
শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » সম্পাদক বলছি » ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল রায়: বিচার, রাজনীতি ও গণতন্ত্রের সন্ধিক্ষণে
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল রায়: বিচার, রাজনীতি ও গণতন্ত্রের সন্ধিক্ষণে
সম্পাদকিয়ঃ
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এই দিনটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে যাচ্ছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের রায় ঘোষণা করবে আপিল বিভাগ।
এই রায় শুধু একটি বিচারিক সিদ্ধান্ত নয়-এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, বিচারিক স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘ পথচলা
২০০৪ সালের হামলার পর দায়ের হওয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় ২০১৮ সালে নিম্ন আদালত ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সব আসামিকে খালাস দেয়, যার মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে, যার শুনানি শেষে ৪ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হয়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করায় আপাতত খালাস বহাল রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও জনমত
এই মামলার রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকরা হাইকোর্টের রায়কে “বিচারবহির্ভূত” বলে অভিহিত করেছেন, অন্যদিকে বিএনপি একে “রাজনৈতিক হয়রানির অবসান” হিসেবে দেখছে।
জনমতের একটি বড় অংশ এই রায়কে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও এই মামলার রায়কে বাংলাদেশের বিচারিক স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তির নিরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নজরদারি
২০০৪ সালের হামলার পর থেকেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে আসছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক সংস্থা বিচারিক স্বচ্ছতা, সাক্ষ্য-প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
৪ সেপ্টেম্বরের রায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিয়ে যারা কাজ করেন।
রায় শুধু বিচার নয়, গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি
২১ আগস্টের রায় বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার জন্য একটি পরীক্ষার মুহূর্ত। এটি শুধু একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়-এটি বিচারিক স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে আস্থা পুনর্গঠনের সুযোগ।
এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পক্ষকাল একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে, যেখানে থাকবে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া, জনমত বিশ্লেষণ এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার তুলনামূলক মূল্যায়ন।