
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | রাজনীতি » বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে শেখ হাসিনা ও ইউনুস সরকার সার্বভৌমত্ব না কৌশলগত বন্দিত্ব? বিশ্লেষকদের নতুন প্রশ্ন
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে শেখ হাসিনা ও ইউনুস সরকার সার্বভৌমত্ব না কৌশলগত বন্দিত্ব? বিশ্লেষকদের নতুন প্রশ্ন
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে শেখ হাসিনা ও ইউনুস সরকার সার্বভৌমত্ব না কৌশলগত বন্দিত্ব? বিশ্লেষকদের নতুন প্রশ্ন
ঢাকা, ২৭ জুন ২০২৫: দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান আবারো উত্তপ্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি ভারত-ঘনিষ্ঠ নীতি ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রভাব-সংশ্লিষ্ট নীতিগুলো নিয়ে দেশ-বিদেশে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনা ও ভারতের সম্পর্ক ছিল কৌশলগত বন্ধুত্ব না কি একতরফা বন্দিত্ব-এই প্রশ্ন এখন আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।
“তিস্তা চুক্তি ঝুলে, সীমান্তে মৃত্যু-কী পেল বাংলাদেশ?”
২০০৯ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পরও বাংলাদেশ পায়নি বহু প্রতিশ্রুত তিস্তা চুক্তি। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রাণহানি ও বাণিজ্য ভারসাম্যের ঘাটতি-সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার ভারত-কেন্দ্রিক নীতি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে বলছেন “কৌশলগত আত্মসমর্পণ”। মুহাম্মদ ইউনুস ও ‘বিদেশি এজেন্ট’ বিতর্ক
নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে শুরু হয়েছে আরেক বিতর্ক। তাকে ঘিরে উঠেছে আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ-USAID, George Soros ও বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার অর্থায়ন নিয়ে চলছে তদন্ত ও বিতর্ক। ভারতের অসন্তোষও স্পষ্ট, কারণ ইউনুস সরকারের অধীনে ভারতের কৌশলগত প্রভাব বাংলাদেশে অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
“বাফার স্টেট” কি বাংলাদেশের প্রকৃত পরিচয়?
ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন ও চীন-প্রভাব প্রতিরোধের ‘বাফার’ হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক কূটনৈতিক বিশ্লেষক।
শেখ হাসিনার সরকার নাকি এই ভূমিকা পূরণে সচেষ্ট ছিলেন, যা বাংলাদেশের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতিকে সীমিত করে দেয় বলে মনে করা হচ্ছে।
মুক্তির পথ: কোনদিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের সার্বভৌমতা পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির ভিত্তি রাখতে প্রয়োজন-স্বচ্ছ ও ন্যায়ভিত্তিক কূটনীতি, যেখানে ভারতের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে, কিন্তু আত্মসম্মান বজায় থাকবে;
জনগণভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ, বিদেশি চাপ নয়;
এবং সংবিধানিক সংস্কার ও জবাবদিহিতা, যাতে একচেটিয়া কর্তৃত্ব আর ফিরে না আসে।
নতুন অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে এই ভারসাম্য রক্ষা করে-তা নির্ধারণ করবে ২০২৫-২৬ সালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব।
বিশেষ ফিচার প্রতিবেদন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও শাসনব্যবস্থার সন্ধিক্ষণে: কোথায় ছিল কৌশল, কোথায় ছিল স্বার্থপরতা?
উপমহাদেশে জেগে ওঠা প্রশ্ন শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলের পর, বাংলাদেশে আজ এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক, মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত নতুন সরকারের উদীয়মান নীতি, এবং একটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক আবর্ত-সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠেছে: বাংলাদেশ আসলে কার শাসনে ছিল-নিজের, না কারও ছায়ায়?
