২০২৬ সাল থেকে ইউরো চালু করছে বুলগেরিয়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থমন্ত্রীদের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ইউরো মুদ্রা গ্রহণ করতে যাচ্ছে বুলগেরিয়া। এর মধ্য দিয়ে দেশটি ইউরোজোনের ২১তম সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল
প্রায় ৬৪ লাখ জনসংখ্যার দেশটি ২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়। এর প্রায় ১৯ বছর পর তারা নিজেদের জাতীয় মুদ্রা ‘লেভ’ পরিবর্তন করে ইউরো মুদ্রা গ্রহণ করছে। ইইউ অর্থমন্ত্রীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি ইউরোর বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ দশমিক ৯৫৫৩৩ বুলগেরিয়ান লেভ।
বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী রোসেন জেলিয়াজকোভ এই ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা সফল হয়েছি! এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে সম্ভব করার জন্য সব প্রতিষ্ঠান, সহযোগী এবং নাগরিকদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। নাগরিকদের স্বার্থে ইউরোতে একটি মসৃণ ও কার্যকর রূপান্তর নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতিবিষয়ক প্রধান ভালদিস ডোমব্রোভস্কিস বলেন, ‘ইউরো জোনে যোগদান কেবল মুদ্রা পরিবর্তনের বিষয় নয়, এটি বুলগেরিয়া ও তার নাগরিকদের জন্য ইউরোপের কেন্দ্রে একটি উজ্জ্বল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ। এই পদক্ষেপ নতুন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির দ্বার উন্মোচন করবে।’
গত মাসে ইউরোপীয় কমিশন নিশ্চিত করে যে, ইউরো গ্রহণের সব শর্তই পূরণ করেছে ইইউর সবচেয়ে দরিদ্র এই দেশটি। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বুলগেরিয়ার এই যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। দেশটিতে গত তিন বছরে সাতবার নির্বাচন হয়েছে, যার সর্বশেষটি হয় ২০২৪ সালের অক্টোবরে।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মূল্যবৃদ্ধি ও ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় বুলগেরিয়ার জনমত এখনও ইউরো গ্রহণ নিয়ে বিভক্ত। দেশটির প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভ এ বিষয়ে গণভোটের প্রস্তাব দিলেও সংসদ তা প্রত্যাখ্যান করে।
গত জুন মাস থেকে রাজধানী সোফিয়ায় ইউরো-বিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা ‘বুলগেরিয়ান লেভ রক্ষা করো’ দাবিতে প্রেসিডেন্সি ভবন ও জাতীয় ব্যাংকের সামনে শিবির স্থাপন করেছে। ডানপন্থী দলগুলো এই বিষয়টিকে ইউরোপ-বিরোধী প্রচারণায় ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, ইউরোর সমর্থকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বুলগেরিয়ার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে, পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে এবং রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হবে। ৪৩ বছর বয়সী সংগীতশিল্পী ভেসেলিন দিমিত্রভ বলেন, ‘ইউরো-বিরোধী এই বিক্ষোভগুলোকে ক্রেমলিনের প্ররোচনাপুষ্ট বলে মনে হচ্ছে। বর্তমানে রাজনৈতিক দিক থেকেও ইউরোর প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’
বুলগেরিয়া এর আগেও ইউরো চালুর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে ইইউ তখন অনুমোদন দেয়নি। সম্প্রতি দেশটির গড় মুদ্রাস্ফীতির হার দুই দশমিক সাত শতাংশে নেমে আসায় ইউরোজোনে যোগ দেওয়ার মানদণ্ড পূরণ হয়।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে ইউরো মুদ্রা চালু হওয়ার সময় ১২টি দেশ এর সদস্য ছিল। পরে ধাপে ধাপে আরও কয়েকটি দেশ এতে যোগ দেয়। দেশগুলো হলো-স্লোভেনিয়া (২০০৭), সাইপ্রাস ও মাল্টা (২০০৮), স্লোভাকিয়া (২০০৯), এস্তোনিয়া (২০১১), লাটভিয়া (২০১৪), লিথুয়ানিয়া (২০১৫) এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে ক্রোয়েশিয়া।