
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » বাংলাদেশকে নিজেদের পথ নিজেদের ইতিহাস নিজ হাতে লিখতে হবে
বাংলাদেশকে নিজেদের পথ নিজেদের ইতিহাস নিজ হাতে লিখতে হবে
বাংলাদেশ কি নিজেদের পথ নিজেরাই ঠিক করতে পারবে?
২৭, ২০২৫ এপ্রিল শনিবার :
শফিকুল ইসলাম কাজল
বাংলাদেশ আজ এক চরম সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। বিশ্ব রাজনীতির জটিল দাবার ছকে আমরা কি চালক হব, নাকি অন্যের হাতে পরিচালিত একটি গুটি? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ধারণ করবে আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের অস্তিত্ব।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় পার করেও আজও আমরা অনেক ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, চাঁদাবাজি, অযোগ্যতার পুরস্কার এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়-সব মিলিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে ধান্দাবাজি, কন্ট্রাক্টরির রাজত্ব, ক্ষমতার দখল আর স্বার্থপরতাই বেশি মুখ্য হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ ক্রমাগত চাপের মুখে পড়ছে। ভারত, চীন, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থের জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর এই চাপ কখনো সরাসরি, কখনো পরোক্ষভাবে আমাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণের চাপ, রেমিট্যান্স নির্ভরতা, রপ্তানির সীমাবদ্ধতা, মুদ্রাস্ফীতি ও কর্মসংস্থান সংকট-সবই দেশকে একটি ভঙ্গুর অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এখনো শক্তিশালী সম্ভাবনা রয়েছে। তরুণ প্রজন্ম ক্রমেই সচেতন হচ্ছে। স্বাধীন মত প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে। প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং বৈশ্বিক সংযোগের মাধ্যমে একটি নতুন শক্তি তৈরি হচ্ছে, যারা পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত।
বাংলাদেশ যদি সত্যিকার অর্থে নিজেদের পথ তৈরি করতে চায়, তাহলে কিছু বিষয়ে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে:
গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালীকরণ।*
আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।*
দুর্নীতি ও দলীয় দখলদারিত্ব বন্ধ করা।*
অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য বাড়ানো ও দেশীয় শিল্প-উদ্যোগের প্রসার ঘটানো।ভূ-রাজনীতিতে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা।*
তরুণ সমাজকে নেতৃত্বে আনার সুযোগ তৈরি করা।*
বিশ্বের দাবার ছকে নিজের চাল নিজে দিতে হলে, শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নতুবা পরের শতাব্দীজুড়ে আমরা শুধু অন্যের খেলা দেখেই কাটিয়ে দেবো।
সময় এসেছে বাংলাদেশকে নিজের হাতের লেখা ইতিহাস তৈরি করার।