
বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ বাণিজ্যিকীকরণ শিক্ষার গুণগত মান ব্যাহত করে মন্তব্য করে তা বন্ধের আহ্বান আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।তিনি বলেন, “বাণিজ্যিকরণ শিক্ষার গুণগত মানকে ব্যাহত করে। অনেক ক্ষেত্রে মেধা বিকাশের পথকে বাধাগ্রস্থ করে। তাই শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। সার্টিফিকেট একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতি হলেও শিক্ষার মূল লক্ষ্য হতে পারে না।”
বুধবার ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এখন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ।
“বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সফলভাবে। সাফল্যের এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। শিক্ষায় ও দক্ষতায় তাদেরকে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ “পাবলিক এবং প্রাইভেট সেক্টরে উচ্চ শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটছে। কিন্তু সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও পরিবেশ এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। বর্তমান বিশ্ব অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। তাই আমাদের শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় বহুমুখী জ্ঞান চর্চার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র মন্তব্য করে আবদুল হামিদ বলেন, “এখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে নির্ধারিত পাঠ্যসূচির বাইরেও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “নজরুল আমাদের জাতীয় কবি, গানের কবি, বিদ্রোহী কবি। তার নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয় কবির বিস্ময়কর সৃষ্টিশীল কর্ম যেমন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেবে, তেমনি তার প্রতি আমরা সত্যিকারার্থে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারব।
“এটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও নজরুলের কবিতা, গান, নাটকসহ সার্বিকভাবে তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।”
কবি নজরুলকে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সামন্তবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর অভিহিত করে তিনি বলেন, “হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুলের চেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী কোনো কবির আবির্ভাব ঘটেনি। নজরুলই একমাত্র সাহিত্যিক যিনি বুঝতে পেরেছিলেন, উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা সাম্প্রদায়িকতা।
“জাতি, ধর্ম, গোত্র, শ্রেণি, সম্প্রদায়ের নামে যে বিচ্ছিন্নতা ও পারস্পরিক ঘৃণার সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা থেকে মুক্তির উপায় নজরুলের কবিতা ও সাহিত্য। তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল মানবসৃষ্ট এই কৃত্রিম দেয়ালগুলো ভেঙে ফেলা। তাই তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন।”
ময়মনসিংহের ত্রিশাল এক সময় নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ‘কবিতীর্থ’ স্থান হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আবদুল হামিদ।
“ত্রিশালে নজরুলের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য। আসছে বিশ্বের নানা দেশ থেকে পর্যটক ও গবেষক। সেইদিন আর বেশী দূরে নয়, যেদিন শেক্সপিয়ার, হাফিজ, শেখ সাদীর জন্মস্থানের মতো ত্রিশালও সারাবিশ্বে পরিচিত হবে নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ‘কবিতীর্থ’ স্থান হিসেবে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন হলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণার দ্বার প্রসারিত হবে। বিশেষ করে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে নিরলস গবেষণার অপার ক্ষেত্র তৈরি হবে।”
অনুষ্ঠান সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহীত উল আলম, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বক্তব্য রাখেন।
সমাবর্তনে মোট এক হাজার ৮৪৫ জনকে বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি দেওয়া হয়। এছাড়া শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বের জন্য ২৯ জনকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
এর আগে দুপুরে রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে করে ত্রিশাল পৌঁছান। পরে সমাবর্তন শেষে ঢাকায় ফেরেন তিনি।