হয়েছিল সেটাও উল্লেখ করা সমীচীন ছিলো।।
জনাব মারুফ কামাল খান জাসদের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক আদর্শ ও ত্যাগের কথা স্মরণ করে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন এ কারণে তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি তিনি জাসদের রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন। কিন্তু কেন কিভাবে কাদের দ্বারা জাসদের রাজনীতি শেষ করে দেওয়া হয়েছে সেটা তিনি উল্লেখ করেননি। আমি মনে করছি দেশের নুতন প্রজন্মের অনেকেই জাসদের রাজনৈতিক ইতিহাস জানে না তাদের জ্ঞাতার্থে জনাব মারুফ কামাল খানের উচিত ছিলো ১৯৭২ সালে জাসদের সৃষ্টির পরে থেকে জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ও জেনারেল জিয়াউর রহমান তাদের শ্রেনীগত স্বার্থে জাসদের রাজনীতি ধ্বংস করতে কি নিষ্ঠুরতম নির্যাতন নিপীড়ন জাসদের নেতাকর্মীদের উপর চালিয়েছেন।
১৯৭২ -৭৫ জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দল আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনীর হাতে জাসদের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের জীবন বিপন্ন হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীদের কারাগারে বন্দী করা হয়েছে। রক্ষী বাহিনীর চরম নির্যাতনে হাজার হাজার নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব বরন করে জীবন অতিবাহিত করে চলেছে। একইভাবে জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জাসদের নেতাকর্মীদের জীবন বিপন্ন হয়েছে শতশত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর জাসদের নেতাকর্মীদের গড়ে তোলা সিপাহি জনতার বিপ্লবী গনঅভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান বিপন্ন জীবন ফিরে পেয়ে ক্ষমতাসীন হয়ে সিপাহি জনতার গনঅভ্যুত্থানে কারনে জাসদের নেতা কর্নেল তাহের কে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছেন। হাজার হাজার বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সদস্যদের বিনা বিচারে রাতের অন্ধকারে গুলি করে জীবন কেড়ে নিয়েছেন।জাসদের শীর্ষ নেতৃত্ব সিরাজুল আলম খান, মেজর জলিল আ স ম আব্দুর রব সহ প্রায় সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে জেলে আটক রেখেছেন।সারাদেশের কেন্দ্র থেকে উপজেলা কমিটির পদধারী নেতাদের সবাইকে বন্দী করে কারারুদ্ধ করে রেখেছিলেন।জিয়াউর রহমানের আমলে জাসদের প্রায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার নেতাকর্মীদের কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল।জেনারেল জিয়াউর রহমান আওয়াল সাহেব কে দিয়ে জাসদ বিভক্ত করেছেন।জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জেল থেকে মুক্ত করে দলে ভিড়েয়েছেন।
শেখ মুজিবের রক্ষী বাহিনীর মতো একইভাবে সেনা বাহিনী দিয়ে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করে পঙ্গু করে দিয়েছেন।আজও জাসদের নেতাকর্মীরা জাসদের রাজনীতি না করলেও প্রতি আমাবস্যা ও পুর্নিমায় হাড়ে হাড়ে ব্যাথয় স্মরণ করে তারা জাসদের রাজনীতি করতো।এটাই বাস্তবতা তবে জাসদের নেতাকর্মীদের দুর্ভাগ্য তারা যে শেখ মুজিবকে দেশের জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধু বানিয়েছিল আর যে জিয়াকে তার বিপন্ন জীবন ফিরিয়ে দিয়ে নুতন জীবন দান করেছিল তারা দুজনেই জাসদের নেতাকর্মীদের উপর সবচেয়ে নির্মম নিষ্ঠুরতম নির্যাতন নিপীড়ন করেছেন।।
এটাই ইতিহাস এটাই নির্মম নিষ্ঠুরতম সত্য কাহিনি।। তারপরও জাসদ টিকে আছে এবং থাকবে।। জনাব মারুফ কামাল খান আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি সাথে সাথে যুক্ত করছি ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।।