
রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ১৫০ ফুটের ঘরে ৮০ ভোটার, রাহুলের ‘ভোটচুরি’র অভিযোগ ঘিরে তোলপাড়
১৫০ ফুটের ঘরে ৮০ ভোটার, রাহুলের ‘ভোটচুরি’র অভিযোগ ঘিরে তোলপাড়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুরা বিধানসভা এলাকার আইটি করিডরের এক ঘিঞ্জি গলি। মুন্নি রেড্ডি গার্ডেনের ৩৫ নম্বর ঠিকানায় থাকা ১৫০ বর্গফুটের একটি ঘরই এখন ভারতের জাতীয় রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর তোলা ‘ভোটচুরি’র অভিযোগের সূত্র ধরে চালানো এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই একটি মাত্র ঠিকানাতেই ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত রয়েছেন ৮০ জন ব্যক্তি, যাদের কাউকেই সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রাহুল গান্ধী
‘ইন্ডিয়া টুডে’ টেলিভিশনের এক সরেজমিন প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, যা নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে রাহুলের তোলা প্রশ্নকে আরও জোরালো করেছে। চ্যানেলটির প্রতিবেদক ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পান, সেখানে বর্তমানে দীপংকর নামের পশ্চিমবঙ্গের এক পরিযায়ী শ্রমিক বাস করছেন, যিনি একটি খাবার সরবরাহকারী সংস্থায় কাজ করেন। মাসখানেক আগে ভাড়া নেওয়া এই ঘরের ভোটার তালিকায় থাকা ৮০ জনের কাউকেই তিনি চেনেন না এবং তার নিজের নামও ভোটার তালিকায় ওঠেনি।
এই অভিযোগের সত্যতা আংশিকভাবে স্বীকার করেছেন ওই বাড়ির মালিক জয়রাম রেড্ডি এবং এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) মুনিরত্নাও। জয়রাম রেড্ডি, যিনি নিজেকে বিজেপির সমর্থক বলে পরিচয় দিয়েছেন, তিনি মেনে নিয়েছেন যে তার ঠিকানায় ৮০ জন ভোটারের নাম থাকার বিষয়টি সত্যি। তার ভাষ্যমতে, ‘বহু ভাড়াটে এখানে থাকেন, ভোটার কার্ডে নাম তোলেন এবং পরে ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ বা বিহারের মতো রাজ্যে চলে যান। তবে ভোটের সময় কেউ কেউ ফিরে এসে ভোট দিয়ে যান।’ এতদিন বিষয়টি নির্বাচন কর্মকর্তাদের না জানানোর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এবার জানাবেন।
অন্যদিকে, এলাকার বিএলও মুনিরত্নাও কংগ্রেস নেতার অভিযোগ সঠিক বলে মেনে নিয়েছেন। তিনি জানান, বহু শ্রমিক কাজের খোঁজে এসে ভাড়ার রসিদ দেখিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলেন। পরে তারা অন্যত্র চলে গেলেও পদ্ধতিগত জটিলতায় তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া যায়নি। মুনিরত্নার মতে, ‘অনেকেই নাম বাদ দিতে চান না এবং নির্বাচনের সময় এসে ভোট দিয়ে যান।’
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মূল অভিযোগ ছিল, মহাদেবপুরা আসনে প্রায় এক লাখ ভুয়া ভোটার রয়েছে, যাদের ভোট বিজেপির পক্ষে গেছে। বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই একটি মাত্র বিধানসভা আসনেই বিজেপি এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিল, যা শেষ পর্যন্ত তাদের ৩২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পুরো লোকসভা আসনটি জিততে সাহায্য করে। রাহুলের মতে, এটি নিছক একটি নমুনা এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) পরিকল্পিতভাবে বিজেপিকে জেতাতে ‘ভোটচুরি’তে সহায়তা করছে।
যদিও নির্বাচন কমিশন রাহুলের এই অভিযোগকে ‘পুরোনো বোতলে নতুন মদ’ বলে উড়িয়ে দিয়ে তাকে হলফনামা দিয়ে অভিযোগ জমা দেওয়ার পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। জবাবে রাহুল বলেছেন, তিনি সংসদে সংবিধান ছুঁয়ে শপথ নেওয়া একজন জনপ্রতিনিধি এবং প্রমাণসহ অভিযোগ তুলেছেন, যা তদন্ত করা ইসির দায়িত্ব।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায় রাহুল গান্ধী এখন কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীরা অবসরে গেলেও কেউ পার পাবে না।