
বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিধান অসাংবিধানিক: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিধান অসাংবিধানিক: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়
বিশেষ প্রতিনিধি ৮ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং গণভোট প্রথা বিলুপ্তির যে বিধান যুক্ত হয়েছিল, তা সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এই ঐতিহাসিক রায়ের পূর্ণাঙ্গ ১৩৯ পৃষ্ঠার সংস্করণ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
কী বলেছে আদালত?
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে:
সংবিধানের ৭ক, ৭খ, ৪৪(২), ২০ ও ২১ ধারা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হলেও, এগুলো মূল সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গণভোট প্রথা, যা ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল, তা পঞ্চদশ সংশোধনীর ৪৭ ধারায় বাতিল করা হয়-এটি ছিল অসাংবিধানিক।
আদালত গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করেছে।
রায়ের পটভূমি
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক সংশোধনীটি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
পরদিন হাইকোর্ট রুল জারি করে এবং দীর্ঘ শুনানি শেষে এই রায় দেয়।
পঞ্চদশ সংশোধনী: কী ছিল?
২০১১ সালের ৩০ জুন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সংসদে পাস হয় পঞ্চদশ সংশোধনী আইন।
এতে ৫৪টি অনুচ্ছেদে সংযোজন, সংশোধন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়।
৩ জুলাই গেজেট প্রকাশিত হয়।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
রায়ে বলা হয়েছে, পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়নি। এতে থাকা অন্যান্য ধারাগুলোর বিষয়ে পরবর্তী জাতীয় সংসদ গণমত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিধান কেন অসাংবিধানিক? হাইকোর্টের রায়ের বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের হাইকোর্ট সম্প্রতি যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে, তা শুধু একটি আইনি সিদ্ধান্ত নয়-এটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও সাংবিধানিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে। এই রায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোট প্রথা বিলুপ্তির অংশটি।
কী ছিল পঞ্চদশ সংশোধনীতে?
২০১১ সালে পাস হওয়া এই সংশোধনীর মাধ্যমে:
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় (যা আগে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে কাজ করত)।
গণভোট প্রথা বিলুপ্ত করা হয় (যার মাধ্যমে জনগণের সরাসরি মতামত নেওয়ার সুযোগ ছিল)।
সংবিধানের ৭ক, ৭খ, ২০, ২১, ৪৪(২) ধারা যুক্ত হয়, যা রাষ্ট্রের চরিত্র ও নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত।
“মূল কাঠামো” বলতে কী বোঝায়?
হাইকোর্ট বলেছে, সংবিধানের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে-যেমন:
গণতন্ত্র
আইনের শাসন
জনগণের ক্ষমতার উৎস হওয়া
মৌলিক অধিকার
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে “মূল কাঠামো” বলা হয়। এগুলো পরিবর্তন করা যায় না, এমনকি সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েও নয়।
আদালতের যুক্তি কী?
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার উপায়। এটি বাতিল করে জনগণের আস্থার জায়গা নষ্ট করা হয়েছে।
গণভোট প্রথা ছিল জনগণের সরাসরি মত প্রকাশের একটি সাংবিধানিক অধিকার। এটি বাতিল করা জনগণের ক্ষমতা খর্ব করে।
এসব পরিবর্তন সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী, তাই আদালত এগুলো বাতিল করেছে।
আদালত কী বাতিল করেনি?
পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হয়নি।
যেসব ধারা মূল কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, সেগুলো বহাল রয়েছে।
ভবিষ্যতে সংসদ চাইলে গণমত নিয়ে অন্যান্য ধারাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
সংবিধানিক পরিভাষার ব্যাখ্যা
পরিভাষা অর্থ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা, যা ১৯৯৬ সালে সংবিধানে যুক্ত হয়
গণভোট জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি
মূল কাঠামো সংবিধানের অপরিবর্তনীয় মৌলিক বৈশিষ্ট্য
রুল জারি আদালতের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া
রিট সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে আদালতে দায়ের করা আবেদন