
বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন? হাইকোর্টের রায় ও গণতন্ত্রের নতুন সম্ভাবনা
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন? হাইকোর্টের রায় ও গণতন্ত্রের নতুন সম্ভাবনা
মতামত |পক্ষকাল
বাংলাদেশের হাইকোর্ট সম্প্রতি যে রায় দিয়েছে, তা নিছক একটি আইনি সিদ্ধান্ত নয়-এটি একটি রাজনৈতিক ও নৈতিক বার্তা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোট প্রথা বাতিল করা হয়েছিল। হাইকোর্ট বলেছে, এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী। এই রায় আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
গণতন্ত্রের মানদণ্ডে তত্ত্বাবধায়ক সরকার
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী উদ্ভাবন। এটি কোনো আদর্শিক তত্ত্ব নয়, বরং বাস্তব রাজনৈতিক সংকট থেকে জন্ম নেওয়া একটি সমাধান। ১৯৯৬ সালে এই ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত হয়, যখন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস চরমে পৌঁছেছিল।
এই ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল-নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন নিশ্চিত করা, যাতে সব দল সমান সুযোগ পায়। বাস্তবে এটি বেশ কয়েকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়।
আদালতের রায়: একটি নৈতিক পুনরুদ্ধার
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোট প্রথা বাতিল করে জনগণের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এটি শুধু আইনগত নয়, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের আস্থা। সেই আস্থার জায়গা যদি না থাকে, তাহলে নির্বাচন যতই নিয়ম মেনে হোক, তা গ্রহণযোগ্যতা হারায়।
গণভোট: জনগণের সরাসরি কণ্ঠস্বর
গণভোট প্রথা ছিল একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক উপাদান। এটি জনগণকে সরাসরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দিত। অথচ এই প্রথা এক প্রকার নীরবে বাতিল করা হয়েছিল। হাইকোর্ট সেই ভুল শুধরে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ
এই রায়ের পর প্রশ্ন উঠছে-তাহলে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার ফিরবে? বাস্তবতা হলো, আদালত শুধু অসাংবিধানিক অংশ বাতিল করেছে। এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে সংসদকে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সংলাপ ও সমঝোতার অভাব এই সিদ্ধান্তকে কঠিন করে তুলবে।
সমাধান কোথায়?
রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসতে হবে।
একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা গঠনে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক কাঠামো বা বিকল্প মডেল নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
জনগণের আস্থা ফেরাতে গণভোট প্রথা পুনরায় কার্যকর করা উচিত।
হাইকোর্টের এই রায় একটি সুযোগ-গণতন্ত্রকে নতুন করে গঠনের, আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠার, এবং জনগণের কণ্ঠস্বরকে সম্মান জানানোর। প্রশ্ন হলো, আমরা কি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারব?