
বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার রায়: গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ না কি রাজনৈতিক অস্বস্তি?
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার রায়: গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ না কি রাজনৈতিক অস্বস্তি?
মতামত | পক্ষকাল ডেস্ক ৮ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশের হাইকোর্ট সম্প্রতি যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে, তা নিছক একটি আইনি দলিল নয়-এটি একটি রাজনৈতিক ও নৈতিক বিবৃতি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোট প্রথা বিলুপ্তির যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, হাইকোর্ট তা সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেছে। এই রায় আমাদের রাষ্ট্রচিন্তা, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং জনগণের ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার: সংকট থেকে সমাধান
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কোনো তাত্ত্বিক বিলাসিতা ছিল না। এটি ছিল রাজনৈতিক বাস্তবতার নির্যাস। ১৯৯৬ সালে যখন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস চূড়ান্তে পৌঁছায়, তখনই এই ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত হয়। উদ্দেশ্য ছিল-নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন নিশ্চিত করা, যাতে সব দল সমান সুযোগ পায়।
এই ব্যবস্থার অধীনেই ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সংসদ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ব্যবস্থা বাতিল করে। সেই সিদ্ধান্তই আজ আদালতের কাঠগড়ায়।
আদালতের রায়: একটি নৈতিক পুনরুদ্ধার
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোট প্রথা বাতিল করে জনগণের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। সংবিধানের ৭ক, ৭খ, ২০, ২১ ও ৪৪(২) ধারা মূল কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আদালত গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করেছে, যা এক অর্থে জনগণের কণ্ঠস্বরকে পুনরায় স্বীকৃতি দেওয়া।
এই রায় শুধু আইনগত নয়, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো জনগণের আস্থা। সেই আস্থা যদি না থাকে, তাহলে নির্বাচন যতই নিয়ম মেনে হোক, তা গ্রহণযোগ্যতা হারায়।
গণভোট: জনগণের নীরব কণ্ঠস্বর
গণভোট প্রথা ছিল সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ, যা ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হয়। এটি ছিল জনগণের সরাসরি মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ এই প্রথা এক প্রকার নীরবে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। হাইকোর্ট সেই ভুল শুধরে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ
এই রায়ের পর প্রশ্ন উঠছে-তাহলে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার ফিরবে? বাস্তবতা হলো, আদালত শুধু অসাংবিধানিক অংশ বাতিল করেছে। এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে সংসদকে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সংলাপ ও সমঝোতার অভাব এই সিদ্ধান্তকে কঠিন করে তুলবে।
সমাধান কোথায়?
রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসতে হবে।
একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা গঠনে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক কাঠামো বা বিকল্প মডেল নিয়ে আলোচনা জরুরি।
জনগণের আস্থা ফেরাতে গণভোট প্রথা কার্যকর করা উচিত।
হাইকোর্টের এই রায় একটি সুযোগ-গণতন্ত্রকে নতুন করে গঠনের, আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠার, এবং জনগণের কণ্ঠস্বরকে সম্মান জানানোর। পক্ষকাল মনে করে, এই রায় শুধু আদালতের নয়-এটি জনগণের পক্ষ থেকে উচ্চারিত এক ন্যায়বিচারের দাবি। এখন সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বের-তারা কি এই বার্তা শুনবে?