শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

Daily Pokkhokal
সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ব্রিকসে ইন্দো-চীন পুনর্মিলনের অলীক স্বপ্ন
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ব্রিকসে ইন্দো-চীন পুনর্মিলনের অলীক স্বপ্ন
২৯৬ বার পঠিত
সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ব্রিকসে ইন্দো-চীন পুনর্মিলনের অলীক স্বপ্ন

পক্ষকাল ডেস্কঃ
সদ্য সমাপ্ত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন অনেক দিক দিয়ে ছিল অর্থপূর্ণ। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দোকলামে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এশিয়ার দুই জায়ান্ট ভারত ও চীন তীব্র উত্তেজনার মধ্যে থাকার পর এই সম্মেলনেই তাদের মধ্যে সম্প্রীতি ক্রমাগতভাবে জোরালো হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। সম্মেলনের ‘সফলতা’ এবং এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি চূড়ান্ত বিবৃতির পর অনেকে, বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়ার কেউ কেউ, এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছে যে দুই দেশ ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যয়ে প্রবেশ’ করেছে।সত্যিই কি তা ঘটেছে? এই প্রশ্নটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করে। কারণ দুই দেশের মধ্যকার মতপার্থক্য সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞার চেয়ে অনেক গভীরে বিদ্যমান। আমাদের মনে রাখতে হবে, ভারত-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ নয়; এটা একইসাথে বাজারগুলোতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। আর এই প্রয়াস আগামী দিনগুলোকে প্রশমিত না হয়ে বরং তীব্র হওয়ার শঙ্কাই বেশি। এর অন্যতম কারণ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের চেষ্টা।

দ্বিপক্ষীয় দ্বন্দ্ব এতটাই গভীর যে, তাদের মধ্যে পুনর্মিলন সম্ভব নয়। উভয় দেশের সেনাবাহিনী দ্বিপক্ষীয় দ্বন্দ্বে নিয়োজিত এবং ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশ নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ার করে নিতে ব্যস্ত। আর ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, সেই আগস্টের শেষ দিনগুলোতে চীন তখন পশ্চিম ভারত মহাসাগরে তাজা গোলা দিয়ে সামরিক মহড়া সম্পন্ন করে। এর মাধ্যমে সে এই অঞ্চলে তার ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতির কথা জানান দেয়।

আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই মহড়াটি কেবল সাধারণ জলদস্যূবিরোধী বা সন্ত্রাসীবিরোধী তৎপরতা ছিল না। বরং এটা ছিল অনেক বেশি প্রচলিত সামরিক মহড়া। অজ্ঞাত ‘শত্রু নৌবাহিনীর’ জাহাজের দিকে নির্দেশিত। অধিকন্তু, ২০১৫ সালে চীনের প্রতিরক্ষা পেপারে যে নীতির কথা বলা হয়েছিল, সেটার বাস্তবায়নের অংশ বিশেষ। তাতে বলা হয়েছিল, চীনা নৌবাহিনী ধীরে ধীরে উপকূলীয় পানিসীমা থেকে দূর সমুদ্রে প্রতিরক্ষা কাজে নিয়োজিত হবে এবং সমন্বিত, বহুমুখী ও কার্যকর নৌযুদ্ধ কাঠামো গড়ে তুলবে।

আর এমন প্রেক্ষাপটে আফ্রিকা ও ল্যাতিন আমেরিকাতেও পর্যন্ত চীনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি দৃশ্যমান হওয়ার কারণ অতি সহজ : উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্ব এখন তার হাতে। আবার সামরিক মহড়া এবং জিবুতির মতো দেশে নৌঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে সে তার বাণিজ্যিক স্বার্থ সুরক্ষিত করা এবং সেইসাথে তার আঞ্চলিক ও অঞ্চল-বহির্ভূত প্রতিযোগীদের প্রতিও বার্তা দিচ্ছে।

ভারত যেভাবে চীনের বিআরই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং চীন-পাকিস্তান-অর্থনৈতিক করিডোরের দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করেছে, তাতে দ্বিপক্ষীয় দ্বন্দ্ব প্রকটভাবে দৃশ্যমান। ভারতের মতে, এসব প্রকল্প অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের ব্যাপক লঙ্ঘন ঘটাচ্ছে।

অন্যদিকে ভারতের রয়েছে নিজস্ব পরিকল্পনা এবং চীনের সাফল্য ম্লান করতে কিংবা ভবিষ্যতে যা করতে যাচ্ছে, তা ভ-ল করতে খুবই আগ্রহী। এই প্রেক্ষাপটে ভারত ও জাপান বিআরআইয়ের পাল্টা হিসেবে নিজেদের কানেকটিভিটি প্রকল্পের স্বপ্ন দেখছে। তারা আশা করছে তাদের এশিয়া-আফ্রিকা গ্রোথ করিডোর (এএজিসি) চীনকে প্রতিরোধ করতে পারবে।
চীনের বিআরআইয়ের ভারতীয় ‘জবাব’ হিসেবে প্রকল্পটি চীনের ওবিওআরের সাথে এখনো তুলনীয় নয়। কিন্তু তার পরও এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আফ্রিকার মতো যেসব অঞ্চলে চীনের বিপুল উপস্থিতি রয়েছে, সেখানে ভারত তার বাজার খোঁজার ব্যাপক উদ্যোগ নিচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারত-আফ্রিকা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য যেখানে বার্ষিক প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার, সেখানে চীন-আফ্রিকা বাণিজ্য ১৯০ বিলিয়ন ডলার। বিপুলভাবে এগিয়ে থেকে আফ্রিকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হলো চীন।
ভারত এখন এএজিসির মাধ্যমে জাপানের বাণিজ্যিক স্বার্থের সাথে একীভূত হয়ে ব্যবধান কমানোর আশা করছে। জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের ভারত সফরের অন্যতম লক্ষ্যই ছিল এটা। ধারণা করা হয়েছিল, জাপানি প্রধানমন্ত্রী এই খাতে ২০০ মিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দেবেন।

