
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | ব্রেকিং নিউজ » রাশিয়া-চীন “সীমাহীন মৈত্রী” মিথ্যে, এফএসবির গোপন নথি চীনকে ‘শত্রু’ ঘোষণা
রাশিয়া-চীন “সীমাহীন মৈত্রী” মিথ্যে, এফএসবির গোপন নথি চীনকে ‘শত্রু’ ঘোষণা
আন্তর্জাতিক খবরঃ
রাশিয়া-চীন “সীমাহীন মৈত্রী” বললে মিথ্যে, এফএসবির গোপন নথি চীনকে ‘শত্রু’ ঘোষণা
সারসংক্ষেপ রাশিয়ার ক্ষমতাসীন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির গোপন নথি ফাঁস হয়ে প্রকাশ্যে এসেছে। নথিতে চীনকে প্রকাশ্য মিত্র হলেও অভ্যন্তরে ‘শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিপুল হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ড্রোন ও বিমানচালনা প্রযুক্তি চুরি, আর্কটিক-মধ্য এশিয়ায় গুপ্তচরবৃত্তি এবং সাইবার আক্রমণের অভিযোগ উঠে এসেছে। মস্কো ২০২২ সালে “এন্টেন্ট-৪” নামের একটি সন্তর্পণে লঞ্চকৃত পাল্টা গোয়েন্দা প্রোগ্রাম চালু করে চীনা তৎপরতা প্রতিহত করতে।
মূল প্রতিবেদন গত কয়েক বছরে রাশিয়া-চীন ঘনিষ্ঠতা বিশ্বমঞ্চে ‘নো-লিমিট পার্টনারশিপ’ হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পুতিন ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বারবার একটি অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবুও, এফএসবির লুকানো নথি সেই পর্দার আড়ালে গোপন দ্বন্দ্বের ছবি ফুটিয়ে তুলেছে।
গোপনীয় নথির বরাত দিয়ে গোয়েন্দারা বলছেন, চীনা ইন্টেলিজেন্স এজেন্টরা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে রাশিয়ার সামরিক ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রবেশ করছে। ড্রোন, যুদ্ধবিমান ইঞ্জিন এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্রযুক্তি চুরির চেষ্টা ছাড়াও তারা আর্কটিকের গুরুত্বপূর্ণ বেইস এবং মধ্য এশিয়ার বন্দর নগরীগুলোতে নিজেদের উপস্থাপনাকে প্রভাব বিস্তারের শিকার হিসেবে ব্যবহার করছে। ব্যাপকভাবে তারা রাশিয়ার ভূখণ্ডে সাইবার আক্রমণ চালাচ্ছে এবং স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ক্যান্ট-পারসোনা (ছদ্মবেশী) হিসেবে কাজ করছে।
অভ্যন্তরীণ নথিতে একাধিকবার “চীনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র রাশিয়ার দুর্বল পয়েন্ট শনাক্ত করে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করা” উল্লেখ থাকায় মস্কো দীর্ঘমেয়াদী হুমকির মর্যাদায় এটিকে ‘শত্রু’ হিসেবে ভেবেছে।
এতে প্রত্যাখ্যান যারা? ক্রেমলিন এখনও এই নথি ফাঁসের প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। বরং জানিয়ে রেখেছে, রাশিয়া-চীন “সীমাহীন” সহযোগিতার পথেই এগোচ্ছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও দাবি করেছে, এ ধরণের অভিযোগ “ভিত্তিহীন এবং মৌলিক কূটনৈতিক আদর্শের পরিপন্থী”।
শিরোনাম: ফাঁস হওয়া রুশ এফএসবি নথি ও সরকারি বিবৃতিসমূহ (বাংলায়)
১. ফাঁস হওয়া নথির মূল কিছু দফা • নথিটি late ২০২৩ বা early ২০২4 সালে প্রণীত, যেখানে চীনকে “শত্রু” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। • ভূ-রাজনৈতিক অগ্রাধিকার: আর্কটিক ও মধ্য এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান পদচারণা ভারতের মতো নয়, বরং রাশিয়ার স্বার্থে হুমকি-গুপ্তচরবৃত্তি, অবকাঠামো কাজে ছদ্মবেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে স্থাপন, নিষ্কর্ষ খনির আড়ালে তথ্য আহরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে1। • সামরিক ও প্রযুক্তি গুপ্তচরবৃত্তি: - ড্রোন, যুদ্ধবিমান ইঞ্জিন, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম বিষয়ে চীনা এজেন্টদের ধরা-ছোঁয়ার চেষ্টা। - শীতল যুদ্ধের-era প্রকল্প যেমন ‘এক্রানোপ্লান’ নিয়ে চীনা তৎপরতা ছাড়াও বর্তমান বিমান ও মহাকাশ প্রযুক্তি চুরির চেষ্টা। • “Entente-4″ পাল্টা গোয়েন্দা প্রোগ্রাম: ২০২২ সালে এফএসবি গোপনে চালু করেছে রাশিয়া, মূল উদ্দেশ্য চীনা গুপ্তচরবৃত্তি নজরদারি ও প্রতিহত করা।
২. ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া • নথি ফাঁস প্রসঙ্গে বা ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এখনও পর্যন্ত কর্পোরেট স্তরে আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত বা স্বীকারোক্তি নেই। • প্রেস প্রিমিয়ারে রাশিয়ার বহুলপ্রচারিত অবস্থান: “রাশিয়া ও চীনের ‘নো-লিমিট পার্টনারশিপ’ অব্যাহত আছে” বলে ক্রেমলিন জানিয়েছে, মীমাংসার আলোচনাতেই তারা বিশ্বাসী।
৩. চীনা বিদেশ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি • “ভিত্তিহীন এবং মৌলিক কূটনৈতিক আদর্শের পরিপন্থী”-এমন খণ্ডন করেছে বেইজিং, দাবি করেছে এসব অভিযোগ অস্বীকারযোগ্য ও দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ববিরোধী।
৪. সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা এই নথি ফাঁস চিহ্নিত করে যে, দুই সভ্যতার ‘সীমাহীন মৈত্রী’য়ও রয়েছে ব্যাপক অবিশ্বাস। সামনের দিনগুলোতে এটি আভ্যন্তরীণ প্রতিহিংসা পাড়াবে, অন্যদিকে পশ্চিমা শক্তিরা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি প্রয়োগের পথ খুঁজবে।
“এন্টেন্ট-৪” এবং স্মুদেরা ২০২২ সালে এফএসবির অধীনে গোপনে গড়ে ওঠা “এন্টেন্ট-৪” প্রোগ্রামের লক্ষ্য হলো-চীনা গুপ্তচরবৃত্তি প্রতিহত, প্রযুক্তি সুরক্ষা এবং সীমান্তে সাইবার-রিস্ক হ্রাস। সরকারি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইতোমধ্যেই সাইবার ডিফেন্সের ক্ষেত্রে হাজার হাজার সন্দেহভাজন নেটওয়ার্ক স্ক্যান ও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
ভূরাজনৈতিক মারকাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরণের দ্বৈত সম্পর্ক ভবিষ্যতে আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন অস্থিরতা তৈরি করবে। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এই ফাটলকেই কাজে লাগিয়ে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি প্রয়োগ করতে পারে। ইউরোপে ফের সস্তা গ্যাসের বিনিময়ে রাশিয়াকে আলাদা খাতে রাখার পক্ষেও তারা জোর দিতে পারে, ভয়াবহ সাইবার হামলা এবং সীমান্ত টানাপোড়েনের আশঙ্কায়।
এ মুহূর্তে রাশিয়া-চীন অংশীদারিত্ব চরম অবস্থানে নেই। একদিকে কূটনীতির মঞ্চে বন্ধুত্বের সুর বজায়, অন্যদিকে গোয়েন্দা স্তরে আস্থা-ক্ষয় ও অ্যাডভার্সের ছায়াযুদ্ধ। আগামী দিনে এই ছায়া লড়াই বিশ্বশান্তি ও শক্তির ভারসাম্যকে নতুন রূপ দেবে-এটাই বিশ্লেষকদের নিরুদ্বেগ পূর্বাভাস।
তথ্যসূত্র
ফাঁস হওয়া এফএসবির নথি, ২০২৩-২৪
ক্রেমলিন ও চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি
রাশিয়া-চীন সম্পর্কের দৃশ্যপট যতটা বন্ধুত্বপূর্ণ দেখায়, বাস্তবতা ততটাই জটিল। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির একটি গোপন নথি চীনকে “শত্রু” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই নথি অনুযায়ী, চীন রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নথিতে বলা হয়েছে, চীনা গোয়েন্দারা রুশ বিজ্ঞানী, সামরিক কর্মকর্তা ও প্রযুক্তিবিদদের টার্গেট করছে, বিশেষ করে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান প্রযুক্তি চুরির উদ্দেশ্যে। এমনকি চীন রাশিয়ার আর্কটিক ও মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, যেখানে তারা খনিশিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে।
রাশিয়া ২০২২ সালে “এন্টেন্ট-৪” নামে একটি গোপন পাল্টা গোয়েন্দা কর্মসূচি চালু করে, যার লক্ষ্য চীনা তৎপরতা পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ করা। যদিও প্রকাশ্যে রাশিয়া-চীন “সীমাহীন বন্ধুত্বের” কথা বলে, এই নথি থেকে বোঝা যায়, সম্পর্কের গভীরে রয়েছে অবিশ্বাস ও ছায়াযুদ্ধের বাস্তবতা
দ্বৈত মিত্রতা-শত্রুতা কীভাবে ভবিষ্যতের ভূরাজনীতিকে রূপ দিতে পারে, সেটি তিনটি স্তরে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে:
১) কৌশলগত ভারসাম্য এবং সীমান্তরক্ষা
সামরিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা • আর্কটিক ও মধ্য এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান পদচারণা রাশিয়ার পরিকল্পনামূলক স্থানান্তরকে বাধাগ্রস্ত করছে। • ড্রোন, বায়ুসেনা ও স্পেস টেকনোলজিতে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ দুই পক্ষেরই গবেষণা-উন্নয়ন খাতে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।
প্রত্যক্ষ সংঘাত না হলেও “ছায়াযুদ্ধ” জ্বলজ্বল করবে: সীমান্তে ছোটোখাটো সংঘর্ষ বা ইলেকট্রনিক ওয়ার ফেয়ার ইভেন্ট বাড়তে পারে।
২) অর্থনৈতিক ও জ্বালানি নিরাপত্তা
জ্বালানি রপ্তানিতে নির্ভরতা • প্রতিটি অংশীদার একে অপরকে চাপে রাখতে শক্তিশালী রপ্তানি কৌশল অবলম্বন করবে-যেমন রাশিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ সীমিত করা, চীন তাৎক্ষণিকভাবে লিথিয়াম ও বিরল মেটাল রপ্তানি কমানো।
বিনিয়োগ ও অবকাঠামো • “বেল্ট অ্যান্ড রোড” প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ রাশিয়ার সমতল এলাকায় বিস্তৃত হলেও, নিরাপত্তাজনিত প্রবিধান কঠোর করে দু’দেশই বিনিয়োগে হাত নাড়তে পারে।
৩) পশ্চিমা শক্তিগুলোর জবাবদিহি-ফাটল কাজে লাগানোর কৌশল
দ্বিমুখী কূটনীতি • পশ্চিমা দেশগুলো উভয় পক্ষকে উত্তেজিত করে “ডিভাইড অ্যান্ড রুল” চালাবে: একদিকে রাশিয়া-ইউরোপ-যুক্ত শক্তি সংলাপ, অন্যদিকে চীন-প্রযুক্তি ও বাণিজ্য সংকট।
সামরিক সহযোগিতা ও সামরিক মহড়া • NATO বা Quad মঞ্চে রাশিয়াসহ চীনের বিরুদ্ধে যৌথ মহড়া ও সমন্বিত কৌশলগত মার্কেশন বৃদ্ধি।
অর্থনৈতিক চাপ • চীনের বিরোধিতা করতে উচ্চ প্রযুক্তির রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, রাশিয়ার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ, এবং সরাসরি পেমেন্ট সুইফ্টের বিকল্প প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।
সম্ভাব্য তিনটি দৃশ্যকল্প আনুষ্ঠানিক ফাটল: দ্বিপাক্ষিক “ইউক্লিডিয়ান শান্তি” ভেঙে ছায়াযুদ্ধ তীব্র-প্রতিটি সমঝোতা আলোচনা সন্ত্রস্ত। মোটামুটি অক্ষয়: দু’পক্ষ মিথ্যে শান্তি বজায় রেখে গোপনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অব্যাহত রাখে-ইলেকট্রনিক স্পাইং ও বাণিজ্য-নিয়ন্ত্রণই মূল লড়াই। C) পশ্চিমা মধ্যস্থতা: ইউরোপীয় শক্তি বা আমেরিকা রাশিয়াকে সস্তা গ্যাসের বিনিময়ে আলোচনায় জড়িয়ে নেয়, চীনকে একাই ছেড়ে দেয়-মস্কোর দূরে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা।