
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » » নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও জামাত হেফাজতের প্রতিক্রিয়া।।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও জামাত হেফাজতের প্রতিক্রিয়া।।
পক্ষকাল ডেস্ক সংবাদ:
গত ১৯ এপ্রিল ‘সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি এবং নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণ’ শিরোনামে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। কমিশনের সুপারিশমালায় কিছু বিষয় বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ে-তালাক ও উত্তরাধিকারে নারীর সমানাধিকার; বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্তকরণ; ধর্ষণের শিকার লিঙ্গ বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আইনে ধর্ষণের ধারায় সংস্কার; যে কোনো উপস্থাপনায় সংগতিহীনভাবে নারীকে যুক্ত করে নারীবিদ্বেষী বয়ান; বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত রাখা; নারীর প্রতি সম্মানজনক, মর্যাদাপূর্ণ ও সংবেদনশীল আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতাবিষয়ক কর্মসূচি গ্রহণ; সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছয় মাস ছুটি দেওয়া এবং পূর্ণ বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটি।
এসব সুপারিশ নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক নানা মহল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তারা অনেক সুপারিশকেই ধর্মীয় বিধানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের অস্তিত্বের বিপরীত বলে মনে করে। হেফাজতে ইসলাম আরেকটু এগিয়ে। একই কারণে সুপারিশ বাতিলের পাশাপাশি পুরো কমিশনই বাতিলের দাবি তুলেছে তারা।
বলে রাখা প্রয়োজন, নারী অধিকার বিষয়ে জামায়াত ও হেফাজতের এই অবস্থা নতুন নয়। জামায়াত একটা সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। নানা বিষয়ে তাদের লিখিত বক্তব্য ও বই-পুস্তিকা কম নেই। বরাবরই তারা নারীকে পুরুষের অধীন মনে করেছে। এমনকি একসময় তারা নারী নেতৃত্ব ইসলামসম্মত নয় বক্তব্য দিলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব মেনে ২০০১-০৬ সালে সরকারের মন্ত্রিত্ব গ্রহণে দ্বিধা করেনি।
হেফাজতে ইসলাম ২০১০ সালে শিক্ষানীতির বিরোধিতা, ২০১১ সালে নারী উন্নয়ন নীতির বিরোধিতা এবং ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধিতায় মাঠে নেমেছিল। বিভিন্ন ইসলামবাদী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এ মঞ্চকে খুশি রাখতে কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকার শেষ পর্যন্ত নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়ন করেনি। বরং তখন থেকেই হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ‘প্রেম’ শুরু হয়, যদিও আজকে হেফাজতে ইসলাম আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিচ্ছে। গত ১৫ বছরের ইতিহাস দেখলে সহজেই বোঝা যায়, আওয়ামী লীগের কতৃর্ত্ববাদী শাসনে এই গোষ্ঠীর অবদান কম ছিল না।
প্রশ্ন হলো, সরকার হেফাজত ও জামায়াতের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের ক্ষেত্রে কী অবস্থান নেবে? বলে রাখা দরকার, অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত নারীর বিরুদ্ধে যত মব সন্ত্রাস হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শিল্পী, মাজারপন্থি ও বাউলেরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে মব সহিংসতায়। এ বছরের জানুয়ারি মাসেই হেফাজতে ইসলামের হুমকির মুখে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় প্রসাধন ও অন্যান্য সামগ্রীর একটি কোম্পানির বিক্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছিল, যা উদ্বোধন করার কথা ছিল চিত্রনায়িকা পরীমণির। এর আগে তাদেরই দাবির মুখে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনা কমিটির দুই সদস্যকে বাদ দিতে গিয়ে পুরো কমিটিই বাতিল করে দেওয়া হয়।