এএজিসি অনেকটাই ওয়াশিংটনের চীনা নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এশিয়ার ভেতরে ও বাইরে চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহার করার যে পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র, এটা তারই অংশবিশেষ। চীনও এই বড় খেলা সম্পর্কে সচেতন। আর যে কায়দায় বেইজিং সীমান্ত বিরোধ মেটালো তাতেও বোঝা যায় চীন-ভারত সম্পর্ক কখনোই উত্তেজনামুক্ত হবে না। বরং এতে দেখা যায়, দ্বিপক্ষীয় দ্বন্দ্ব বরং আরো গভীর হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দেশের সৈন্যরা মুখোমুখি অবস্থান ত্যাগ করেছে। কিন্তু চীনা সরকারি ভাষ্যে তাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ‘ছাড়’ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি। এর বদলে ‘নীরবতা’ পালন করেছে, যার অর্থ হলো চীন চায় ভারতীয় অবস্থানকে আগ্রাসী হিসেবে তুলে ধরতে এবং নিজেকে এই সঙ্ঘাতে জয়ী ঘোষণা করতে। তার মতে, ভারতই এই সঙ্ঘাতের সূচনা ঘটিয়েছে।

অর্থাৎ ব্রিকস সম্মেলন শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে দুই দেশের মধ্যে আপাত ‘শীতল’ আবহাওয়া আসলে সত্যিকারের শান্ত অবস্থা নয়।

এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, বেইজিংয়ের বিআরআই অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে ভারত এখনো উদ্বেগেই রয়ে গেছে। বিশেষ করে এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি এবং চীনের এই অঞ্চলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র পাকিস্তান। কেবল বিআরআই নিয়েই নয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যেও চীন অনেক এগিয়ে রয়েছে এবং সেটাও ভারতের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়। গত বছরই ভারতের বিপরীতে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ৪০ বিলিয়ন ডলার!

এর ফলে ভারতের কাছে সর্বোত্তম বিকল্প হলো চীনা বলয়ের তথা বিআরআইয়ের বাইরে তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক নানামুখী করা। আর ভারতের কাছে যত দিন এটা অগ্রাধিকার হিসেবে বহাল থাকবে (এই নীতি ও অগ্রাধিকার পরিবতনের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি), তত দিন উত্তেজনা হ্রাস পেয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর পথ গ্রহণ করবে না।
সালমান রাফি---



এ পাতার আরও খবর

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংকট: নীরব লজ্জা থেকে গর্জন তোলার এখনই সময় বাংলাদেশের মানবাধিকার সংকট: নীরব লজ্জা থেকে গর্জন তোলার এখনই সময়
গণতন্ত্রের মুখে তালা দেওয়ার অপচেষ্টা এন সি পি বা জোনাকি পুকার দলের হম্বিতম্বি গণতন্ত্রের মুখে তালা দেওয়ার অপচেষ্টা এন সি পি বা জোনাকি পুকার দলের হম্বিতম্বি
বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়-গণতন্ত্রের জন্য এক গুরুতর হুমকি বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়-গণতন্ত্রের জন্য এক গুরুতর হুমকি
বিশ্বের শীর্ষ ১০ গণতন্ত্রের দেশে কোথাও তরুনদের আলাদা কোন ভোট বুথ নাই বিশ্বের শীর্ষ ১০ গণতন্ত্রের দেশে কোথাও তরুনদের আলাদা কোন ভোট বুথ নাই
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতির নির্দেশ: উত্তেজনার নতুন পর্ব ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতির নির্দেশ: উত্তেজনার নতুন পর্ব
২০২৬ সাল থেকে ইউরো চালু করছে বুলগেরিয়া ২০২৬ সাল থেকে ইউরো চালু করছে বুলগেরিয়া
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিধান অসাংবিধানিক: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিধান অসাংবিধানিক: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন? হাইকোর্টের রায় ও গণতন্ত্রের নতুন সম্ভাবনা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন? হাইকোর্টের রায় ও গণতন্ত্রের নতুন সম্ভাবনা
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার রায়: গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ না কি রাজনৈতিক অস্বস্তি? তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার রায়: গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ না কি রাজনৈতিক অস্বস্তি?
শাহবাগে জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর, আহতদের ক্ষোভ শাহবাগে জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর, আহতদের ক্ষোভ

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)