শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

Daily Pokkhokal
মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » সম্পাদক বলছি » দ্য বিস্ট - আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চলমান এক দুর্গ
প্রথম পাতা » সম্পাদক বলছি » দ্য বিস্ট - আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চলমান এক দুর্গ
৩০৮ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দ্য বিস্ট - আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চলমান এক দুর্গ

---পক্ষকাল ডেস্কঃ
দ্য বিস্ট, ক্যাডিলাক ওয়ান, লিমুজিন ওয়ান, ফার্স্ট কার, স্টেজকোচ- নাম পাঁচটি, কিন্তু বোঝাচ্ছে একটি জিনিসকেই; একটি গাড়িকে। কিন্তু কেন হঠাৎ করে একটি গাড়ি নিয়েই হঠাৎ কথা বলতে চাচ্ছি? কারণ এটা আর আট-দশজন মানুষের ব্যবহৃত কোনো গাড়ি না; অঢেল অর্থ থাকলেও কেউ এ গাড়িটি কিনে নিজের জন্য ব্যবহার করতে পারবে না! কেন? কারণ এটি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ব্যবহৃত গাড়ি। অবশ্য গাড়ি না বলে একে যদি চলমান একটা দুর্গ বলা হয় তাহলেও বোধহয় অত্যুক্তি হবে না!

যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস স্ট্যান্ডার্ডের উপর ভিত্তি করে বানানো বিস্টে একইসাথে আক্রমণাত্মক, প্রতিরক্ষামূলক এবং জীবন রক্ষামূলক সুযোগসুবিধা রয়েছে। মিডিয়াম ডিউটি ট্রাক প্লাটফর্মের উপর বর্তমানের গাড়িটি বানানো হয়েছে। বর্তমানে এ রকম ১২টি গাড়ি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রেসিডেন্ট একেক সময় একেকটি গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন পর্যায়ক্রমে। আর অন্য গাড়িগুলো তখন সিক্রেট সার্ভিস হেডকোয়ার্টারের বেজমেন্টে ২৪ ঘন্টা নজরদারিতে রাখা হয়।

যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট কোথাও গাড়ির শোভাযাত্রা নিয়ে বের হন, তখন সেখানে কম করে হলেও ৪৫টি সশস্ত্র গাড়ি থাকে! এর মাঝে থাকে দুটি বিস্ট যার একটিতে থাকেন প্রেসিডেন্ট ও অন্যটি ডিকয় (শত্রুকে বিভ্রান্ত করার জন্য), স্থানীয় পুলিশ বাহিনী, মোবাইল কমিউনিকেশন সেন্টার, অ্যাম্বুলেন্স ও আরো কিছু সশস্ত্র গাড়ি।

প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার খাতিরে বিস্টের সকল বৈশিষ্ট্য, নির্মাণ কৌশল কখনোই পুরোপুরি প্রকাশ করা হয় না। তারপরও এখন পর্যন্ত এর যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা জানা গিয়েছে, সেগুলোই যে কারো মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বিস্টের যে অসাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো তাকে আসলেই Beast বানিয়ে ছেড়েছে, এখন সেই সম্পর্কেই একে একে জানা যাক।

CNET এর ROAD/SHOW ব্লগে অ্যান্টন গুডউইন ‘দ্য বিস্ট’ সম্পর্কে তার কিছু মতামত উল্লেখ করেছিলেন। তার অনুমান অনুযায়ী গাড়িটিতে গ্যাসোলিন চালিত ভোর্টেক ৮.১ লিটার ভি-৮ ইঞ্জিন কিংবা ডিজেল চালিত ডুরাম্যাক্স ৬.৬ লিটার টার্বো ভি-৮ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। তবে এক সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে Autoweek লিখেছিলো যে, বিস্টে ব্যবহৃত ইঞ্জিনটি গ্যাসোলিন চালিত ভি-৮ মডেলের।

