শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

Daily Pokkhokal
শনিবার, ৯ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার »
শনিবার, ৯ মার্চ ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

৭ মার্চের ছাত্রনেতারা কেউ কেউ ‘মিথ্যা’ বলছেন: শেখ হাসিনা

পখকাল ডেস্ক ঃ শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি বলেছেন, সেইসব ছাত্রনেতারা এখন ‘ডাহা মিথ্যা কথা’ বলছেন।

দীর্ঘ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালে সাতই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বাধীনতাকামী ৭ কোটি মানুষকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

ঐতিহাসিক সেই ভাষণের ওপর আয়োজিত সেমিনারে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই ভাষণের এখন অনেকে অনেক রকম ব্যাখ্যা দেন। তখন যারা ছাত্রনেতা, তাদের যারা এখন জীবিত আছেন… সাক্ষাৎকার দেখছিলাম, সেখানে কেউ কেউ নানাভাবে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। আসলে ব্যাখ্যাগুলি শুনলে হাসিই পায়।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়।

পরবর্তীতে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। ঘনিষ্ঠ সাহচার হিসেবে ৭ মার্চও তারা বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন।

সেই ভাষণের পাঁচ দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ স ম আব্দুর রব।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “পতাকা তৈরির উদ্যোক্তা, ২ মার্চ পতকা উত্তোলনের উদ্যোক্তা, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার বা স্বাধীনতার ঘোষণার উদ্যোক্তা, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বঙ্গবন্ধু উপাধি যে মানুষটির পরিকল্পনা করেছেন তার নাম হচ্ছে সিরাজুল আলম খান।”

কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে কারও নাম উচ্চারণ না করেই শেখ হাসিনা বলেন, “এরা কত অর্বাচীনের মত কথা বলেন যে, তিনি (বঙ্গবন্ধু) নাকি (৭ মার্চ ভাষণ দেওয়ার) আগের দিন নিউক্লিয়াসের সাথে আলোচনা করলেন।

“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম- এখানে মুক্তির সংগ্রাম আগে বসবে না স্বাধীনতার সংগ্রাম আগে বসবে সেটাও নাকি নিউক্লিয়াস আলোচনা করেছে। এগুলো সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যে কথা। এর কোনো যৌক্তিকতাই নাই।”

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ৭ মার্চ সেই ভাষণের আগে অনেকেই দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। অনেকে অনেক পয়েন্ট তৈরি করে দিয়েছেন।

“অনেকে (বঙ্গবন্ধুকে) বলেছে এটা বলতে হবে, ওটা বলতে হবে, এইভাবে বলতে হবে, এটা না করলে হতাশ হয়ে ফিরে যাবেন। কাগজে কাগজে অনেক কাগজ আমাদের বাসায় জমা হয়েছিল।

“শেষ কথা বলেছিলেন আমার মা। মা একটা কথাই বলেছিলেন যে, সারাটা জীবন তুমি সংগ্রাম করেছ। তুমি জানো বাংলাদেশের মানুষের কী চায় এবং তার জন্য কী করতে হবে। তোমার থেকে ভাল আর কেউ জানে না। কাজেই তোমার মনে যে কথাটা আসবে তুমি শুধু সেই কথাটাই বলবে। আর কোনো কথা না।

“এত দীর্ঘ একটা ভাষণ, কোনো পয়েন্ট নাই, কাগজও নাই, কিছুই নাই।”

বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তার মেয়ে বলেন, “তিনি জানতেন মুক্তির পথটা কোথায়, কীভাবে আসবে। তিনি যে ব্যবস্থা করেছিলেন সেটাও তিনি জানেন। কাজেই সেইভাবে তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন যা বাঙালি জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।

“এই ভাষণের মধ্য দিয়ে শুধু দেশ স্বাধীন না, ভবিষ্যতে কী হবে সেটাও জাতির পিতা বলে গেছেন।”

মূলত বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণের আহ্বানেই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে বাঙালি। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী শুরু করে নৃশংস গণহত্যা। আর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।

শেখ হাসিনা বলেন, “সাতই মার্চের ভাষণ একটি জাতিকে সশস্ত্র যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল। জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলেই বাঙালি জাতি বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে, বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র পেয়েছে।”

ব্রিটিশ শাসনের অবসানে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেখানে প্রথম আঘাতটা এসেছিল আমাদের ভাষার ওপর। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা যখন তারা করে, তখন তিনি (বঙ্গবন্ধু) সংগ্রাম শুরু করেন ১৯৪৮ সালে।

“কাজেই তার যে সংগ্রাম, এটার একটা ধারাবাহিকতা ছিল। তিনি কখনো কোনো আগাম কথা বলেননি বা অতিরিক্ত কোনো কিছু…। একটি জাতিকে তিনি ধাপে ধাপে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন। সেই চেতনাটা মানুষের ভেতরে তিনি ধীরে ধীরে তার সংগ্রাম-আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে প্রোথিত করেছিলেন।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু কী করলে কী ভাল হত, কত দ্রুত স্বাধীনতা… তার সমালোচনায় কতগুলি কথা বা অপপ্রচার চালানো শুরু হয়েছিল। ১৯৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পরে এই প্রচারণা আরও ব্যাপকভাবে শুরু করা হয়। আর সেখানে একজন খলনায়কও দাঁড় করানো হয়, যিনি নাকি কোনো ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে একটা বাঁশি বাজিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন করে ফেলেছে।”

জিয়াউর রহমানের দিকে ইংগিত করে এ কথা বলার পর শেখ হাসিনা বলেন, “যার কথা বলা হয় সে ওই পঁচিশে মার্চ কেন, সাতাশ মার্চ পযন্ত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীতে চাকরিরত একজন মেজর ছিলেন। যে গিয়েছিল বাঙালিকে হত্যার জন্য জাহাজে করে যে অস্ত্র এসেছিল, সেই অস্ত্র খালাস করতে।”

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর পুরো ইতিহাস মুছে ফেলা হয়। ‘স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে’ শুরু হয় অপপ্রচার। পুরো একটি প্রজন্মকে বিভ্রান্তির পথে ঠেলে দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালে লন্ডনে বসে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তিনিও লন্ডনে ছিলেন। লন্ডনে প্রবাসীদের সঙ্গে সে সময় বঙ্গবন্ধুর নিয়মিত আলোচনা হত।

“তাদের (প্রবাসীরা) সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা, পাশাপাশি একটা গেরিলা যুদ্ধ করতে গেলে আমাদের অস্ত্র কোথা থেকে আসবে, টেনিং কোথায় হবে, কীভাবে বিশ্বের সমর্থন আদায় করা যাবে- তিনি কিন্তু সেই বিষয়গুলির পরিকল্পনাটা লন্ডনে বসেই করে এসেছিলেন। সেখানে এই পরিকল্পনাটা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল। তার ভেতরে অদ্ভূত এক দূরদর্শী শক্তি ছিল।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলেছিলেন, নির্বাচন হবে। কিন্তু ওরা ক্ষমতা দেবে না। তিনি যা যা বলেছিলেন, ঠিক সেই ঘটনাই কিন্তু ঘটল। পাকিস্তানি শাসকদের তিনি খুব ভাল করেই চিনতেন যে ওরা কী করতে পারে।”

সে সময় অনেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরোধিতা করেছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেখানে তার (বঙ্গবন্ধু) কথা ছিল যে, ইলেকশটা হতে হবে এই কারণে যে, বাঙালি জাতির পক্ষে কে কথা বলবে কে নেতৃত্ব দেবে কে তাদের নেতা সেটা আগে তাদের ঠিক করতে হবে। যে শর্তগুলি ইয়াহিয়া খান দিয়েছিলেন সব শর্ত মেনেই তিনি নির্বাচন করেন। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণের ম্যান্ডেটটা পান।”

জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা যারা পড়বেন তারা দেখবেন, সারাটা জীবন কীভাবে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তার এই আত্মত্যাগের মাধ্যমেই কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।”

বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম, শিল্পী হাশেম খান, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী মাশুরা হোসেন ও সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান বক্তব্য দেন।

বি ডি নিউজ



এ পাতার আরও খবর

গুমের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা গুমের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
গুম কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন: ভুক্তভোগীদের অভিযোগে ভরছে আস্থা সংকট গুম কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন: ভুক্তভোগীদের অভিযোগে ভরছে আস্থা সংকট
ড. ইউনূস কি অং সান সু চির পরিণতির পথে? নোবেলজয়ীর সম্মান আজ প্রশ্নের মুখে ড. ইউনূস কি অং সান সু চির পরিণতির পথে? নোবেলজয়ীর সম্মান আজ প্রশ্নের মুখে
তারেক জিয়া ও ইউনুস ত্রিমাত্রিক রাজনীতির ফাঁদে - এক রম্য বয়ান” তারেক জিয়া ও ইউনুস ত্রিমাত্রিক রাজনীতির ফাঁদে - এক রম্য বয়ান”
গোপন সমঝোতা: রাষ্ট্রীয় চেয়ারের বিনিময়ে সার্বভৌমত্বের আপস গোপন সমঝোতা: রাষ্ট্রীয় চেয়ারের বিনিময়ে সার্বভৌমত্বের আপস
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: গণতন্ত্রের সংকট ও জনগণের প্রত্যাশা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: গণতন্ত্রের সংকট ও জনগণের প্রত্যাশা
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সাম্প্রতিক আপডেট ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সাম্প্রতিক আপডেট
জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ
এ বোয়িং এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমান দুর্ঘটনা, পাখির ধাক্কা, ইঞ্জিন বিকল না কি অন্য কিছু? এ বোয়িং এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমান দুর্ঘটনা, পাখির ধাক্কা, ইঞ্জিন বিকল না কি অন্য কিছু?
ইরানের পরমাণু ঘাঁটিতে ইজরায়েলের হামলা! জারি জরুরি অবস্থা, উত্তাল বিশ্বরাজনীতি ইরানের পরমাণু ঘাঁটিতে ইজরায়েলের হামলা! জারি জরুরি অবস্থা, উত্তাল বিশ্বরাজনীতি

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)