
বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » » “ঐকমত্যের পথে বাংলাদেশ: কমিশন উদ্যোগ ও রাজনৈতিক জবাবদিহির সমীকরণ”
“ঐকমত্যের পথে বাংলাদেশ: কমিশন উদ্যোগ ও রাজনৈতিক জবাবদিহির সমীকরণ”
সম্পাদকিয় বিশ্লেষণ “ঐকমত্যের পথে বাংলাদেশ: কমিশন উদ্যোগ ও রাজনৈতিক জবাবদিহির সমীকরণ”
সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান আলোচনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নারীর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এবং নাগরিক মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় দলগুলোর নীতিগত ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা যায়, সিদ্ধান্তের সারাংশ আজ বিকালের মধ্যে দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে এবং সম্পূর্ণ সিদ্ধান্তপত্র কালকের মধ্যে উপস্থাপন করা হবে। তবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কিত বিষয়গুলো এখনো আলোচনায় আসেনি। বিএনপি তাদের সুপারিশ স্পষ্টভাবে দিয়েছে, যা কমিশনের জবাবদিহিমূলক কাঠামোর দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সম্পাদকীয় বিশ্লেষণ
ঐকমত্য কমিশন: অংশগ্রহণমূলক সংলাপ নাকি সীমিত সমঝোতা? জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, বিশেষত যখন রাজনৈতিক বিভাজন এবং ভোটকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও দলগুলো কিছু মৌলিক বিষয়ে সম্মত হতে পেরেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো-এই ঐকমত্য কি প্রকৃত রাজনৈতিক সংস্কারকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছে, নাকি কেবলমাত্র একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির ভিত্তি তৈরি করছে?
নারী প্রতিনিধিত্বে প্রগতি, কিন্তু নির্ধারিত নীতির অভাব নারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলেও এখনো নীতিগত কাঠামো স্পষ্ট নয়। যদি কেবলমাত্র পরিমাণগত কোটা নির্ধারণ করা হয়, তবে তা কীভাবে গুণগত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে?
মৌলিক অধিকার ও সংবিধান সংশোধনের অঙ্গীকার এই বিষয়ে দলগুলোর ঐকমত্য আশাব্যঞ্জক। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কমিশন কি নিরপেক্ষ, জনমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণ করবে? কিংবা সরকারপন্থী দলগুলোর চাপ কি সিদ্ধান্তকে দিকভ্রষ্ট করবে?
বিএনপির সুপারিশ: দায়িত্বশীল বিরোধী ভূমিকায় সম্ভাবনা বিএনপির সুপারিশ তুলে ধরা একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। তবে এটাই যদি সর্বোচ্চ জবাবদিহিমূলক অংশ হয়ে থাকে, তাহলে অন্য দলগুলো কীভাবে তাদের অবস্থান তুলে ধরছে বা কিভাবে প্রস্তাবের ভাষা ও ধারা নির্ধারণ হচ্ছে-তা পরিষ্কার নয়।
রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা নিয়ে নীরবতা: রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা নাকি এড়ানোর কৌশল? রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ শাসনব্যবস্থার অন্যতম অনুষঙ্গ। এই বিষয়ে আলোচনার অভাব-যদিও এটি আলোচ্যসূচিতে ছিল না-একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে মনে হতে পারে।
মূল চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশসমূহ (Public Briefing format):
বিষয়ের নাম বর্তমান অবস্থা সুপারিশ
নারী প্রতিনিধিত্ব খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে গুণগত ও বৈচিত্র্যভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা
মৌলিক অধিকার নীতিগত ঐকমত্য সংসদীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আলোচনায় আসেনি আলোচনা সূচিতে অগ্রাধিকার দেয়া
বিএনপির সুপারিশ স্পষ্ট ও দায়িত্বশীল ভূমিকা অন্যান্য দলের অভিন্ন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
সিদ্ধান্তপত্র হস্তান্তর সময় আগামীকাল নির্ধারিত যথাসময়ে প্রকাশ করে গণপ্রতিক্রিয়ার সুযোগ দেওয়া
শেষ কথা: ঐকমত্য কমিশনের ভবিষ্যৎ গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করছে এর স্বচ্ছতা, সময়ানুবর্তিতা এবং জনসম্পৃক্ততায়। রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব কেবল প্রস্তাব দেয়া নয়, বরং প্রস্তাবনার গণতান্ত্রিক ভিত্তি ও জনচাহিদাকে যুক্ত করার বিষয়টিকেই এগিয়ে নিতে হবে। নতুবা এই ঐকমত্য কেবল বিচ্ছিন্ন সমঝোতার দলিল হয়ে থাকবে, যা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দৃঢ় করে না।
-