
শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » রাষ্ট্রীয় সংস্কার: জনগণের আকাঙ্ক্ষা না কি পশ্চিমা চাপ?
রাষ্ট্রীয় সংস্কার: জনগণের আকাঙ্ক্ষা না কি পশ্চিমা চাপ?
পক্ষকাল প্রতিবেদন
ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁর ঢাকা সফর ঘিরে রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। তিনি বলেছেন, “সহিংসতা, সাংবাদিকদের হয়রানি এবং বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে কখনোই প্রকৃত গণতন্ত্রের আবির্ভাব হতে পারে না” - যা অনেকের কাছে পশ্চিমা মূল্যবোধের পুনরুৎপাদন হিসেবেই প্রতিভাত হয়েছে।
সংস্কার: উচ্চাকাঙ্ক্ষা না কি হস্তক্ষেপ?
ভ্যালেরিয়াঁর বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামোগত সংস্কারের প্রশংসা থাকলেও, তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই উদ্যোগ সফল হতে পারে কেবলমাত্র “টেকসই ছন্দে ও স্পষ্ট রোডম্যাপসহ” পরিচালিত হলে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে-এই রোডম্যাপ কার তৈরি? জনগণের, না আন্তর্জাতিক সংস্থার?
জনগণের অবস্থান
২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশের জনগণ রাজনৈতিক জাগরণে সক্রিয়। কিন্তু সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ কতটা নিশ্চিত হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, জাতীয় সনদ প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় নাগরিক মতামতের প্রতিফলন সীমিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদুল ইসলাম বলেন, “সংস্কার যদি জনগণের চাহিদা থেকে আসে, তবে তা টেকসই হবে। কিন্তু যদি তা বিদেশি চাপের প্রতিক্রিয়া হয়, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।”
আন্তর্জাতিক চাপ ও অর্থ পাচার
ভ্যালেরিয়াঁর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যুক্তরাজ্যে ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের রিয়েল এস্টেট জব্দ হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার দুর্নীতির কারণে চুরি যায়”-যা দুর্বলভাবে নিয়ন্ত্রিত অফশোর ও ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্মে গিয়ে বিনিয়োগ হয়1। এই তথ্য অনেকের কাছে পশ্চিমা রাষ্ট্রের ‘নৈতিক পুলিশিং’-এর অংশ বলেই প্রতীয়মান।
বিচারব্যবস্থা ও জবাবদিহি
টিআই চেয়ারম্যান বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও দক্ষতার ওপর জোর দিয়েছেন। তবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকার শর্তটি বাংলাদেশের বাস্তবতায় কতটা প্রযোজ্য, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিচার বিভাগে কিছু পরিবর্তন দেখা গেলেও, তা কাঠামোগত না হলে দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হবে না।
জনগণের কণ্ঠস্বর কোথায়?
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত থাকলেও, সাধারণ জনগণের মতামত কীভাবে সংগ্রহ ও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। সংস্কার কমিশনের সদস্যরা “নতুন বাংলাদেশের জন্য দিনরাত পরিশ্রম” করছেন-ভ্যালেরিয়াঁর এই মন্তব্যে উৎসাহ থাকলেও, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া তা কতটা গণতান্ত্রিক, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।