গাড়িটিতে ব্যবহার করা হয়েছে Goodyear Regional RHS মডেলের চাকা। এ চাকাগুলো সাধারণত মিডিয়াম বা হেভি ডিউটি ট্রাকে ব্যবহার করা হয়। ফলে বিস্টের ভর স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি। যদিও নিরাপত্তার খাতিরে গাড়িটির আসল ভর কখনো প্রকাশ করা হয় নি, তবুও অনুমান করা হয় সেটি ৬,৮০০-৯,১০০ কেজির মতো হবে!
এত ওজনের জন্যই গাড়িটির গতিবেগ তুলনামূলক কম, ঘন্টায় ৯৭ কিলোমিটার সর্বোচ্চ। প্রতি গ্যালন জ্বালানী খরচ করে বিস্ট সর্বোচ্চ ৩.৭ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে।
সাধারণত গাড়ির দরজা খোলার জন্য চাবিই আমাদের ভরসা। তবে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির প্রেসিডেন্টের গাড়ি কি আর আমজনতার মতো হলে চলে? তার গাড়ির দরজা খুলতে দরকার হয় গোপন কোডের যা কেবলমাত্র তার সাথে থাকা সিক্রেট সার্ভিসের কিছু সদস্যই জানে।
শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গাড়িটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫ ইঞ্চি পুরুত্বের বুলেটপ্রুফ গ্লাস।
ড্রাইভারের পাশের জানালা ছাড়া গাড়িতে থাকা আর কোনো জানালাই খোলার উপায় নেই। ড্রাইভারের জানালাও খোলা যায় মাত্র ৩ ইঞ্চি পরিমাণ। এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে শুধু টোল দেয়ার জন্য।
ফুয়েল ট্যাঙ্কে রয়েছে আর্মার প্লেটের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এছাড়াও কোনো সংঘর্ষ কিংবা গোলাগুলিতে যাতে ট্যাঙ্কটিতে বিষ্ফোরণ না ঘটে, সেজন্য রয়েছে বিশেষ ফোমও। এরপরও যদি কোনো কারণে আগুন ধরেও যায়, তবে তার জন্য রয়েছে অত্যাধিক চাপে সংকুচিত তরলীকৃত গ্যাস হেলন (Halon) ভিত্তিক অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা।
এবার ট্রাঙ্কের দিকে যাওয়া যাক। সারা গাড়িতেই যেখানে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব লেগে আছে, সেখানে কিছু অস্ত্র না থাকলে ঠিক মানাচ্ছিলো না। বিস্টের ট্রাঙ্কে তাই রাখা থাকে দরকারি কিছু অস্ত্র। সেগুলো কী তা অবশ্য জানার কোনো উপায় নেই। সেই সাথে প্রেসিডেন্টের সিটের নিচে থাকে আলাদা অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টের গাড়ির শোভাযাত্রায় সবসময়ই একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকে। তবে যদি কোনো কারণে সেটি বিস্টের কাছাকাছি থাকতে না পারে সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে টুকটাক প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামও রাখা হয় বিস্টের ভেতরে। এর মাঝে প্রেসিডেন্টের রক্তের গ্রুপের সাথে মিলিয়ে রক্তও আছে।
গাড়িটির দরজাগুলো প্রায় আট ইঞ্চি পুরুত্বের। এছাড়া প্রতিরক্ষার কথা চিন্তা করে এগুলো যে আর আট-দশটা সাধারণ গাড়ির মতো করে বানানো হয় নি, সেই কথাও তো কারো না বোঝার কথা না। এর দরজাগুলো বোয়িং ৭৫৭ এর কেবিনের দরজার মতোই ভারী। বাইরে থেকে একজন এজেন্ট টেনে না ধরলে ভেতর থেকে তা খোলার সাধ্য নেই প্রেসিডেন্টের!