পর্ব ১: ভারত ও শেখ হাসিনার মধ্যকার কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা
২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর শেখ হাসিনার সরকার দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ছকে ভারতের একটি বড় মিত্রে পরিণত হয়।
তিস্তা চুক্তি: একাধিকবার আলোচনা হলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সীমান্ত পরিস্থিতি: বিএসএফ-এর হাতে শতাধিক বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছে; প্রতিক্রিয়া প্রায় শূন্য।
বাণিজ্য ভারসাম্য: ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে অনায়াসে প্রবেশ করে, কিন্তু বাংলাদেশি পণ্যে রপ্তানির ক্ষেত্রে রয়েছে সীমাহীন প্রতিবন্ধকতা।
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনা এই ঘনিষ্ঠতাকে রূপান্তর করতে পারেননি কূটনৈতিক লভ্যাংশে-বরং পড়ে গেছেন এক ধরনের “কৌশলগত দাসত্ব”-এর ফাঁদে।
পর্ব ২: মুহাম্মদ ইউনুস ও ‘বিদেশি এজেন্ট’ তত্ত্ব
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি একদিকে নোবেলজয়ী সমাজ সংস্কারক-অন্যদিকে, বিভিন্ন মহলের কটাক্ষে ‘বিদেশি স্বার্থের বাহক’।
বিতর্কিত সংযোগ: BRAC University, USAID, এবং Open Society-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ইউনুসের ঘনিষ্ঠতা।
ভারতীয় অসন্তোষ: ইউনুস সরকারের অধীনে ভারতের কৌশলগত প্রভাব কমেছে, বিশেষ করে সামরিক ও কূটনৈতিক ট্র্যাক-২ সহযোগিতায়।
পক্ষের যুক্তি: ইউনুসপন্থীরা বলছেন, তিনি কাজ করছেন দুর্নীতিমুক্ত ও দায়বদ্ধ একটি শাসনব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যে-যেখানে একক শাসকের পরিবর্তে কাজ করবে পরামর্শভিত্তিক নীতিনির্ধারণ।
পর্ব ৩: ভারতের আঞ্চলিক কৌশল ও বাংলাদেশের ‘বাফার স্টেট’ তত্ত্ব
দিল্লির নীতিনির্ধারকরা অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশকে দেখেন চীন-পাকিস্তান প্রভাব দমনের একটি কৌশলগত দেওয়াল হিসেবে।
ভারতীয় নীতিতে বাংলাদেশ ছিল: উত্তরের বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন ট্রানজিট ও শুল্ক মুক্ত প্রবেশাধিকার চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড” প্রভাব রোধ
সমালোচকদের মতে, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের এই লক্ষ্য পূরণে নিঃশর্ত সহায়তা দিয়েছে-তবে বিনিময়ে জাতীয় স্বার্থ কতটা রক্ষা পেয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
একটি মুক্ত রাষ্ট্রের সন্ধানে
বর্তমান প্রেক্ষাপটে “নতুন বাংলাদেশ” গড়তে দরকার তিনটি মূলমন্ত্র:
সার্বভৌম কূটনীতি-যেখানে প্রতিবেশী থাকবে, তবে রাষ্ট্রের অবস্থান নির্ধারিত হবে নিজস্ব স্বার্থে।
নাগরিক-অংশগ্রহণমূলক শাসন-নির্বাচন, নীতি ও বাজেটে জনগণের স্বর থাকবে মুখ্য।
জবাবদিহিমূলক প্রশাসন-যেখানে ক্ষমতা থাকবে সেবা দেওয়ার জন্য, নয় শাসন করার জন্য।
শেষ কথায়: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভূগোল এখন একটি সন্ধিক্ষণে। যে জাতি অতীতে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে, সে জাতি কি এবারও পারবে-আবার নতুন করে স্বাধীনভাবে নিজের ভাগ্য লিখতে?
এই গল্প এখানেই শেষ নয়। শুধু শুরু।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর: শেখ হাসিনা থেকে ইউনুস সরকার
১. শেখ হাসিনার কৌশলগত ভুলসমূহ
অতিরিক্ত ভারত-নির্ভরতা
তিস্তা চুক্তি ঝুলে থাকা, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক হত্যাকাণ্ড, এবং বাণিজ্য ভারসাম্যের ঘাটতি-সবই ভারতের একতরফা সুবিধার ইঙ্গিত দেয়।
ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা চীনের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হন, যা বাংলাদেশের কৌশলগত স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে।
দমনমূলক শাসন
২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন বিরোধী দল বর্জন করে, এবং ছাত্র আন্দোলন দমন করতে পুলিশ ও দলীয় বাহিনী ব্যবহার করা হয়।
১৩৩ জনের বেশি নিহত হয় কোটা আন্দোলনে, যা সরকারবিরোধী ক্ষোভকে বিস্ফোরণমুখী করে তোলে।
প্রশাসনিক পক্ষপাত
কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০% সরকারি চাকরি সংরক্ষণ ছিল আওয়ামী লীগের অনুগতদের প্রশাসনে বসানোর কৌশল।
২. ভারতের ভূরাজনৈতিক কৌশল: মিত্র না মোড়ল?
বাংলাদেশকে বাফার স্টেট হিসেবে দেখা
ভারতের উত্তর-পূর্ব বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন, চীনা প্রভাব প্রতিরোধ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশকে কৌশলগত বলয়ের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
ভারতীয় পণ্য সহজে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও, বাংলাদেশি পণ্যে অশুল্ক বাধা রয়েছে।
রেল ও ট্রানজিট চুক্তি ভারতের জন্য লাভজনক হলেও, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ
শেখ হাসিনার ভারত-নির্ভরতা তাকে জনগণের চোখে ‘ভারতের প্রতিনিধি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা তার পতনের অন্যতম কারণ।
৩. ইউনুস সরকারের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি
মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে-নির্বাচন, প্রশাসন, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন খাতে।
“New Bangladesh Day” ঘোষণা করা হয়েছে ৮ আগস্ট, শেখ হাসিনার পতনের তিন দিন পর।
বিতর্ক ও সমালোচনা
ইউনুস সরকার জামায়াতে ইসলামী ও চরমপন্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, যা তাকে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে আপসের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও মন্দির ধ্বংসের ঘটনায় ভারতের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক ভারসাম্য
ইউনুস সরকার ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে চায়, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
মুক্তির পথ কী?