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বিস্টের দরজা খুলে দিচ্ছেন একজন এজেন্ট
গাড়িটি এমনভাবে বানানো যাতে কেমিক্যাল অ্যাটাকেও এর কোনো ক্ষতি না হয়। এর ভেতরে রয়েছে একটি এনক্রিপ্ট করা স্যাটেলাইট ফোন এবং বিশেষ ধরনের ভিডিও সিস্টেম। তাই কোনো দরকার পড়লে সুরক্ষিত লাইনেই প্রেসিডেন্ট যোগাযোগ করতে পারবেন পেন্টাগন, বাইরের কোনো দূতাবাস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়।
বিস্টে ব্যবহার করা হয়েছে মিলিটারি গ্রেডের আর্মার। এতে ব্যবহার করা হয়েছে স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়াম ও সিরামিক।
কেভ্‌লারের সাহায্যে তৈরী বিস্টের চাকাগুলো সহজে পাংচার হওয়ার সম্ভাবনা কম। এরপরেও যদি দুর্ঘটনবশত চাকা পাংচার হয়ে যায়, তবে স্টিলের কাঠামোর সাহায্যেই অনায়াসে চালিয়ে নেয়া যাবে গাড়িটিকে।
গাড়ির সামনের কাচ যদি কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিংবা কোনো কারণে যদি গাড়ির চালকের দেখতে সমস্যা হয় সেজন্য বিশেষ ধরনের নাইট ভিশন ক্যামেরা নিয়েও কাজ করছে সিক্রেট সার্ভিস।
বিস্টের মতো একটি গাড়ির ড্রাইভার হওয়ার আগে একজন ব্যক্তিকে কম করে হলেও এক সপ্তাহ ধরে বেল্টস্‌ভিলে সিক্রেট সার্ভিস একাডেমীর বিশেষ ট্র্যাকে ডিফেন্সিভ ড্রাইভিংয়ের উপর ট্রেনিং নেয়া লাগে। এজন্য বিস্টের পাশাপাশি চার্জার, ক্যামারো ও মাস্ট্যাং দিয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাদের।
যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট দেশের বাইরে যান, তখনও তার বাহন হিসেবে থাকে এই বিস্টই। এজন্য সিক্রেট সার্ভিস C-17 Globemaster ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফটটি ব্যবহার করে থাকে। তখন বিস্টের সাথে আরেকটি লিমুজিন এবং Chevrolet Suburban মডেলের গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এই সাবআর্বানকে ডাকা হয় ‘রোডরানার’ নামে। এটি সর্বদা মিলিটারি স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে।
বিশেষ অবস্থায় কাঁদানে গ্যাস ও শটগান ব্যবহারের ব্যবস্থাও রয়েছে বিস্টে। ধারণা করা হয় এতে গ্রেনেড লঞ্চার ব্যবহারের সুবিধাও রয়েছে।
সর্বোচ্চ সাতজন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনে সক্ষম আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চলমান এই দুর্গটি। এর মাঝে তিনজন সবসময়ই থাকে- গাড়ির ড্রাইভার, একজন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট নিজে। পেছনে রয়েছে আরো চারজন বসার ব্যবস্থা। এর মাঝে তিনজন পেছনের দিকে মুখ করে এবং আরেকটি সিট অতিথির জন্য প্রেসিডেন্টের বিপরীত পাশেই। অবশ্য অতিথি আর প্রেসিডেন্টের মাঝে রয়েছে একটি ফোল্ডিং ডেস্ক।
আঠারো ফুট লম্বা এবং পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি উচ্চতার প্রতিটি বিস্টের দাম বর্তমানে প্রায় দেড় মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের ব্যবহৃত এসব গাড়ি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে, তখন সেগুলোকে ধ্বংস করা হয়। মাঝে মাঝে আবার জাদুঘরেও রাখা হয়। জাদুঘরে রাখা হলে এর শুধুমাত্র বাইরের অংশই মোছার অনুমতি থাকে সেই জাদুঘরের কর্মীদের। ভেতরের অংশ মুছতে চাইলে স্থানীয় সিক্রেট সার্ভিসের অনুমতি যোগাড় করা লাগে। আর ধ্বংস করার জন্য বুলেট ও অন্যান্য বিষ্ফোরক ব্যবহার করা হয়। এর পেছনে অবশ্য দুটি উদ্দেশ্য কাজ করে। প্রথমত, কেউ যেন সেই গাড়ির নির্মাণ কৌশল, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে না পারে এবং দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন অস্ত্রের মুখে গাড়িটি কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে তা পরীক্ষা করে পরবর্তীতে উন্নততর মডেল তৈরি করা।



এ পাতার আরও খবর

‘৩৫০০ গুমের অভিযোগ’—বস্তুত এক চাতুর্যময় রাজনীতি ও প্রকৃত বিচারকে আড়াল করার অপচেষ্টা ‘৩৫০০ গুমের অভিযোগ’—বস্তুত এক চাতুর্যময় রাজনীতি ও প্রকৃত বিচারকে আড়াল করার অপচেষ্টা
মধ্যপ্রাচ্যে ঘনীভূত যুদ্ধের মেঘ: ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যে ঘনীভূত যুদ্ধের মেঘ: ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
তারেক জিয়া ও ইউনুস ত্রিমাত্রিক রাজনীতির ফাঁদে - এক রম্য বয়ান” তারেক জিয়া ও ইউনুস ত্রিমাত্রিক রাজনীতির ফাঁদে - এক রম্য বয়ান”
শক্তি সব সময় শব্দ নয় অনেক সময় নীরবতাতেই প্রকাশ হয় শক্তি সব সময় শব্দ নয় অনেক সময় নীরবতাতেই প্রকাশ হয়
অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র দায়িত্ব – রক্তপাতহীন নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র দায়িত্ব – রক্তপাতহীন নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর
অবৈধ  সরকার করিডোর দেয়ার মত নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবার কে অবৈধ সরকার করিডোর দেয়ার মত নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবার কে
বাংলাদেশের পানির নিচে লুকিয়ে থাকা সম্পদ - ভবিষ্যতের সম্ভাবনা না কি নতুন উপনিবেশের ফাঁদ বাংলাদেশের পানির নিচে লুকিয়ে থাকা সম্পদ - ভবিষ্যতের সম্ভাবনা না কি নতুন উপনিবেশের ফাঁদ
যুদ্ধের ছায়ায় উপমহাদেশ কাশ্মীর হামলার পর আমরা কোন পথে ? যুদ্ধের ছায়ায় উপমহাদেশ কাশ্মীর হামলার পর আমরা কোন পথে ?
গণতন্ত্রের মুখোশে বন্দী একটি জাতি: ২০২৫ সালের বাংলাদেশ গণতন্ত্রের মুখোশে বন্দী একটি জাতি: ২০২৫ সালের বাংলাদেশ

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)